বোলা তিনুবু: কে এই নাইজেরিয়ার রাজনৈতিক ‘গডফাদার’

নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী বোলা তিনুবু
ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ায় তাঁকে বলা হয়, রাজনৈতিক ‘গডফাদার’। রাজনৈতিক কৌশলগত দক্ষতা ও প্রভাবপ্রতিপত্তির জন্য তিনি এই নামে খ্যাত। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হতে চান, এই বিশেষ উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা তিনি কখনো চেপে রাখেননি।

আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশটির ৭০ বছর বয়সী রাজনীতিক বোলা তিনুবুর আজীবনের লক্ষ্য অবশেষে পূরণ হচ্ছে। নাইজেরিয়ায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন। আগামী মে মাসে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন।

নির্বাচনে ক্ষমতাসীন অল প্রগ্রেসিভস কংগ্রেসের (এপিসি) প্রার্থী ছিলেন তিনুবু। তাঁর দুই প্রধান প্রতিপক্ষ এই নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ করেছে। তবে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও এপিসি এই অভিযোগ নাকচ করেছে।

তিনুবুর স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আছে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। তা সত্ত্বেও তিনিই এখন নাইজেরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদু বুহারির স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন।

দেশটির লাগোস রাজ্যের দুবারের গভর্নর তিনুবু। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে কাজ করেছেন। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তাঁর স্লোগান ছিল, ‘এবার আমার পালা’। নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রচেষ্টা সাফল্য পেল।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার লক্ষ্যে তিনুবু তাঁর লাগোসভিত্তিক প্রভাবপ্রতিপত্তিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে, দেশজুড়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়তে বছরের পর বছর সময় ব্যয় করেছেন।

তবে ভোটে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে। লাগোসে জয়ী হয়েছেন তিনুবুর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির প্রার্থী পিটার ওবি। এ প্রসঙ্গে তিনুবু বলেন, কোথাও জয় আসবে, কোথাও হার। তিনি তাঁর সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

নাইজেরিয়ার লাগোসের একটি মুসলিম পরিবারে তিনুবুর জন্ম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছেন। অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে ডিগ্রি নেন। তিনি একাধিক মার্কিন কোম্পানিতে কাজ করেছেন। ১৯৮৩ সালে তিনি দেশে ফেরেন।

১৯৯২ সালে তিনুবুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়। তিনি শুরুতে একজন সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। নাইজেরিয়ায় গণতান্ত্রিক শাসনের প্রত্যাবর্তনের জন্য তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম করেন। এ জন্য তাঁকে ১৯৯৪ সালে নির্বাসনে যেতে হয়। ১৯৯৮ সালে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।

তিনুবু লাগোস পশ্চিম আসন থেকে সিনেটর নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তিনি লাগোস রাজ্যের গভর্নর হন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন।

তিনুবুর ঘনিষ্ঠ মিত্ররা তাঁকে একজন বিচক্ষণ রাজনৈতিক কৌশলবিদ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি গণতন্ত্রপন্থী অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। অ্যালায়েন্স পরে অ্যাকশন কংগ্রেস অব নাইজেরিয়ায় রূপান্তরিত হয়। এটি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল এপিসি গঠনে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন

এপিসির নানা উপদলকে একত্র করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনুবু। তিনি এপিসির প্রার্থী বুহারিকে ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে অবদান রাখেন। এপিসির বুহারির জয়ের মধ্য দিয়ে নাইজেরিয়ায় পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) ১৬ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। ২০১৯ সালে বুহারির পুনর্নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রেও তিনুবুর রাজনৈতিক প্রভাব ভূমিকা রাখে।

লাগোসের গভর্নর থাকাকালে তিনুবু তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা পোক্ত করতে নানা তৎপরতা চালান। গভর্নরের পদ ছাড়ার পরও লাগোসে তাঁর প্রভাব লক্ষ করা যায়। উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকেই মূল ভূমিকায় দেখা যায়।

তিনুবুর প্রভাবপ্রতিপত্তির কারণে কিছু আগ্রহী ব্যক্তি এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে পারেননি। ফলে তাঁরা তিনুবুর ওপর ক্ষুব্ধ।

আরও পড়ুন

তিনুবু রাজনৈতিক আচার-আচরণে স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক বলে সমালোচনা আছে। এ প্রসঙ্গে লাগোস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড্যাপো থমাস বলেন, দলের ওপর তিনুবু কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনিসহ তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্ররা কঠোরভাবে দলকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের একটি আগ্রাসী মনোভাব রয়েছে।

তিনুবুর রাজনীতি নিয়ে যেমন বিতর্ক আছে, তেমনি বিতর্ক আছে তাঁর আর্থিক বিষয় নিয়েও। তাঁকে নাইজেরিয়ার ধনী রাজনীতিবিদদের একজন বলে মনে করা হয়।

লাগোসের গভর্নরের পদ ছাড়ার পর তিনুবুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ওঠে। এক ডজনের বেশি বিদেশি ব্যাংকে তাঁর অ্যাকাউন্ট আছে বলেও অভিযোগ আনা হয়। তবে আদালতে তিনি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত হননি। তাঁর বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি।

তিনুবুর সম্পদের উৎস অজানা। তবে গণমাধ্যম, উড়োজাহাজ পরিচালনা, শুল্ক পরামর্শ, হোটেল, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে তাঁর ব্যবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে বলে কথিত আছে। একজন সমালোচক তিনুবুকে একজন ‘লোভী রাজনীতিবিদ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

আরও পড়ুন