ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কে কত দূর এগোবে সৌদি আরব

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আব্রাহাম চুক্তি সইয়ের পর (বাঁ থেকে) বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুললতিফ আল-জাইনি, ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্কের দরজা খোলেছবি: রয়টার্স

সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের তো বটেই, বৈশ্বিক অবস্থান থেকেও বহু বছর ধরেই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। গত শতকের ত্রিশের দশকে দেশটিতে জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি আবিষ্কৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পর সৌদি আরবের মাটির নিচে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল মজুত রয়েছে। বর্তমানে দেশটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জ্বালানি তেল রপ্তানি করে। সৌদি আরবের অর্থনীতি বিশ্বের শীর্ষ ২০টি অর্থনীতির মধ্যে একটি।

তেলসম্পদ আবিষ্কৃত হওয়ার আগে সৌদির সাধারণ মানুষেরা নিজেদের খেজুরবাগানে কাজ করতেন। খেজুর রপ্তানির আয় দিয়েই প্রধানত তাঁদের জীবিকা নির্বাহ হতো। তবে তেলের খনি আবিষ্কৃত হওয়ার পর তাঁরা পায়ের ওপর পা তুলে খাচ্ছেন, কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। একদা কষ্টসহিষ্ণু পরিশ্রমী সৌদি জাতি জ্বালানি তেলকেন্দ্রিক ও তেলের বাইরে নানা ধরনের শিল্প গড়ে তুলেছে। ভবিষ্যতে তেলসম্পদ সীমিত হয়ে এলে যে প্রস্তুতি দরকার, তার জন্য কাজ শুরু করেছে সৌদি আরব। বিশেষ করে ২০১৫ সাল থেকে এ নিয়ে জোরেশোরে কাজ করা হচ্ছে।

সৌদি আরবকে আধুনিক, উদার, ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সে দেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানা কাজ করতে পারছেন। প্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারী তাঁর বাবা বা অন্য পুরুষ আত্মীয়ের অনুমতি না নিয়ে স্বাধীনভাবে বাস করার সুযোগ পাচ্ছেন। মেয়েরা মক্কায় হজ করতে চাইলে নিবন্ধন করতে পারছেন। সে জন্য তাঁদের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। চাইলে অন্য মেয়েদেরও সঙ্গে নিতে পারছেন।

সামাজিক সংস্কারের পাশাপাশি সৌদি আরব পররাষ্ট্রনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না এনেও কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নিয়ে চলেছে, যা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এসব নিয়ে সৌদি সাধারণ নাগরিকেরা কী ভাবছেন, তা জানার উপায় তেমন নেই। কারণ, রাজতান্ত্রিক দেশটিতে জনগণের বাক্‌স্বাধীনতা সীমিত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত জুলাইয়ে সৌদি আরব সফরে গেলে তাঁকে স্বাগত জানান ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান
ছবি: এএফপি

যেমন মধ্যপ্রাচ্যের ‘এক টুকরো দেশ’ ইসরায়েলের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি। ‘ইহুদি রাষ্ট্র’টিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি আরব স্বীকৃতি দেয়নি ঠিক, তবে নানাভাবে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ভবিষ্যত কোনো ‘আরব বসন্তে’র ঢেউয়ে সৌদি রাজতন্ত্র যাতে ভেসে না যায়, তার জন্যই অগ্রিম এমন সংস্কারমূলক ব্যবস্থা।

যদিও ২০১০ সালে শুরু হওয়া আরব দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, পশ্চিমা সাংবাদিকেরা যার নাম দিয়েছিলেন ‘আরব বসন্ত’, পরবর্তী সময়ে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। দেখা গেছে, জনগণের আন্দোলনে যে সরকারের পতন হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে তাঁদের উত্তরসূরিরাই ক্ষমতায় এসে বসে পড়েছেন।

২.

