মালিতে সহিংসতা: তিন মাসে নিহত পাঁচ শতাধিক

মালির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ আছে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

আফ্রিকার দেশ মালিতে সহিংসতা বাড়ছে। শুধু জঙ্গিগোষ্ঠীই নয়, দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর হাতেও অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশটিতে সশস্ত্র বাহিনী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলায় পাঁচ শতাধিক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মালি মিশনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনটি গত সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

মালির নিরাপত্তা পরিস্থিতি এমনিতেই নাজুক। এই পরিস্থিতি যে আরও অবনতিশীল, তার প্রমাণ জাতিসংঘের প্রতিবেদন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে মালিতে সশস্ত্র বাহিনী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে হত্যাকাণ্ড ৩২৪ শতাংশ বেড়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ আল-কায়েদা-আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীর সহিংসতা ঠেকাতে মালির সামরিক জান্তা যে ব্যর্থ হয়েছে, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে।

মালি ছিল ফ্রান্সের একটি উপনিবেশ। মালি সরকারের অনুরোধে বেশ কয়েক বছর ধরে দেশটিতে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিলেন ফরাসি সেনারা। মালি সম্প্রতি ফ্রান্সের সঙ্গে সামরিক সহায়তামূলক এই সম্পর্কের ইতি টানে। এ ঘটনার পর জাতিসংঘের মালি মিশনের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হলো।

জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার জন্য রুশ কোম্পানি ওয়াগনার গ্রুপের ভাড়াটে সেনারা মালিতে কাজ করছেন। এই ভাড়াটে সেনাদের মালিতে আনায় ফ্রান্স ক্ষুব্ধ হয়।

২০২০ সালের আগস্টে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মালির ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্যের জন্য মালির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পায়নি রয়টার্স। অন্যদিকে, ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়নি রয়টার্স।

জাতিসংঘের মালি মিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ দমনে মালির সশস্ত্র বাহিনী অভিযান জোরদার করেছে। মালির সশস্ত্র বাহিনীর কিছু অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

মালিতে ওয়াগনার গ্রুপের তৎপরতার ঘোরবিরোধী পশ্চিমা দেশগুলো। তারা সতর্ক করে বলেছে, এতে মালি ও তার আশপাশের দেশে সহিংসতা আরও বাড়বে। এমনিতেই এসব দেশের মানুষ ক্রমাগত বাড়তে থাকা খরা, পুষ্টিহীনতা, দারিদ্র্যে ভুগছে।
গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মালির সামরিক বাহিনী কর্তৃক ৩২০টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ মিশন।

গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন ঘটনা ঘটেছিল ৩১টি।

বেশির ভাগ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে মালির মৌরা শহরে। প্রত্যক্ষদর্শী ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, মৌরায় জঙ্গি সন্দেহে অনেক বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। মালির সেনাবাহিনী ও তাদের সঙ্গে থাকা বিদেশি সেনারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

জাতিসংঘের মালি মিশন বলছে, সামরিক অভিযানকালে হত্যাকাণ্ড ছাড়াও দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ, লুট, গ্রেপ্তার, নির্বিচার আটকের অভিযোগ রয়েছে।

২০১২ সালে জঙ্গিরা মালির উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দেশটিতে সহিংসতা চলছে। পরে ফ্রান্সের সহায়তায় জঙ্গিদের দমন করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে জঙ্গিরা আবার সংঘবদ্ধ হয়। তারা দেশটির মধ্যাঞ্চলে দফায় দফায় হামলা করে। তারা পাশের দেশ নাইজার ও বুরকিনা ফাসোতেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।