আলোচনাতেই ছিলেন না, এখন হতে যাচ্ছেন সেনেগালের কনিষ্ঠতম প্রেসিডেন্ট
এক বছর আগেও তাঁকে খুব বেশি মানুষ চিনতেন না। এখন তিনিই আফ্রিকার দেশ সেনেগালের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে। নির্বাচনে চূড়ান্ত জয় পেতে যাচ্ছেন সরকারবিরোধী প্রার্থী বাসিরু দিওমায়ে ফায়ে। সেনেগালের রাজনীতিতে ফায়ের অসাধারণ উত্থান অনেক রাজনীতিক নেতাকেই অপ্রস্তুত করে ফেলেছে।
৪৩ বছর বয়সী ফায়ে সেনেগালের রাজনীতিতে নবাগত হিসেবে পরিচিত। তিনি দেশটির বিক্ষুব্ধ তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। গত রোববার সেনেগালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। গত সোমবার দেশটির নির্বাচন কমিশন জানায়, ৯০ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। ফায়ে পেয়েছেন ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট। আর ক্ষমতাসীন জোটের প্রার্থী আমাদু পেয়েছেন ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ ভোট।
ইতিমধ্যে ফোন করে ফায়েকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আমাদু বা (৬২)। নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়ায় সেনেগালের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে বাসিরু দিওমায়ে ফায়ের নাম ঘোষণায় কোনো বাধা নেই।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ফায়ে তাঁর দীর্ঘদিনের মিত্র ও ‘কিংমেকার’ হিসেবে পরিচিত ওসমান সনকোর সঙ্গে কারাগারে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগেই তাঁরা মুক্তি পান। স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন ব্যক্তি (মিস্টার ক্লিন) হিসেবে পরিচিত ফায়ে। তিনি আগে আয়কর কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে তিনি দেশটিতে ব্যাপক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন তাঁকে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করতে হবে।
ফায়ে বড় হয়েছেন সেনেগালের প্রত্যন্ত এনডিয়াগানিয়াও এলাকায়। তিনি বলেন, সপ্তাহে প্রতি রোববার সেখানে তিনি মাঠে কাজ করার জন্য যান। গ্রামের জীবনের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা তাঁকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে।
বিশ্লেষক অ্যালিউন তিনে বলেন, ফায়ে আগে কোনো মন্ত্রী বা রাষ্ট্রীয় আইনসভার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাঁর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন সমালোচকেরা। কিন্তু ফায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে ১৯৬০ সালের পর থেকে যাঁরা দেশ পরিচালনা করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ব্যর্থ হয়েছেন।
ফায়ের গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে থাকছে দারিদ্র্য, অবিচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো বিষয়গুলো। রাজস্ব বিভাগে কাজ করার সময় তিনি ও সোনকো মিলে দুর্নীতি মোকাবিলায় একটি ইউনিয়ন টাস্কফোর্স তৈরি করেছিলেন। সনকোও আয়কর বিভাগে চাকরি করতেন। দুজনেই আয়কর পরিদর্শক হিসেবে চাকরি করেছেন।
ফায়ে বলেছেন, সেনেগালের মানুষের স্বার্থে গ্যাস, তেল, মৎস্য সম্পদ ও প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো সঠিকভাবে করতে হবে। তিনি দেশটিতে ফ্রাঁ মুদ্রার পরিবর্তে নিজস্ব সেনেগালিজ মুদ্রা চালু করার কথা বলেছেন।
ফায়েকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সেনেগালের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে ‘সেনেগালের গণতন্ত্রের বিজয়’ হয়েছে। ফায়ে প্রসঙ্গে স্যাকি সালের অধীনে কাজ করা প্রধানমন্ত্রী আমিনাতা টুর বলেছেন, ‘বাজেটের শুরুতেই তাঁকে বাস্তবতা মোকাবিলা করতে হবে। আমি তাঁর মধ্যে প্রচুর উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেখেছি। বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা জোরদার করা এবং সেনেগালের বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও ফায়ের প্রধান অগ্রাধিকার হতে হবে। এসব বিষয় সাবেক প্রেসিডেন্ট কিছু করেননি।’
নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগেই ফায়ের প্রতি সমর্থন জানান আমিনাতার মতো রাজনৈতিক নেতারা। দেশটিতে বিদ্রোহের অভিযোগে ১১ মাস কারাগারে কাটানো ফায়ের জন্য এই সমর্থন ছিল তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম হাতিয়ার।
সেনেগালের রাজনীতিতে ওসমান সনকো বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁরই অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু সনকো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না ভেবেই দ্বিতীয় পরিকল্পনা (প্ল্যান বি) থেকে ফায়েকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সনকো ফায়েকে সমর্থন করে বলেন, ‘আমার চেয়েও ফায়ে বেশি নীতিমান। তাঁকে ভোট দেওয়ার অর্থ, আমাকে ভোট দেওয়া।’
সনকো ও ফায়ে মিলে সেনেগালে ‘পাস্তেফ পার্টি’ গঠন করেন। দুজনকেই বিদ্রোহের অভিযোগে কারাগারে যেতে হয়। তবে তাঁরা এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেন।
মামলায় সনকোর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়। ফলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। তখনই মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে ফায়ের।
পাস্তেফ দলের নেতা মুস্তাফা সার বলেন, সনকো ও ফায়ে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তবে সমালোচকেরা বলেন, সনকো না থাকায় ফায়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তবে বিশ্লেষক তিনে বলেন, ফায়ে ও সনকো জুটির মাধ্যমে সেনেগালের রাজনীতিতে নতুন ধরনের নেতৃত্ব দেখা দিতে পারে।