উড়োজাহাজে কীভাবে পাওয়া যায় গরম খাবার, ইন্টারনেট, শৌচাগারব্যবস্থা কেমন

ডেল্টা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

ঘণ্টায় ৫০০ মাইল বেগে উড়ে যাওয়া উড়োজাহাজে কীভাবে ইন্টারনেট সংযোগ পান যাত্রীরা, কীভাবে অত উঁচুতে গরম খাবারদাবার আর পানীয় পরিবেশন করা হয়? কীভাবে ৪০ হাজার ফুট উঁচুতেও শৌচাগার ব্যবহার করা যায়? এমন অনেক প্রশ্ন কখনো না কখনো নিশ্চয়ই আমাদের মনে আসে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে সেসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল–সংক্রান্ত পরামর্শক সেন্ট জারমাইন বিভিন্ন এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। ডেল্টা, ইউনাইটেডসহ এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি মনে করেন, খাবার পরিবেশন থেকে শুরু করে উড়োজাহাজে যা–ই করা হোক না কেন, প্রকৌশলবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে বোঝা যায়, এতে কতটা সাধনার প্রয়োজন। জারমাইন বলেছেন, স্থলভাগের চেয়ে আকাশে উড়ে চলা উড়োজাহাজে কোনো কাজ করাটা দ্বিগুণ কষ্টকর। সবটাতেই বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।

একটি উড়োজাহাজের টয়লেট
ছবি: এএনআই

উড়োজাহাজে শৌচাগার

উড়োজাহাজে শৌচাগারের ফ্লাশে পানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে বাতাস ব্যবহার করা হয়। বিশেষ ইভ্যাকুয়েশন ব্যবস্থার সহায়তায় বাতাসের বিভিন্ন চাপ ব্যবহার করে ফ্লাশ করা হয়। প্রথম এ ধরনের ফ্লাশের নকশা করেছিলেন জেমস কেম্পার।

ফ্লাশ করার পর টয়লেটের বর্জ্যগুলো একটি ট্যাংকে গিয়ে জমা হয়। সাধারণত উড়োজাহাজের পেছনের দিকে এ ধরনের ট্যাংক থাকে। অনেক সময় সামনের দিকেও থাকে।

ফ্লাশের বোতামে চাপ দেওয়ার পর কমডের তলার দিকে একটি ভালভ খুলে যায় এবং এতে ভালভের নিচের দিকে থাকা পাইপের সঙ্গে কমোডের সংযোগ তৈরি হয়। বাতাসের চাপের কারণে পাইপ হয়ে মলমূত্র বর্জ্যের ট্যাংকে চলে যায়।

লন্ডনের কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উড়োজাহাজ প্রকৌশল–সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ নাইজেল জোনস বলেন, ‘এটা আপনাদের ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো কাজ করে। এটি শুষে (বর্জ্য) নেয়। বোতামটি (ফ্লাশের) চাপার পর ভালভ খুলে যায়। আর ভালভ খোলার পর পরই সবকিছু শুষে যায়। এরপর ভালভটি বন্ধ হয়ে যায়।’

আকাশে ওড়া অবস্থায় উড়োজাহাজের এই ভ্যাকুয়াম ব্যবস্থাই চলতে থাকে। তবে উড়োজাহাজ যখন মাটিতে থাকে তখন সেখানে বাতাসের বিভিন্ন চাপ থাকে না। তখন একটি পাম্পের মাধ্যমে টয়লেটের ফ্লাশ কাজ করে। ওই পাম্পই ট্যাংকে ভ্যাকুয়াম চাপ তৈরি করে। আবার উড়োজাহাজটি আকাশে উড়লে ট্যাংকে আবারও বাতাসের চাপ তৈরি হয়। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবেই ভ্যাকুয়াম চাপ তৈরি হয় এবং পাম্প বন্ধ হয়ে যায়।

উড়োজাহাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন এক ব্যক্তি
ছবি: রয়টার্স

নাইজেল জোনস বলেন, টয়লেটের কমোডগুলোয় টেফটনের আবরণ থাকে। সে কারণে এগুলোয় কোনো কিছু আটকে থাকে না। বাতাসের চাপে দ্রুতই সবকিছু পরিবর্তিত হয়ে যায়।

উড়োজাহাজে কয়টি করে শৌচাগার থাকবে এবং সেগুলো কোথায় স্থাপন করা হবে, তা এয়ারলাইনসগুলো ঠিক করে দিতে পারে। কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উড়োজাহাজ প্রকৌশল–সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ নাইজেল জোনস বলেন, উড়োজাহাজে একটি নির্দিষ্টসংখ্যক শৌচাগার থাকেই। তবে এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ চাইলে সে সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পারে।

বিমানবন্দরে অবতরণের পর পয়োবর্জ্যের ট্যাংকটি ফাঁকা করতে হয়। কাজটি করার জন্য বিমানবন্দরে কিছু ভ্যাকুয়াম ট্রাক থাকে। এগুলো এসে ময়লাগুলো পরিষ্কার করে ফেলে এবং বিমানবন্দরের ভূগর্ভে এগুলো প্রক্রিয়াকরণ করে।

৫০ বছর ধরে এভাবেই উড়োজাহাজে শৌচাগার ব্যবস্থাপনা চলছে। তাহলে কি ভবিষ্যতেও এভাবেই চলবে? একটি জাপানি কোম্পানি অবশ্যই এমন নিয়ম ভাঙতে চাইছে। তারা ইতিমধ্যে জেএএল, আল নিপ্পন এয়ারওয়েজ ও ওমান এয়ারসহ আটটি উড়োজাহাজ সংস্থার জন্য পানি ব্যবহারের সুবিধাসমৃদ্ধ টয়লেট তৈরি করছে। তারা প্রথমবারের মতো বোয়িং ৭৮৭-এর জন্য হাতের স্পর্শ ছাড়াই ফ্লাশ ও পানির ট্যাপ ব্যবহারের মতো স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে।

‘ব্লু আইস’ মিথ

‘ব্লু আইস’ মানে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের হিমবাহ নয়। উড়োজাহাজের ক্ষেত্রেও ব্লু আইস কথাটির প্রচলন আছে। পয়োনিষ্কাশন পাইপে ছিদ্র হওয়ার কারণে যদি উড়োজাহাজ থেকে মলমূত্র ঠান্ডায় জমে যাওয়া অবস্থায় নিচে ছিটকে পড়ে, তবে তাকে ব্লু আইস বলা হয়।
উড়োজাহাজগুলো কখনোই ইচ্ছা করে বায়ুমণ্ডলে পয়োবর্জ্য ফেলে না। বিশেষজ্ঞ জোনস বলেন, পুরোনো দিনগুলোতেও এমনটা কখনো হয়নি। তবে বর্জ্য নিষ্কাশনের পাইপে ছিদ্র তৈরি হলে সেখান থেকে মলমূত্র বাইরে বের হয়ে আসতে পারে। এখন মাঝ আকাশের তাপমাত্রা যদি শূন্য ডিগ্রি অর্থাৎ হিমাঙ্কের নিচে থাকে, তখন বাইরে ছিটকে পড়া মলমূত্র ঠান্ডায় জমে যায়। আর এটাকেই বলে ব্লু আইস।

১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটত। ৮০-এর দশকে উড়োজাহাজের শৌচাগারব্যবস্থায় কোনো ধরনের ছিদ্র থাকলে উড়োজাহাজ ওড়ায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আইন পাস হয়।

তবে ২০২১ সালেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তখন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরের কাছে এক বাসিন্দার গায়ের ওপর উড়োজাহাজ থেকে মলমূত্র ছিটকে পড়ে। তবে এ পরিস্থিতি আরও বাজে ছিল। মলমূত্রগুলো জমাট বাঁধা ছিল না। কারণ, ওই উড়োজাহাজ তখন স্থলভাগের খুব কাছাকাছি অবস্থান করায় সেখানে হিমাঙ্কের নিচের তাপমাত্রা ছিল না। তবে এটি বিরল ঘটনা।

উড়োজাহাজের শৌচাগারগুলো কখনো কখনো আটকে যায়। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে প্রকৌশলী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা আছে জোনসের। সে অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, ‘ছোট একটি পাইপ। আর এর মধ্য দিয়ে মানুষ ন্যাপি ফেলে দেয়। আমি চামচ ও সফট ড্রিংকের ক্যান ফেলতে দেখেছি। কৌতূহল থেকে তারা কাজটি করে। কারণ, তারা দেখতে চায় এসব জিনিস নিচে নামবে কি নামবে না।’

জোনস জানান, এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে যে খুব বড় ক্ষতি হয়ে যায়, তা নয়। কিন্তু পাইপ সারাইয়ের কাজ করতে সময় লেগে যায় ও ফ্লাইট বিলম্বিত হয়।

উড়োজাহাজের ভেতরের প্রতীকী ছবি
ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত

উড়োজাহাজে গরম খাবারদাবার

উড়োজাহাজে খাবার পরিবেশন করাটা একটি জটিলপ্রক্রিয়া। এতে কঠোর পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়।

