সরকারি পর্যায় থেকে ব্যাপক হারে চুরি, ইথিওপিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণসহায়তা বন্ধ

গৃহযুদ্ধ, খরা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ইথিওপিয়ায় প্রায় দুই কোটি মানুষ দুবেলা খেতে পারছে না
ছবি: এএফপি

আফ্রিকার সংঘাতকবলিত দেশ ইথিওপিয়ায় এত দিন ত্রাণসহায়তা দিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইথিওপিয়ার সরকারি পর্যায়ে ব্যাপক হারে ত্রাণের পণ্য চুরির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর দেশটিতে ত্রাণসহায়তা পাঠানো বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (ইউএসএআইডি)।

গতকাল বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইউএসএআইডি। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ত্রাণসহায়তা বন্ধ হওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দাতা সংস্থার কাছে পাঠানো ফাঁস হওয়া সরকারি নথি ওয়াশিংটন পোস্ট হাতে পেয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ত্রাণের পণ্য চুরির ঘটনায় দেশটির কেন্দ্রীয় ও একই সঙ্গে আঞ্চলিক সরকারও জড়িত।

ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা ত্রাণের এসব খাদ্যপণ্য যাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদের না দিয়ে সামরিক বাহিনী ও সাবেক যোদ্ধাদের দিচ্ছিল। এ ছাড়া ত্রাণের পণ্য বাজারে এমন কিছু কারখানার কাছে বিক্রি করে আসছিল, যে কারখানাগুলো ময়দা রপ্তানি করে।

নথি ফাঁসের পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শেষে ইউএসএআইডি ত্রাণসহায়তা বন্ধের এ সিদ্ধান্ত নেয়।

ইউএসএআইডি বলেছে, ‘দেশব্যাপী একটি পর্যালোচনার পর আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, ইথিওপিয়ার সরকারের সহযোগিতায় ব্যাপক হারে ও সমন্বিতভাবে ত্রাণের পণ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরির এ বিষয় সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা দেশটিতে ত্রাণসহায়তা পাঠাতে পারি না।’

ইউএসএআইডি এ সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর ইথিওপিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে উভয় সরকার (কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক) এ বিষয়ে একটি তদন্ত শুরু করেছে।’ তবে বিবৃতি ছাড়া সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

দাতাদের একটি সংগঠন হিউম্যানিটারিয়ান রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট ডোনার গ্রুপ। সংস্থাটিকে ইথিওপিয়াতে ত্রাণের পণ্য চুরির বিষয়টি জানিয়েছে ইউএসএআইডি। বিষয়টি জানার পরই সংস্থাটি বলেছে, নিবিড় পর্যালোচনা এই ইঙ্গিত দিচ্ছে, দাতাদের অর্থে কেনা ত্রাণসহায়তা যাদের সবচেয়ে প্রয়োজন তাদের না দিয়ে অন্যদের দেওয়া হয়েছে। এটা একটা অপরাধ, যা সমন্বিতভাবে হয়েছে।

দাতাদের এ সংস্থা আরও বলেছে, ত্রাণের পণ্য চুরির এ ঘটনার নেপথ্যে ছিল দেশটির কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক সরকার এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ত্রাণের এসব পণ্য পাঠানো হয় দেশটির সংঘাতকবিল এলাকার মানুষের জন্য। কিন্তু মানবিক এ সহায়তার সুবিধা নিচ্ছে সামরিক বাহিনী।

আফ্রিকার দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ইথিওপিয়ায় চলছে গৃহযুদ্ধ, খরা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এসব কারণে ১২ কোটি জনসংখ্যার দেশটির প্রায় ২ কোটি মানুষ দুবেলা খেতেও পারছে না। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর খাদ্যসংকটের মধ্যেই চুরি হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ত্রাণসহায়তা পাঠানো বন্ধ করে দিল।