তিউনিসিয়ায় খরার মধ্যেই রাতে পানি সরবরাহ বন্ধ হচ্ছে

খরার কারণে তিউনিসিয়ার নাফজায় সিদি এল বারাক বাঁধে সেতুর নিচে পানির স্তর অনেক কমে গেছে।
ছবি: রয়টার্স

তিউনিসিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা চলছে। এ খরার মধ্যেই রাতে নাগরিকদের জন্য সাত ঘণ্টা পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশটির পানি সরবরাহকারী সংস্থা সোনেডে এ তথ্য জানিয়েছে।

খরাপীড়িত দেশটি পানি ব্যবহারের ওপর নানা ধরনের কঠোর বিধিনিষেধও ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে কৃষিজমি বা সবুজ স্থান সেচের জন্য বা জনসমাগমস্থল বা গাড়ি পরিষ্কার করার জন্য পানির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সোনেডে বলেছে, জনসাধারণের জন্য রাত নয়টা থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত পানি সরবরাহ বন্ধ থাকবে। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

সোনেডের প্রধান মোসবাহ হেলালি বলেন, টানা চার বছর ধরে বৃষ্টির অভাবে দেশে খরা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তন এর জন্য দায়ী। সংকটকালে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত বোঝার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিয়ম অমান্য করলে জরিমানা ও কারাদণ্ডের কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই রমজান মাস শুরু হওয়ার পর থেকে রাতে পানি সরবরাহে অঘোষিতভাবে কাটছাঁটের অভিযোগ করেছেন। মন্ত্রণালয় বলছে, কয়েক বছরের খরা ও জলাধারে পানিপ্রবাহ কম থাকায় দেশে পানির সংরক্ষণব্যবস্থা প্রভাবিত হচ্ছে। এ কারণে নজিরবিহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সিদি এল বারাক বাঁধের কাছের জমি ফেটে চৌচির হয়ে আছে।
ছবি: রয়টার্স

তিউনিসিয়ায় সরকারি পরিষেবা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দুর্বল অর্থনীতিতে ভোগা দেশে নতুন এ সিদ্ধান্ত সামাজিক উত্তেজনা বাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বছরের পর বছর খরার কারণে উত্তর আফ্রিকার দেশটির বাঁধগুলোর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রায় ক্ষয় হয়ে যাওয়া পানি সরবরাহের একটি পাইপলাইনে ছিদ্র হওয়ায় পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়েছে।

দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হামাদি হাবিব বলেন, তিউনিসিয়ায় বাঁধের ধারণক্ষমতা প্রায় এক বিলিয়ন ঘনমিটার বা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। তিউনিসিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের ১০ শতাংশ আসে কৃষি খাত থেকে। কিন্তু এবার শস্য উৎপাদন নিয়েই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির কৃষক ইউনিয়নগুলো।

তিউনিসিয়ান ফেডারেশন ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ফিশারিজ বলেছে, বৃষ্টির অভাবে হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি পতিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। সংগঠনটির মুখপাত্র আনিস খারবেচ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘চলতি বছরের খাদ্যশস্যের মৌসুম হবে খুবই বিপর্যয়কর, কোনো ফসল হবে না। যা ফলন হবে, তাতে পরের বছরের ফসলের বীজ সরবরাহ করার জন্যও যথেষ্ট হবে না।’