বিমানবন্দরভিত্তিক ক্যাটারিং কোম্পানিগুলো এসব খাবার প্রস্তুত করে। এরপর তা উড়োজাহাজে তোলা হয়। এতটুকু পর্যন্ত খুব সাধারণ প্রক্রিয়া। কিন্তু আকাশে উড়োজাহাজ ওড়ার সময় এগুলো গরম করার প্রক্রিয়া ভাবলেই বোঝা যায় বিষয়টি জটিল। কারণ একই সময়ে অনেক মানুষের জন্য খাবার গরম করতে হয়। খাবার গরম করার জন্য ওভেন ব্যবহার করা হয়।

জোনস বলেন, বড় উড়োজাহাজগুলোয় ১০ থেকে ১২টি ওভেন থাকে। উড়োজাহাজ মাটিতে অবস্থানকালে রক্ষণাবেক্ষণকারী ক্রুরা পরীক্ষা করে দেখেন এগুলো ঠিক আছে কি না। উড়োজাহাজ ওড়ার সময় ওভেনগুলো পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়।

জোনস বলেন, ‘উড্ডয়নের সময় ইঞ্জিন থেকে যতটুকু বিদ্যুৎশক্তি পাওয়া যায় তার পুরোটুকুই উড়োজাহাজের জন্য প্রয়োজন হয়। ওভেনগুলো বায়ুচালিত না হলে এগুলোকে তখন বন্ধ রাখতে হয় যেন বিদ্যুৎব্যবস্থায় কোনো চাপ না পড়ে। তবে এটি যখন উড়তে থাকে, তখন আর সমস্যা হয় না।’

তবে চিলার ও ফ্রিজার ভিন্ন সার্কিটে চালু থাকায় এগুলো কখনো বন্ধ করতে হয় না।

চা কিংবা কফি পান নিয়ে সমস্যা?

এমনিতে উড়োজাহাজে ঠান্ডা পানির উৎস হিসেবে একটি ট্যাংক থাকে। শৌচাগার থেকে শুরু করে রান্নাঘর পর্যন্ত পুরো উড়োজাহাজে এই ট্যাংক থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। যাত্রীদের সাধারণত চা-কফি ও বরফজাতীয় জিনিস পরিহারের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে জোনস মনে করেন চা-কফি পরিহারের কোনো প্রয়োজন নেই। যেকোনো গরম পানি এমনভাবে গরম করা হয় যেন বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া মরে যায়। ট্যাংকে পানি ঢালার আগে তা শোধন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বোয়িং ৭৮৭–তে রাখা পানিকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি দিয়ে শোধন করা হয়।

ইন্টারনেট ব্যবহার

আকাশে ঘণ্টায় ৫০০ মাইল গতিতে ছুটে চলা উড়োজাহাজে ইন্টারনেট সংযোগ ধরে রাখাটা কি কঠিন কাজ?

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ভিয়াস্যাটের বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চলাচল–সংক্রান্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ডন বুচম্যান বলেন, ‘এটি অত্যন্ত সহজ প্রযুক্তি। উড়োজাহাজের ওপরে একটি অ্যানটেনা লাগানো থাকবে এবং তা জিওস্টেশনারি আর্ক নামে পরিচিত উপগ্রহের দিকে তাক করা থাকবে।’

ভিয়াস্যাট কোম্পানিটি প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার ফ্লাইটে সেকেন্ডে ১০০ এমবি গতিতে ওয়াইফাই সুবিধা দিচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী বুচম্যানের জন্য এই প্রযুক্তি যতটা সহজ, তা আমাদের অন্য সবার কাছে ততটা সহজ নয়।

ভিয়াস্যাটের সহায়তায় যেসব উড়োজাহাজে ওয়াইফাই চালানো হয়, সেগুলো পৃথিবী থেকে ২২ হাজার মাইল ওপরে বিষুবরেখায় অবস্থিত স্যাটেলাইট থেকে এই সুবিধা পেয়ে থাকে। যে জায়গায় স্যাটেলাইটগুলো থাকে, তাকে জিওস্টেশনারি আর্ক কিংবা কক্ষপথ নামে ডাকা হয়। সেখানে স্যাটেলাইট স্থাপন করতে ৩০ দিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

ভিয়াস্যাটের বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চলাচল–সংক্রান্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ডন বুচম্যান বলেন, একবার যদি স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করা হয়ে যায়, তখন এটা সাধারণ বিষয় হয়ে যায়। ওই উচ্চতায় স্থাপিত এক একটি স্যাটেলাইট দিয়ে পৃথিবীর তিন ভাগের প্রায় এক ভাগ সামলানো যায়। এর মানে পুরো বিশ্বে উড়োজাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারের জন্য তিনটি স্যাটেলাইটকে সক্রিয় রাখতে হবে। আর ভিয়াস্যাটের এমন স্যাটেলাইটের সংখ্যা ১৮।

