কেনিয়ায় হ্রদ বাঁচাতে বিশেষ উদ্যোগ

ওলবোলোসাত হ্রদের প্রায় ৯০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে
ছবি: ডয়চে ভেলে

কেনিয়ায় ওলবোলোসাত হ্রদের দিকে নজর দিলেই দেশটিতে খরার প্রকৃত মাত্রা বোঝা যায়। হ্রদটির প্রায় ৯০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে, যেমনটা আগে কখনো ঘটেনি। পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিচ্ছেন।

জলবায়ুবিজ্ঞানী ক্রিস নগএটিচ জানান, বেশির ভাগ জলবায়ুর মডেল অনুযায়ী খরার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা আরও ঘন ঘন এবং আরও মারাত্মক আকারে দেখা যাবে। মূলত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমনটা ঘটছে।

স্থানীয় মানুষের জন্যও খরা এক বড় সমস্যা। অনেক চাষি নিজেদের রুজি-রুটি হারানোর আশঙ্কা করছেন। লাগাতার তাপপ্রবাহের কারণে গোটা দেশে চাষের খেত ঝলসে গেছে। চাষি হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে পল মবাতিয়া বলেন, ‘অবস্থা সত্যি খুবই খারাপ। বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের এখানে বৃষ্টি হয়নি। খেতে যেমনটা দেখলেন, অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের গাছপালার বেহাল অবস্থা। আমরা সত্যি বৃষ্টির অপেক্ষায় আছি।’

বছরের পর বছর ধরে ওলবোলোসাত হ্রদের এমন সমস্যার জন্য স্থানীয় হস্তক্ষেপও দায়ী। স্থানীয় সংরক্ষণ গ্রুপগুলোর সূত্র অনুযায়ী, বন নিধন ও নির্মাণ কার্যকলাপের জেরে হ্রদের পানিতে অনেক মাটি ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া মানুষ প্রায়ই ওই এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি তুলে নেন।
একটি সংরক্ষণ গ্রুপের প্রধান ওয়াচিরা নজারি বলেন, ‘আমার পেছনের পাহাড় থেকে হ্রদের পানির কিছু অংশ আসে। পাহাড়ের মধ্যে অনেক পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি রয়েছে। সেখান থেকে পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ বা প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয় না।’

কেমন করে বাঁচবে হ্রদ

আরও টেকসই পদ্ধতিতে পানির ব্যবহার চাষিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটাই ‘নাইরোবি ওয়াটার ফান্ড’ বা নাইরোবি পানিবিষয়ক তহবিলের অন্যতম লক্ষ্য। বৃষ্টির মৌসুমে জলাশয় থেকে পানি সংগ্রহ করে খেতে সেচের ব্যবস্থা করা যায়। সংগঠনটির প্রতিনিধি জর্জ নজুগি বলেন, ‘ছাদ বা বাড়ির অন্যান্য অংশ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি যাতে জলাশয়ে জমা করা হয়, আমরা তা নিশ্চিত করি। সেটা অন্যতম প্রযুক্তি। এ ছাড়া আমরা চাষিদের ঢালু জমিতে ধাপে ধাপে চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে শেখাই। নেপিয়ার ঘাস দিয়ে সেসব ধাপ স্থিতিশীল করা হয়। তখন পানি আর মাটি চুইয়ে নদীতে বয়ে যায় না।’

পানিবিষয়ক তহবিলের আওতায় প্রায় ১৬ হাজার চাষি রয়েছেন। তাঁরা তিন মাসের জন্য প্রায় দুই হাজার একর এলাকায় ফুলের চাষ করতে যথেষ্ট সেচের পানি জমা করছেন। ডেভিড কামাউ এই প্রকল্পের ফলে উপকার পাচ্ছেন। নতুন এই প্রক্রিয়ার বদৌলতে তিনি এমনকি খরার সময়ও চাষের জন্য যথেষ্ট পানি পাচ্ছেন। চাষি কামাউ বলেন, ‘নাইরোবি পানি প্রকল্প আমাকে একটি ওয়াটার প্যান দিয়েছে। আমি মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজে লাগিয়ে পানি পাম্প করে একটি স্প্রিংকলার ব্যবহার করতে পারি।’
মানুষের কার্যকলাপে পরিবর্তন না এলে হ্রদের জন্য হুমকি দূর হবে না। তবে পানির আরও টেকসই ব্যবহার সেটিকে হয়তো পুরোপুরি শুকিয়ে যেতে দেবে না।