বিশ্বের শক্তিশালী এমআরআই স্ক্যানার যে সুবিধা আনল

আইসিউল্ট নামের স্ক্যানার
এএফপি

রোগনির্ণয়ের অত্যাধুনিক একটি পরীক্ষাপদ্ধতি ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই)। শরীরের ভেতরের কোনো অঙ্গের স্পষ্ট ছবি পেতে এ পরীক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে সেই অঙ্গের যেকোনো অস্বাভাবিক অবস্থা বা নির্দিষ্ট কোনো রোগ খুব সহজেই নির্ণয় করা যায়। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই উন্নত এমআরএই স্ক্যানার তৈরির কথা বলে আসছেন। ২০২১ সালে তাঁরা এমন একটি এমআরআই স্ক্যানার তৈরি করেন। তাঁদের দাবি, আইসিউল্ট নামের এ স্ক্যানার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এমআরআই স্ক্যানার। কিন্তু এত দিন এই স্ক্যানার মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়নি। এবার এই স্ক্যানারে প্রথমবারের মতো মানুষের মস্তিষ্কের ছবি তুলেছেন গবেষকেরা। তাঁরা দাবি করছেন, এ স্ক্যানারের সাহায্যে মস্তিষ্কের রোগ নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা যাবে।

ফ্রান্সের আণবিক শক্তি কমিশনের (সিইএ) গবেষকেরা ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো এই স্ক্যানার যন্ত্র দিয়ে একটি কুমড়ার ছবি স্ক্যান করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মানুষের ক্ষেত্রে এ স্ক্যানার ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।

প্যারিসের প্ল্যাটিউ দা স্যাকলে এলাকায় অবস্থিত এ স্ক্যানার যন্ত্র দিয়ে গত কয়েক মাসে ২০ জনের বেশি স্বেচ্ছাসেবীকে পরীক্ষা করা হয়। এ প্রকল্পে কর্মরত পদার্থবিদ আলেসান্দ্রে ভিগনাড বলেন, ‘রোগ নির্ণয়ে এমন নিখুঁত স্তরে পৌঁছানো গেছে, যা আগে সম্ভব ছিল না। এই স্ক্যানার যন্ত্রে যে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়, তার ক্ষমতা ১১ দশমিক ৭ টেসলার সমান। উদ্ভাবক নিকোলা টেসলার নামানুসারে রাখা চৌম্বকক্ষেত্র পরিমাপের একক এই টেসলা।

বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে যে এমআরআই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, তার চেয়েও ১০ গুণ বেশি ক্ষমতার নিখুঁত স্ক্যান ছবি তুলতে পারে এই যন্ত্র। হাসপাতালের এমআরগুলোর সর্বোচ্চ ক্ষমতা তিন টেসলার বেশি নয়।

আরও পড়ুন

গবেষক ভিগনাড বলেন, কম্পিউটারে আইসিউল্টে তোলা ছবির সঙ্গে তিনি সাধারণ স্ক্যানারে তোলা ছবির তুলনা করে দেখেছেন। এতে মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নালির ছবিও বিস্তারিত দেখা যায়। এখন পর্যন্ত অন্য কোনো স্ক্যানারে তা দেখা সম্ভব নয়।

পদার্থবিদ ও ফ্রান্সের গবেষণামন্ত্রী সিলভি রেটাইলিউ বলেন, যে স্তরে নিখুঁত ছবি পাওয়া গেছে, তা সহজে বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে না। বিশ্বের প্রথম শক্তিশালী এই এমআরআই স্ক্যানার ব্যবহার করে আরও ভালোভাবে মস্তিষ্কের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা যাবে।

শুধু ফ্রান্স নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াও এমন শক্তিশালী এমআরআই যন্ত্র তৈরিতে কাজ করছে। কিন্তু এসব যন্ত্রে এখনো রোগীকে স্ক্যান করা শুরু হয়নি। গবেষকেরা আশা করছেন, এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে পারকিনসন বা আলঝেইমারের মতো রোগের পাশাপাশি বিষণ্নতা বা সিজোফ্রেনিয়ার মতো রোগেরও নিরাময় করা সম্ভব হবে।