একেকটি স্যাটেলাইটের আওতায় বিশাল এলাকা থাকায় উড়োজাহাজ চলার সময় ইন্টারনেট সংযোগ বারবার বিচ্ছিন্ন হয় না।

উদাহরণ দিতে গিয়ে বুচম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তঃমহাদেশীয় ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো কোনো উড়োজাহাজকে উত্তর আমেরিকার কাছাকাছি স্থাপিত পাঁচটি ভিয়াস্যাট স্যাটেলাইটের সব কটি ব্যবহার করতে হয়। আবার কখনো কখনো একটি ব্যবহার করলেই হয়।

একটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে অ্যানটেনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আরেকটি স্যাটেলাইটে যুক্ত হওয়ার সময়টা যাত্রীরা টের পান না বললেই চলে। তাঁরা নির্বিঘ্নে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। বুচম্যানের মতে, যদি বিঘ্ন ঘটেও তা সর্বোচ্চ কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হতে পারে।

কারিগরিভাবে উড়োজাহাজের ভেতরে ইন্টারনেটের গতি সেকেন্ডে ১০০ এমবির বেশি হতে পারে। তবে যাত্রীরা সাধারণত সেকেন্ডে ২০ থেকে ৪০ এমবি গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। আর তা যাত্রীদের আলাদা নেটফ্লিক্স ব্যবহার করার জন্য যথেষ্ট।

বাতাস শোধনের ব্যবস্থা

এয়ারলাইনসগুলো তাদের বিজ্ঞাপনী প্রচারের ক্ষেত্রে সাধারণত তাদের উড়োজাহাজের আসনগুলো কতটা অভিনব, ভেতরে যাত্রীদের জন্য বিনোদনের সুযোগ-সুবিধা কেমন—এগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

তবে এখন এয়ারলাইনসগুলো এইচইপিএ (হাই ইফিসিয়েন্সি পার্টিকুলেট এয়ার) ফিল্টার নিয়েও কথা বলছে। এ ধরনের বাতাস শোধনের ব্যবস্থা উড়োজাহাজ এবং পরিচালনা কক্ষ—দুই জায়গাতেই ব্যবহার করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরিবেশগত সুরক্ষাবিষয়ক সংস্থার তথ্য বলছে, এই ফিল্টার ব্যবহার করে কমপক্ষে ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ ধুলাবালু, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং ০ দশমিক ৩ মাইক্রন আকারের যেকোনো বায়ুবাহিত কণা শোধন করা যায়।
অনেকের ধারণা, উড়োজাহাজের কেবিনে একই বাতাস ঘুরপাক খায়। কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উড়োজাহাজ প্রকৌশল–সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ নাইজেল জোনস বলেন, আধুনিক উড়োজাহাজগুলোয় ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বায়ু সঞ্চালন করা হয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, পুরোনো দিনগুলোয় উড়োজাহাজগুলো ইঞ্জিন থেকে বাতাস পেত। এ কারণে ইঞ্জিনের ওই বাতাসকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্রের মাধ্যমে ঠান্ডা করে নিতে হতো।

তবে বোয়িং ৭৮৭–এর মতো নতুন উড়োজাহাজগুলোয় ইঞ্জিন থেকে বাতাস সঞ্চালন করা হয় না। তারা এ ক্ষেত্রে পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা (ইসিএস) ব্যবহার করে। এসব উড়োজাহাজে বহিরাগত উৎস থেকে বাতাস গ্রহণ করে তা একটি কমপ্রেসরের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। এরপর ইসিএসের মাধ্যমে উড়োজাহাজের কেবিনে বাতাস সঞ্চালন করা হয় এবং তা এইচইপিএ ফিল্টারের মাধ্যমে শোধন করা হয়।
উড়োজাহাজের প্রতিটি কেবিন আলাদা আলাদা ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়।

উড়োজাহাজে বাতাস প্রবাহের ক্ষেত্রে এখন আর শুধু স্বাস্থ্য–সংক্রান্ত বিষয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যাত্রীরা বিশেষ করে দীর্ঘ পথের যাত্রীরা কেমন বোধ করছেন, তা–ও খেয়াল রাখা হয়।

এ ব্যাপারে জোনস বলেন, ৭৮৭ উড়োজাহাজে প্রতি ৩ মিনিটে বাতাস পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ প্রতি ৩ মিনিট পর সম্পূর্ণ নতুন বাতাস পাওয়া যায়। আর এ৩৫০ উড়োজাহাজে প্রতি ২ থেকে ৩ মিনিট পরপর বাতাস পাল্টানো হয়।

সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন ফাহমিদা আক্তার