বছরে বিশ্বের এক–তৃতীয়াংশ নারী সঙ্গীর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন: ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন
বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী জীবনে কোনো না কোনো সময়ে স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে শারীরিক অথবা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন—সংখ্যার হিসাবে এর পরিমাণ প্রায় ৮৪ কোটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রায় ৩১ কোটি ৬০ লাখ নারী ও মেয়েশিশু নিজের একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬৮টি দেশের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে ডব্লিউএইচও এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
এই সংখ্যা বিশ্বজুড়ে এই বয়সসীমার নারী ও মেয়েশিশুদের প্রায় ১১ শতাংশের সমান।
বুধবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা মানবজাতির ওপর হওয়া প্রাচীনতম এবং সর্বব্যাপী অন্যায়। অথচ এখন পর্যন্ত এ নিয়ে সবচেয়ে কম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
গেব্রেয়াসুস আরও বলেন, ‘কোনো সমাজই নিজেকে ন্যায্য, নিরাপদ বা সুস্থ বলতে পারে না, যখন তার অর্ধেক জনসংখ্যা ভয়ের মধ্যে বাস করে। এই সহিংসতা শেষ করা কেবল নীতিগত বিষয় নয়; এটি মর্যাদা, সমতা এবং মানবাধিকার–সংক্রান্ত বিষয়। প্রতিটি পরিসংখ্যানের পেছনে এমন একজন নারী বা মেয়ে রয়েছেন, যাঁর জীবন চিরতরে বদলে গেছে।’
নারীর প্রতি সহিংসতা মানবজাতির ওপর হওয়া প্রাচীনতম এবং সর্বব্যাপী অন্যায়, অথচ এখন পর্যন্ত এ নিয়ে সবচেয়ে কম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিকভাবে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান দিবস পালিত হবে।
জাতিসংঘের ‘নারী ও মেয়েশিশুদের প্রতি সহিংসতা নির্মূলের আন্তর্জাতিক দিবস’–কে সামনে রেখে ডব্লিউএইচও এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
২০০০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬৮টি দেশের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে ডব্লিউএইচও এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে।
স্পষ্ট এই ফলাফলের পরেও নারীর প্রতি সহিংসতা এখনো ‘গভীরভাবে অবহেলিত একটি সংকট’ বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এ সংস্থা। ডব্লিউএইচও বলেছে, এ সংকট সমাধানের চেষ্টাও ‘মারাত্মকভাবে অর্থসংকটে’ পড়েছে।
ডব্লিউএইচও সতর্ক করে আরও বলেছে, বিশেষ করে যেসব নারী ও মেয়েশিশু যুদ্ধক্ষেত্রে বা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাস করছেন, তাঁরা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা সহিংসতার বা যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ত্রাণ তহবিলের মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধমূলক কর্মসূচিতে বরাদ্দ করা হয়েছিল।
এমনকি যত্সামান্য এই অর্থায়ন এ বছর আরও কমে গেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দেশের বৈদেশিক সাহায্য এবং উন্নয়ন তহবিলে অনেকটা কাটছাঁট করেছেন।
ডব্লিউএইচও সতর্ক করে আরও বলেছে, বিশেষ করে যেসব নারী ও মেয়েশিশু যুদ্ধক্ষেত্রে বা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বাস করছেন, তাঁরা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমাগত বাড়তে থাকা সশস্ত্র সংঘাত, দীর্ঘস্থায়ী সংকট এবং পরিবেশগত অবক্ষয় ও বিপর্যয়গুলো এই ঝুঁকিপূর্ণ প্রেক্ষাপটে থাকা নারীদের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির ঝুঁকি আরও স্পষ্ট করেছে।’
‘স্পষ্ট এই ফলাফলের পরও নারীর প্রতি সহিংসতা এখনো একটি গভীরভাবে অবহেলিত সংকট বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এ সংস্থা। ডব্লিউএইচও বলেছে, এ সংকট সমাধানের চেষ্টাও মারাত্মকভাবে অর্থসংকটে পড়েছে।’
বাস্তুচ্যুতি এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।