এআই কি অভিজ্ঞ কর্মীদের কাজের গতি কমিয়ে দিচ্ছে, কী বলছে গবেষণা
এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে অভিজ্ঞ সফটওয়্যার নির্মাতাদের কাজের গতি বাড়ে—জনপ্রিয় এ ধারণার বিপরীত ফল উঠে এসেছে এক নতুন গবেষণায়।
এ গবেষণায় দেখা গেছে, অভিজ্ঞ সফটওয়্যার নির্মাতারা যখন পরিচিত কোডবেসে কাজ করছিলেন, তখন সর্বাধুনিক এআই টুল ব্যবহার করে কাজ দ্রুত হয়নি; বরং বিলম্বিত হয়েছে। কারণ, এআই অনেক সময় ভুল বা অপ্রাসঙ্গিক পরামর্শ দিয়েছে, যেগুলো সংশোধন করতে বাড়তি সময় লেগেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক এআই গবেষণা সংস্থা এমইটিআর এ বছরের শুরুতে এই গবেষণা চালায়। এতে অভিজ্ঞ সফটওয়্যার নির্মাতাদের একটি দলের কাজ পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেখানে ওপেন সোর্স প্রকল্পে নিজেদের পরিচিত কোডবেসে কাজ করার সময় তা সম্পন্ন করতে সহায়তা পেতে জনপ্রিয় এআই কোডিং টুল ‘কার্সর’ ব্যবহার করেন তাঁরা।
গবেষণার আগে এই নির্মাতারা ধারণা করেছিলেন, এআই ব্যবহার করলে তাঁদের কাজের গতি বাড়বে, সময় অন্তত ২৪ শতাংশ কমবে। এমনকি এআইয়ের সহায়তা নিয়ে কাজ শেষ করার পরও তাঁদের ধারণা ছিল, সময় ২০ শতাংশ কমেছে; কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহারের ফলে কাজের সময় বরং গড়ে ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষণার আগে এই নির্মাতারা ধারণা করেছিলেন, এআই ব্যবহার করলে তাঁদের কাজের গতি বাড়বে, সময় অন্তত ২৪ শতাংশ কমবে। এমনকি এআইয়ের সহায়তা নিয়ে কাজ শেষ করার পরও তাঁদের ধারণা ছিল, সময় ২০ শতাংশ কমেছে; কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহারের ফলে কাজের সময় বরং গড়ে ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষণার প্রধান দুই লেখক জোয়েল বেকার ও নেট রাশ বলেন, ফলাফল দেখে তাঁরা বিস্মিত হয়েছেন। রাশ জানান, গবেষণার আগে তিনি ধারণা করেছিলেন, এআই অভিজ্ঞ সফটওয়্যার নির্মাতাদের কাজের গতি দ্বিগুণ বাড়াবে। তাঁর ভাষায়, ‘এটা একরকম পরিষ্কারই ছিল আমার কাছে।’
আগামী এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এআই সব এন্ট্রি-লেভেলের ‘সাদা কলার’ চাকরির (অফিস বা করপোরেট পরিবেশের প্রাথমিক স্তরের চাকরি) অর্ধেকই বিলুপ্ত করে দিতে পারে।
এআই ব্যবহারে ব্যয়বহুল (প্রতিষ্ঠান যাঁদের বেশি বেতন দেয়) দক্ষ প্রকৌশলীরা সব সময় বেশি উৎপাদনক্ষম হয়ে ওঠেন—এ ধারণা গবেষণার ওই ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অথচ এ ধারণায় ভর করেই সফটওয়্যার উন্নয়নে সহায়ক এআই পণ্য বিক্রির ব্যবসায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিপুল বিনিয়োগ করেছে।
অনেকের ধারণা, ভবিষ্যতে এআই নবীন বা এন্ট্রি-লেভেল কোডিংয়ের পদগুলো দখল করবে। মার্কিন এআই গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ‘অ্যানথ্রোপিক’–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ডারিও অ্যামোডেই সম্প্রতি অ্যাক্সিওসকে বলেন, আগামী এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এআই সব এন্ট্রি-লেভেলের ‘সাদা কলার’ চাকরির (অফিস বা করপোরেট পরিবেশের প্রাথমিক স্তরের চাকরি) অর্ধেকই বিলুপ্ত করে দিতে পারে।
এর আগে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণায় এআই ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এআই ব্যবহারে কোড লেখার গতি ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সফটওয়্যার ডেভেলপাররা ২৬ শতাংশ বেশি কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছেন।
এআই ব্যবহারে ব্যয়বহুল দক্ষ প্রকৌশলীরা (যেসব প্রকৌশলীর পেছনে প্রতিষ্ঠান বেশি খরচ করে) সব সময় বেশি উৎপাদনক্ষম হয়ে ওঠেন—এ ধারণাকে গবেষণার ওই ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অথচ এ বিশ্বাসের ওপর ভর করেই সফটওয়্যার উন্নয়নে সহায়ক এআই পণ্য বিক্রির ব্যবসায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিপুল বিনিয়োগ করেছে।
তবে এমইটিআরের নতুন গবেষণা বলছে, এই গতি বৃদ্ধি সব ধরনের সফটওয়্যার উন্নয়ন পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য নয়; বিশেষ করে যাঁরা বড় ও প্রতিষ্ঠিত ওপেন সোর্স কোডবেসের সূক্ষ্ম অবস্থা ও চাহিদা সম্পর্কে ভালো জানেন। তাঁদের ক্ষেত্রে এআই উল্টো গতি কমিয়ে দিয়েছে।
এ গবেষকেরা বলছেন, অন্যান্য গবেষণায় প্রায়ই এআইকে এমন পরীক্ষায় যাচাই করা হয়, যেগুলো বাস্তব জীবনের সফটওয়্যার প্রকল্পের মতো নয়। তাই সেসব ফলাফল সব সময় বাস্তব কাজে মিলবে না।
ভিডিও পর্যবেক্ষণে আমরা দেখেছি, এআই সাধারণত সঠিক পথে পরামর্শ দিলেও সেটি ডেভেলপারদের (গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের) ঠিক প্রয়োজন অনুযায়ী হয় না।
এদিকে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীদের কাজের গতি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ ছিল, এআই মডেল যেসব কোডের পরামর্শ দিচ্ছিল, সেগুলো যথাযথ না হওয়ায় তাঁদের সেসব খতিয়ে দেখতে ও ঠিক করতে বাড়তি সময় ব্যয় করতে হচ্ছিল।
‘ভিডিও পর্যবেক্ষণে আমরা দেখেছি, এআই সাধারণত সঠিক পথে পরামর্শ দিলেও সেটি ডেভেলপারদের (গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের) ঠিক প্রয়োজন অনুযায়ী হয় না’, বলেন জোয়েল বেকার।
তবে গবেষকেরা সতর্ক করে জানান, সব ক্ষেত্রেই এমন ধীরগতি হবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যাঁরা নবীন প্রকৌশলী বা অপরিচিত কোডবেসে কাজ করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এআই উপকারী হতে পারে।
তবু গবেষণায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ সফটওয়্যার নির্মাতা, এমনকি গবেষকেরাও এখনো ‘কার্সর’ ব্যবহার করছেন। এমইটিআরের গবেষকদের মতে, এআই কোডিংয়ের অভিজ্ঞতা সহজতর করে তোলে, যা কাজকে আরও উপভোগ্য করে দেয়; যেন একেবারে খালি পৃষ্ঠা থেকে রচনা লেখা শুরুর চেয়ে একটি খসড়া সম্পাদনা করার মতো।