বহু বছর বিচ্ছিন্ন থাকার পরও পুরোনো নারীসঙ্গীদের খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে গরিলারা
পূর্বাঞ্চলীয় গরিলার উপপ্রজাতি নারী পর্বত গরিলাদের (মাউন্টেন গরিলা) গড়ে ওঠা সম্পর্ক আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রুয়ান্ডায় পরিচালিত নতুন এক গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি নারী গরিলা যখন নতুন কোনো দলে যোগ দেয়, তখন সে আগের পরিচিত কোনো নারী গরিলার সঙ্গ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে।
রুয়ান্ডার ভলকানো ন্যাশনাল পার্কে ২০ বছর ধরে বিভিন্ন গরিলা দলের ওপর সংগৃহীত তথ্য নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে। রয়্যাল সোসাইটি জার্নাল প্রসিডিংস বি-তে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, গরিলাসমাজে দুটি আলাদা নারীর মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দুটি নারী গরিলা অনেক বছর আলাদা থাকার পরও নতুন আসা কোনো গরিলা তার পূর্বপরিচিত সঙ্গীর সঙ্গে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে।
গবেষণা দলের প্রধান গবেষক ও জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক ভিক্টোয়ার মার্টিগন্যাক বলেন, ‘বৈজ্ঞানিকভাবে জানি না, একে বন্ধুত্ব বলা ঠিক হবে কি না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একই লিঙ্গের এই সম্পর্কগুলো আসলেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
সামাজিক কাঠামো গঠনে প্রাণীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে থাকে। নারী ও পুরুষ উভয়ই এটা করে। নারীরা কখনো কখনো তাদের জীবনে বেশ কয়েকবার দল পরিবর্তন করে। এই ‘স্থানান্তর’ বা বিচরণ একদিকে যেমন আত্মীয়ের সঙ্গে প্রজনন এড়াতে সাহায্য করে, তেমনি জেনেটিক বৈচিত্র্য বজায় রাখে এবং সামাজিক সম্পর্ক গঠনেও ভূমিকা পালন করে।
গবেষক ভিক্টোয়ার মার্টিগন্যাক বলেন, ‘বন্য পরিবেশে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা নিয়ে গবেষণা করা বেশ কঠিন। কারণ, একবার কেউ দল ছেড়ে গেলে তাদের খোঁজ রাখা অনেক কঠিন।’
তবে ডায়ান ফসি গরিলা তহবিলের সহায়তায় পরিচালিত এই গবেষণায় মার্টিগন্যাক ও তাঁর সহকর্মীরা মাঠপর্যায়ে ১৯৬৭ সাল থেকে পর্যবেক্ষণ করে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা ৫৬টি নারী পর্বত গরিলার স্থানান্তর পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা কোন নতুন দলে যায় এবং কেন যায়, তা বিশ্লেষণ করেছেন।
মার্টিগন্যাক বলেছেন, গবেষণায় দেখা গেছে, গরিলারা এমন দল এড়িয়ে চলে, যেখানে পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা আছে। তবে আগের পরিচিত নারী সদস্যদের উপস্থিতিও গরিলাদের দল বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। বহু বছর ধরে আলাদা থাকলেও নারী গরিলারা তাদের ‘বন্ধুদের’ প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ে।
তবে অনেক সময় দেখা গেছে, তারা এমন দলে যোগ দিচ্ছে, যেখানে তাদের ছেলেবেলার সঙ্গীরা আছে, যাদের সঙ্গে তারা বড় হয়েছে। আবার সাম্প্রতিক সময়ে যাদের সঙ্গে খেলা বা সামাজিক মেলামেশা হয়েছে, তাদের দিকেও ঝোঁক দেখা যায়।
মার্টিগন্যাক ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘গরিলারা এই সম্পর্কগুলোর ওপর বিনিয়োগ করে, কারণ এগুলো থেকে তারা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সুবিধা পায়। নতুন দলভুক্ত গরিলারা সাধারণত সামাজিক শ্রেণির নিচের দিকে থাকে। দলীয় নারী সদস্যরা অনেক সময় তাদের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ করে। কারণ, নতুন গরিলাদের তারা প্রতিযোগী হিসেবে দেখে।’
এই ঘন ঘন দল পরিবর্তন যেমন গরিলাদের সমাজ গঠন করে, তেমনি মানবসমাজ গঠনেও স্থানান্তর ব্যাপক ভূমিকা রাখে। গবেষকেরা মনে করেন, অন্যান্য প্রজাতির মধ্যে এই আচরণ বিশ্লেষণ করলে মানুষের সামাজিক বিবর্তনের উৎস সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।