নাইজেরিয়ায় আইএসের আস্তানায় আরও হামলার ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আস্তানায় ওপর হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। নাইজেরিয়া সরকারের অনুরোধেই এ হামলা চালানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দেশটির সামরিক বাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আরও হামলার ইঙ্গিত দিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘সামনে আরও আসছে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘আজ প্রধান কমান্ডার হিসেবে আমার নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে আইএসআইএস সন্ত্রাসীদের ওপর শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই গোষ্ঠী, বিশেষ করে নিরাপরাধ খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছিল। এমনটা বহু বছর—এমন কয়েক শতকের মধ্যেও দেখা যায়নি।’

নাইজেরিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দেশটির সোকোটো রাজ্যে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন বাহিনীর আফ্রিকা কমান্ড। এতে বেশ কয়েকজন আইএস যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে দাবি তাদের। বিবিসিকে নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ মাইতামা তুগার বলেন, যৌথ এই অভিযানে ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

যদিও সুনির্দিষ্টভাবে আইএসের নাম নেননি নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু সময়’ ধরে এই অভিযানের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। অভিযানে নাইজেরিয়ার দেওয়া গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। আরও হামলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তিনি। নাইজেরিয়ার মন্ত্রী বলেন, বিষয়টি নির্ভর করছে দুই দেশের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ওপর।

এমন সময় এ হামলা চালানো হলো, যখন গত অক্টোবরের শেষের দিকে ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছিলেন, নাইজেরিয়ার খ্রিষ্টানরা ‘অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার হুমকির’ মধ্যে রয়েছেন। পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়গুলোর ওপর সহিংসতা দমনে ব্যর্থ হয়েছে নাইজেরিয়া সরকার।

‘সামনে আরও আসছে’

নাইজেরিয়া সরকারের ভাষ্য, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মুসলমান ও খ্রিষ্টান—দুই সম্প্রদায়কেই লক্ষ্যবস্তু করছে। আর শুধু খ্রিষ্টানরা নিপীড়নের শিকার বলে ওয়াশিংটন যে দাবি করছে, তা জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতির পুরো চিত্রটা তুলে ধরে না। এমন বক্তব্যের মধ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হয়েছে নাইজেরিয়া।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার আকাশপথে হামলা চালিয়ে নিখুঁতভাবে ‘সন্ত্রাসীদের’ আস্তানায় আঘাত হানা হয়েছে। আইএসের একাধিক ক্যাম্পে হামলার কথা জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারাও। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে যুদ্ধজাহাজ থেকে অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে দেখা গেছে।

এদিকে নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও হামলা হবে কি না, তা সুনির্দিষ্টভাবে না জানালেও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ খোলাসাভাবে হামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। অভিযানে নাইজেরিয়ার সরকারের সহায়তার প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘সামনে আরও আসছে...’

নাইজেরিয়ায় আইএস কারা

নাইজেরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্তত দুটির সঙ্গে আইএসের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাদের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী বোকো হারামের শাখা। এই অংশ নাইজেরিয়ার উত্তর–পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। অপর গোষ্ঠীটি হলো ইসলামিক স্টেট সাহেল প্রভিন্স। তুলনামূলক কম পরিচিত এই গোষ্ঠী স্থানীয়ভাবে লাকুরাওয়া নামে পরিচিত। এরা নাইজেরিয়ার উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

নাইজেরিয়া বা মার্কিন সরকারের কাছ থেকে নিশ্চিত না করা হলেও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, সম্ভবত লাকুরাওয়া গোষ্ঠীর ওপর বৃহস্পতিবার হামলা হয়েছে। গত বছর সোকোটো ও কেব্বির মতো সীমান্ত রাজ্যে প্রাণঘাতী সহিংসতা বাড়িয়েছে তারা। প্রায়ই এই গোষ্ঠী প্রান্তিক বিভিন্ন সম্প্রদায় ও সশস্ত্র বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। উত্তর–পূর্বাঞ্চলেও বৃহস্পতিবার হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন।

এদিকে শুধু নাইজেরিয়া নয়, গত সপ্তাহে সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বড় পরিসরে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে হামলার প্রতিশ্রুতি অবশ্য আগেই দিয়ে রেখেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা বেড়েই চলেছিল। ওই হামলার পেছনে ইসলামিক স্টেটের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ ওয়াশিংটনের।