দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো কোনো এলাকা ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন, মোকাবিলায় ‘রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়’ ঘোষণা

বিদ্যুৎ–সংকটে মোমবাতি হাতে নিয়ে রান্নার কাজ করছেন এক নারী। দক্ষিণ আফ্রিকার সোয়েতো শহরে
ছবি: রয়টার্স

বিদ্যুৎ নিয়ে চরম সংকটে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কয়েক মাস ধরে দেশটিতে বিদ্যুৎ–সংকট যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কোনো এলাকা প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎহীন থাকছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা গত বৃহস্পতিবার এ পরিস্থিতিকে ‘রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করলেও কি এত সহজে বিদ্যুৎ বিপর্যয় থেকে মুক্তি পাবে দক্ষিণ আফ্রিকাবাসী?

দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০২ সালে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়েছিল। ওই আইনে বলা রয়েছে, দেশে প্রচলিত আইনের আওতায় থেকে কোনো দুর্যোগ কিংবা বিপর্যয় মোকাবিলা করা সম্ভব না হলে প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ঘোষণা করতে পারেন। এ আইনের আওতায় বিদ্যুৎ–সংকটের টেকসই মোকাবিলায় ‘রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়’ ঘোষণা দেন রামাফোসা। বৃহস্পতিবার রামাফোসা দেশটির পার্লামেন্টে তাঁর সপ্তম ‘স্টেট অব দ্য নেশন’ ভাষণে এ ঘোষণা দেন।

‘রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ–সংকট মোকাবিলায় দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার সহজেই সম্পদ ব্যবহার করতে পারবে। জরুরি পরিস্থিতিতে লোকবল নিয়োগ দিতে পারবে। এ ছাড়া যেকোনো সংকটকালীন পরিস্থিতিতে পণ্য ও সেবা সংগ্রহ ও সরবরাহে প্রচলিত আইন এড়িয়েও উদ্যোগ নিতে পারবে।

এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ‘রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়’ ঘোষণা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। এর আগে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে একবার এবং গত এপ্রিলে দেশটির পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা ছড়িয়ে পড়লে আরেকবার রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ঘোষণা করা হয়েছিল।

এসব কার্যক্রম একজন মন্ত্রীর মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তিনি এমন একটি আন্তসরকারি কমিটির নেতৃত্ব দেবেন, যেটায় জাতীয়, প্রাদেশিক ও পৌর পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরাও যুক্ত থাকবেন। এ ছাড়া যুক্ত থাকবেন জাতীয় দুর্যোগ প্রশমনসংক্রান্ত বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরাও।

এ ঘোষণার আওতায় রামাফোসা দেশটির খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও খুচরা সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থায় জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে জেনারেটর ও সৌর প্যানেল পেতে উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ছাড়া হাসপাতাল ও পানি শোধনাগারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লোডশেডিং থেকে সুরক্ষা দিতে চান তিনি। যদিও চরম সংকটময় পরিস্থিতিতে এসব জরুরি স্থাপনায় বিদ্যুৎ কোথা থেকে সরবরাহ করা হবে, সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।

আরও পড়ুন

যদিও বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ঘোষণা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ভয়াবহ বিদ্যুৎ–ঘাটতির টেকসই সমাধান এনে দেবে না। তবে এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জ্বালানি ও শক্তি খাতে ক্রয় প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা দূর হতে পারে। এ খাতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টেকহোল্ডারদের কাজের মধ্যে সমন্বয় ত্বরান্বিত করা যাবে।

রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় চলমান থাকার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা তাঁর সরকারে একজন নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করবেন। সেই মন্ত্রীর কাজ হবে বিদ্যুৎ–সংকট মোকাবিলায় টেকসই ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এতে সংকট মোকাবিলায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আরও প্রলম্বিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সরকারের এ উদ্যোগ দেশটির বিভিন্ন সরকারি ভবন, বিশেষত হাসপাতাল-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-পৌর ভবনে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ সরকার নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হতে পারে। এ ছাড়া এসব ভবনে সোলার প্যানেল স্থাপনের কাজ দ্রুত ও সহজে করতে চাইছে দেশটির সরকার। এ জন্য তহবিল সংগ্রহপ্রক্রিয়া তদারকি করা হচ্ছে। প্রকল্পের সময়সীমাও কমিয়ে আনা হয়েছে।

এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ‘রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়’ ঘোষণা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। এর আগে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে একবার এবং গত এপ্রিলে দেশটির পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা ছড়িয়ে পড়লে আরেকবার রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে দুটিই প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে ছিল। এবার বিদ্যুৎ–সংকটের মতো মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের কারণে তা ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সিরিল রামাফোসা বলেছেন, পরবর্তী ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় গ্রিডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। এমনটা হলে তবেই বলা যেতে পারে রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ঘোষণার উদ্যোগ কার্যকর হয়েছে। সফলভাবে চলমান বিপর্যয় সামাল দিতে পেরেছে দেশটির সরকার।

তবে বিরোধীদের মত অনেকটা ভিন্ন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান বিরোধী জোট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় ঘোষণা করে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে তারা। কেননা, এর আগে করোনা মহামারির সময় জরুরি পরিস্থিতিতে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় নিয়ম ভঙ্গ করেছিল রামাফোসা সরকার।

সমালোচকদের মতে, সরকারের এ উদ্যোগ দুর্নীতির বিস্তার ঘটাতে পারে। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে টেন্ডার প্রক্রিয়াকে আরও অনিরাপদ করতে পারে।

এদিকে রামাফোসা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় বিপর্যয় চলমান থাকার সময় তিনি তাঁর সরকারে একজন নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করবেন। সেই মন্ত্রীর কাজ হবে বিদ্যুৎ–সংকট মোকাবিলায় টেকসই ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এতে সংকট মোকাবিলায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আরও প্রলম্বিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।