উদ্বেগে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন দল

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) দল টানা সাতবার ক্ষমতায়। গত শনিবার দলটি তাদের সর্বশেষ নির্বাচনী শোভাযাত্রা করেছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে এবারের নির্বাচনেও জয়ী হওয়া। কিন্তু তাদের জয় নিয়ে ইতিমধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। ২৯ মে দেশটির সাধারণ নির্বাচন। এর আগেই দলটির নির্বাচনী প্রচারে সমর্থন হারানোর চিহ্ন ফুটে উঠতে দেখা গেছে।

প্রচারের জন্য যে পোস্টার ও টি-শার্ট তৈরি করা হয়েছে, তার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে নির্বাচনী সমাবেশ আয়োজন করা ঐতিহাসিক সোয়েতো শহরের ৯০ হাজার আসনের ফুটবল স্টেডিয়ামটিও পূর্ণ হয়নি।

জনমত জরিপে দেখা গেছে, তিন দশক আগে ক্ষমতায় আসা এএনসি প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে চলেছে। ভোটাররা বিদ্যুৎ না থাকা, বেকারত্ব ও দুর্নীতি নিয়ে সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। তারপরও সমাবেশে ৬০ থেকে ৭০ হাজার সমর্থকের জড়ো হওয়ার বিষয়টিকে চমকপ্রদ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা সমাবেশে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দল বুধবারের নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত বিজয় তুলে নেবে।

সমাবেশে এএনসির অনেক সমর্থক বিরোধী দলগুলোর কফিন নিয়ে হাজির হন। এর মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার নতুন দল উমখুনটো উই সিজও (এমকে) রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জুমা এমকে দলের প্রচারে যোগ দিয়ে এএনসিকে বড় ধাক্কা দেন। জনমত জরিপে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে জুমার সমর্থন দেওয়া নতুন দলটি যে ভোট পাবে, তাতে এএনসি তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। জুমার নতুন দল এমকে জুমার প্রদেশ কোয়াজুলু-নাটালে এএনসির নিয়ন্ত্রণ শেষ করে দিতে পারে। এতে রামাফোসা তাঁর পূর্বসূরি জ্যাকব জুমার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রচার সমাবেশে জুমার নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, যারা এএনসিকে নবায়ন করতে পারেনি তারা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। তিনি জুমার সময়কার দুর্নীতির ওপর এর দায় চাপান। তবে রামাফোসার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে। একটি খামারবাড়ির সোফার মধ্যে ২০২২ সালে ৫ লাখ ৮০ হাজার ডলারের বেশি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ ওঠে, যা পরে চুরি হয়ে যায়।  

দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের নির্বাচনে ৫২টি দল অংশ নিচ্ছে। সেখানে এএনসির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী অবশ্য এমকে পার্টি নয়। সেখানে মূল বিরোধী দল হচ্ছে ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স বা ডিএ। গতকাল রোববার দলটি ২০ হাজার আসনের একটি স্টেডিয়ামে তাদের সমাবেশ করেছে। জরিপে দেখা গেছে, দলটি ২২ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পেতে পারে। সেখানে এমকে পার্টি পেতে পারে ৮ থেকে ১৩ শতাংশ ভোট। তবে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি থাকায় এএনসির জন্য তা সুখবর হতে পারে। কিন্তু এমকে পার্টির কারণে এএনসির জনপ্রিয়তা ৫০ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে।

এমকে পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না জ্যাকব জুমা। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত গত সোমবার এ আদেশ দিয়েছেন। এএনসির পক্ষ থেকে জুমাকে এমকে পার্টির নির্বাচনে অংশ নেওয়া ঠেকাতে নানা চেষ্টা চালানো হয়। দেশটির নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেয়, ২০২১ সালে আদালত অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে জুমাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিত নয়। আদালত শুনানি নিয়ে জুমাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেন।