উগান্ডায় কলাগাছের অভিনব আসবাবপত্র

কলাগাছের তন্তু দিয়ে আসবাবপত্র বানাচ্ছেন আইজ্যাক নকোংগে
ছবি: ডয়চে ভেলের ভিডিও থেকে নেওয়া

স্থানীয় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের চূড়ান্ত নিদর্শন স্থাপন করলেন উগান্ডার এক শিল্পী। তিনি কলাগাছের তন্তু দিয়ে আসবাব তৈরি করছেন। অন্যান্য মানুষকেও তিনি তাঁর এই দৃষ্টান্ত অনুসরণের প্রেরণা জোগাচ্ছেন।

কলা শুধু মিষ্টি এক ফল, এমনটা ভাবা যেতেই পারে। তবে আফ্রিকার দেশ উগান্ডার মানুষের কাছে কলার গুরুত্ব অনেক বেশি। যেমন সেখানকার শিল্পী আইজ্যাক নকোংগে কলাগাছ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করেন। তিনি বলেন, ‘এটা সত্যি অনবদ্য। বেশির ভাগ বাসার ভেতরের অংশ কারখানায় তৈরি কৃত্রিম উপাদান দিয়ে সাজানো। আমি স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি কিছু জিনিস চেয়েছিলাম। আমি চাই, মানুষ এই ধারণা নকল করুক; কারণ, এমনটাই হওয়া উচিত। আফ্রিকান হিসেবে আমাদের সেই পথেই এগোনো উচিত।’

উগান্ডাকে আফ্রিকার কলার রাজধানী বলা হয়। ৫০টিরও বেশি জাতের পাকা কলা ও কাঁচকলা সে দেশে চাষ করা হয়। নানা রূপে সেই কলা প্রতিদিন খাওয়াও হয়। অন্য কোনো দেশের মানুষ উগান্ডার মানুষের মতো এত কলা খায় না।

কলাগাছে মাত্র একবারই ফল ধরে। তাই, নতুন ফল গজানোর জন্য সেটি কেটে ফেলা জরুরি। সে কারণে ফসল তোলার পর কলাগাছের বেশির ভাগ অংশ কেটে ফেলা হয়। কিন্তু বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার বদলে আইজ্যাক সেগুলো নতুন করে ব্যবহার করেন। কলাগাছ দিয়ে তৈরি তাঁর আসবাবের ভিত্তি প্রাকৃতিক তন্তু।

আইজ্যাক নকোংগে বলেন, ‘আমাদের এখানে চারিদিকে কলার তন্তু ছড়িয়ে রয়েছে। পেঁপে এবং ডাঁটাও পাওয়া যায়। আমাদের স্থানীয় উপাদান ব্যবহারের প্রণালি গ্রহণ করতে হবে। কোনো রাসায়নিক না থাকায় সেগুলো পরিবেশবান্ধবও বটে। কয়েক বছরের মধ্যে রাসায়নিক আমাদের জগৎ ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু আমরা স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করলে অবশ্যই আমাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে।’

আইজ্যাক হাত দিয়ে কলাগাছের বাইরের অংশ থেকে তন্তু বের করেন। শীষগুলো চিকন করে কেটে তিনি রোদে শুকিয়ে তারপর প্রক্রিয়াজাত করেন। দক্ষতার সঙ্গে ফাইবার পাকালে দীর্ঘ দড়ি তৈরি করা যায়। পরে কাঠ বা ধাতুর ফ্রেমে সেই দড়ি বোনা হয়।

আইজ্যাক বলেন, ‘আমার কম্পিউটার, আমার টেলিভিশন, উফার, ফ্লাস্ক—সবই দেখেছেন। আমার দেয়ালে ঝোলানো সাজানো এমন বস্তুও রয়েছে।’

সাজানোর জিনিস ও সংসারের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুর উপাদান হিসেবে কলাগাছের তন্তু বেশ উপযোগী। আইজ্যাক নিত্যনতুন সামগ্রী তৈরি করছেন। সত্যিকারের শক্ত চেয়ারের মতো আরও বড় আসবাব তৈরি করতে প্রায় এক হাজার মিটার তন্তু লাগে। প্রায় এক শ কলাগাছ থেকে এই পরিমাণ তন্তু সংগ্রহ করা যায়। আইজ্যাক অন্যদের এই বিপুল সম্পদ সম্পর্কে শিক্ষা দিতে চান।

আইজ্যাক নকোংগের বাসায় কলাগাছের তন্তু দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র
ছবি: ডয়চে ভেলের ভিডিও থেকে নেওয়া

আইজ্যাক বলেন, ‘আফ্রিকায় অঢেল সম্পদ আছ বলে আমরা বিশ্বাস করি। যেমন এই ডাল কলার কাঁদিতে ভরা। চাষি কলাগাছ পোঁতার কিছুকাল পর ফসল তুলে কিছু আয় করবেন। অর্থাৎ আমরা সেই অঢেল সম্পদ ও ভালো ফসলে বিশ্বাস করি। সে কারণে এখানে একটা পাখি আছে, যারা এই কলা খেয়ে বেঁচে থাকে।’

আইজ্যাকের শিল্পকলা দেখে কলা সম্পর্কে উগান্ডার মানুষের ধারণা কতটা বদলায়, সেটা দেখতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। কলাগাছের তন্তু দিয়ে হাতে তৈরি তাঁর আসবাব বাসায় আফ্রিকার সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের ছোঁয়া এনেছে। সেই আসবাব প্রকৃত অর্থে টেকসইও বটে।