সৌদি আরব সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আবেগের জায়গা। ইসলামের দুটি পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনা, এই সৌদি আরবেই অবস্থিত। আর ইসরায়েল তাদের জন্য একপ্রকার অপ্রিয় স্থান। যেহেতু অভিযোগমতে, ইসরায়েল রাষ্ট্রটি আরব ভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে। সেই অনুভূতি থেকেই বিশ্বের বেশির ভাগ মুসলিম দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। যদিও তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ এ ট্যাবু ভেঙে দিয়েছে। আরও কয়েকটি দেশ এই পথে হাঁটতে চাইছি, কিন্তু অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির স্পর্শকাতরতার কথা ভেবে ঘটা করে আনুষ্ঠানিকতার দিকে যেতে পারছে না। ঠিক এই জায়গাতেই সৌদি আরব বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

আর আমরা যদি ইসরায়েলের দিক থেকে বিশ্লেষণ করি, তবে বলতে হবে যে মধ্যপ্রাচ্যে বিচ্ছিন্ন থাকা দেশটি সৌদি আরবসহ বড় আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। ইসরায়েল মনে করে, সৌদি আরবের মতো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা গেলে মুসলিম দেশগুলোর দুয়ার তার জন্য খুলে যাবে। কেবল ইরানের সঙ্গেই কোনো সম্পর্কে যেতে চায় না তারা। বরং ইরান ও তার সহযোগীদের মোকাবিলার জন্যই সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় উঠেপড়ে লেগেছে তেল আবিব। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রত্যাশা করে দেশটি।

ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই ইরানকে বড় হুমকি হিসেবে দেখছে সৌদি আরব ও তার মিত্ররা। এর পেছনে শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব আছে। আবার ইরানে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদল হয়, রাজপরিবারশাসিত আরব দেশগুলোতে তা হয় না। ইরান তাদের দেশে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উসকানি দেবে, এমন মনে করে তারা। ফলে এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বাড়তে না দেওয়া সৌদি আরব ও তার মিত্রদের অন্যতম লক্ষ্য।

আর ইরানের ইসরায়েলবিরোধী নীতি অত্যন্ত কড়া। বিশেষত তার পরমাণু কর্মসূচির কারণে তেহরানকে বড় হুমকি বলে বিবেচনা করে ইসরায়েলও। ফলে ইরান এখন সৌদি আরব ও ইসরায়েল—সবারই অভিন্ন প্রতিপক্ষে পরিণত হয়েছে। এই জায়গা থেকেই সৌদি আরব ও ইসরায়েল একে অপরের কাছাকাছি আসতে চাইছে, যতই বিরোধিতা বা আপত্তি থাকুক না কেন।

৩.

ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের একধরনের গোপন সম্পর্কের (ক্ল্যানডেস্টাইন কো–অপারেশন) সূচনা গত শতকের ষাটের দশকের শুরুতে। তখন ইয়েমেনে সোভিয়েত ও মিসর সমর্থনপুষ্ট রিপাবলিকান সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও সৈন্য পাঠিয়েছিল সৌদি আরব ও ইসরায়েল। এক সামরিক অভ্যুত্থানে তখন (১৯৬২) ইয়েমেনের রয়্যালিস্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়ে সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়েছিল।

ওয়াশিংটনভিত্তিক সরকারি নীতি সংস্থা ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক প্রতিবেদন বলছে, আশির দশকে এক উপলক্ষে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধানের সঙ্গে সৌদি গোয়েন্দা প্রধানের সাক্ষাৎ হয়েছিল। এরপর ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি দুই দেশের মধ্যে একাধিক ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’ যোগাযোগের উপলক্ষ তৈরি করে দেয়।

ইসরায়েলি প্রভাবশালী সংবাদপত্র হারেৎজের প্রতিবেদনমতে, ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের গোপন সম্পর্কের অগ্রদূত হলেন সৌদি প্রিন্স বন্দর বিন সুলতান (জন্ম ১৯৪৯ সালে)। তিনি বহুবার ইসরায়েলি শীর্ষস্থানীয় নেতা, প্রধানমন্ত্রী ও মোসাদের প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বন্দর বিন সুলতান যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত, গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট বুশ ও বুশ জুনিয়রের এতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে তাঁকে ‘বন্দর বুশ’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

গোপন সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি প্রাইভেট জেট বিমানে করে সৌদি আরবের নেওম শহরে গোপনে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উপস্থিত ছিলেন। আশ্চর্যজনক হলো, সৌদি আরব বৈঠকের খবরটি অস্বীকার করলেও ইসরায়েল করেনি। খবরটি জানাজানি হোক, এটাই চেয়েছে ইসরায়েল।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে বক্তব্য দিচ্ছেন। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে। পম্পেও সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন
ছবি: এএফপি

আরেকটি ‘গোপন’ বৈঠক হয় চলতি বছরের মার্চে। মিসরের শারম আল-শেখ শহরে ওই বৈঠকে অংশ নেন দুই দেশের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। সেখানে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর চিফ অব স্টাফের সঙ্গে দেখা করেন সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, জর্ডান ও মিসরের প্রতিনিধিরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি। ইরানের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কীভাবে জোরদার করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতেই ওই গোপন বৈঠক করা হয়।

এরই মধ্যে ইসরায়েলি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সৌদিরা বিনিয়োগ করছেন, এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সাধারণ ইসরায়েলিরা তৃতীয় দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদি আরব ভ্রমণ করছেন।

৪.

মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের দুই প্রধান মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ২০২০ সালে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। এরই মধ্যে তেল আবিব থেকে মানামা, আবুধাবি ও দুবাই সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হয়েছে, এখানে ব্যবহার করা হচ্ছে সৌদি আরবের আকাশসীমা।

ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া বাহরাইন সৌদি আরবের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। দেশটিতে শিয়ারা মাঝেমধ্যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে শামিল হয়, যাতে ইরানের মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বাহরাইন সরকার খুবই বিরক্ত। একাধিকবার সৌদি সৈন্যরা বাহরাইনে ঢুকে সে দেশের সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন। আবার সৌদি আরবে যে ক্ষুদ্র শিয়া কমিউনিটি রয়েছে, তারা বসবাস করে ইস্টার্ন প্রভিন্সে, বাহরাইনের সীমান্ত লাগোয়া এলাকাটিতেই। বলা হয়ে থাকে, সৌদি আরবের ইশারাতেই বাহরাইন ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনের পাশাপাশি তুরস্ক, মিসর, জর্ডান, মরক্কো ও সুদানের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তি চুক্তি হয়েছে, যা ইসরায়েলের দিক থেকে বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য তা দুঃখজনক। ইসরায়েলের সঙ্গে এতগুলো আরব দেশের শান্তি চুক্তি বঞ্চিত ফিলিস্তিনিদের কষ্টকে আরও দীর্ঘায়িত করবে।

তবে মধ্যপ্রাচ্যের সবই যে ইসরায়েলের প্রতি সৌদি আরবের নমনীয় অবস্থানকে সমর্থন দিচ্ছে বা এই তালে গা ভাসাচ্ছে, এমন নয়। যেমন কাতার, কুয়েত। কুয়েতের সঙ্গে সৌদি আরবের যেমন সম্পর্ক, তেমনি ইরানেরও। আবার ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ইস্যুতে ২০১৭ সালে কাতারের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব। সঙ্গে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর। শেষ পর্যন্ত কুয়েতের প্রচেষ্টায়, যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ২০২১ সালে সীমান্ত খুলে দেয় সৌদি। তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় শক্ত অবস্থানেই আছে কাতার। নতুন করে আর সম্পর্কে জড়াবে না দেশটির সঙ্গে। ১৯৯৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়েছিল কাতার। কিন্তু ২০০৯ সালে এসে বিচ্ছেদ ঘটায়।

সৌদি আরবের পথে হাঁটতে চায় না সবচেয়ে বড় আরব দেশ আলজেরিয়াও। আর ইরাকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা ‘অপরাধের’ শামিল।

৫.

তবে ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সৌদি আরবের ভেতরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এসব প্রতিক্রিয়া বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ততটা না এলেও এটুকু বোঝা যায়, স্থানীয় মানুষজন ও ধর্মীয় নেতাদের বড় অংশটি ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল।

হামাসের সঙ্গে সৌদি আরবের খারাপ সম্পর্ক অম্লমধুর হলেও রিয়াদ সব সময় মধ্যপ্রাচ্যে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে। অর্থাৎ পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। এটা না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কে যেতে পারবে না সৌদি আরব।

দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাঁর সাম্প্রতিক সফরেও বিষয়টি জোর পায়নি। তাই সৌদি বাদশাহ সালমান, ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যতই ‘ট্যাবু’ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করুন না কেন, প্রকাশ্যে ‘সফল’ হতে পারবেন না। তবে ‘গোপনে’ অনেক কিছুই করা সম্ভব, যা তাঁদের পূর্বসূরিরাও করেছেন, এখন তাঁরা করছেন এবং করে যাবেন। যদিও অনেক গোপন শেষ পর্যন্ত গোপন থাকে না।

তথ্যসূত্র: ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন, বিবিসি, ডয়চে ভেলেসহ একাধিক সংস্থার সূত্র অবলম্বনে
কাজী আলিম-উজ-জামান, প্রথম আলোর উপবার্তা সম্পাদক।
[email protected]