জলবায়ু সম্মেলনে ভূরাজনীতির ছায়া

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নির্বাহের চাপ ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জলবায়ু সম্মেলন চলছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে লন্ডভন্ড বসতবাড়ি। খুলনার কয়রা উপজেলার হরিণখোলায়
ফাইল ছবি

লোহিত সাগর উপকূলে সিনাই উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত মিসরীয় পর্যটন-নগরী শার্ম আল-শেখে পক্ষব্যাপী ২৭তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৭) প্রথম সপ্তাহ শেষ হয়েছে। এই প্রথম সপ্তাহে ছিল—শক্তিশালী কথামালা, নিঃশব্দ প্রতিবাদ ও সামান্য নগদ পাওয়া নিয়ে আলোচনা।

বিশ্বের ১৯৬টি দেশের অন্তত ৪৫ হাজার প্রতিনিধি জলবায়ু সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ৬ নভেম্বর থেকে জড়ো হয়েছেন নয়নাভিরাম শার্ম আল-শেখে। এ আলোচনা চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।

শার্ম আল-শেখের অর্থ ‘জ্ঞানীদের উপসাগর’। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত গোটা পৃথিবীকেই সংকটে ফেলেছে। বিষয়টি অন্তত প্রতীকীভাবে মানানসই হতো, যদি ওই শহরে জড়ো হওয়া রাষ্ট্রপ্রধান ও নেতারা এযাবৎকালীন তাঁদের আত্মতুষ্টির জন্য লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকতেন!

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নির্বাহের চাপ ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জলবায়ু সম্মেলন চলছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে—বিশ্বের তাপমাত্রা এই শতাব্দীর মধ্যে যাতে আরও দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস না বাড়ে, অর্থায়ন, অভিযোজন তহবিল, অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি তহবিল, বিশ্বব্যাংক সংস্কার ও আফ্রিকার গ্যাস উত্তোলন।

গত বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে প্রাক্‌-শিল্পস্তরের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখায় সম্মতি এসেছিল। তবে মাত্র ২৪টি দেশ কার্বন নিঃসরণসংক্রান্ত নতুন জাতীয় পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। জমা পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাপমাত্রা প্রায় শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনবে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর এ পর্যন্ত দেওয়া প্রতিশ্রুতি লক্ষ্যপূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। বিপর্যয়কর আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৈশ্বিক উষ্ণায়নের দিকে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী৷

গ্যাস উত্তোলনের উন্মাদনা বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করবে

বৈশ্বিক গ্যাস সরবরাহের সংকটের প্রতিক্রিয়া হিসেবে নতুন বেশ কিছু গ্যাস প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ঘোষিত এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বর্তমানে নিঃসরিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের সঙ্গে তা আরও প্রায় ১০ শতাংশ যোগ করবে। নতুন তথ্য অনুসারে, বিশ্বজুড়ে এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) অতিরিক্ত সরবরাহ হবে। এই দশকের শেষ নাগাদ প্রায় ৫০০ মেগাটন এলএনজি উৎপাদন হতে পারে, যা রাশিয়া থেকে ইউরোপে আমদানি করা সরবরাহের প্রায় পাঁচ গুণ এবং রাশিয়ার মোট গ্যাস রপ্তানির প্রায় দ্বিগুণ। গ্যাস উত্তোলনের এই বৈশ্বিক উন্মাদনা জলবায়ু বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করবে।

আন্তর্জাতিকভাবে গ্যাসের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। এ কারণে গ্যাসের মজুতসম্পন্ন আফ্রিকার দেশগুলোর দিকে বিনিয়োগকারীদের চোখ পড়েছে। কিন্তু তেল ও গ্যাস উত্তোলনের ফলে ওই মহাদেশের সাধারণ মানুষের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা কম। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো লাভবান হলেও জলবায়ু সংকটের কারণে দরিদ্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আফ্রিকা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ এখনো অনেক পিছিয়ে। গত বছর আফ্রিকায় বায়ু, সৌর, ভূতাপীয় বা অন্যান্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ-উৎপাদন প্রকল্পগুলোর জন্য মাত্র ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ২৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছিল, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করা ৪৩৪ বিলিয়ন ডলারের মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।

দায়ী ধনীরা, খেসারত দরিদ্র দেশগুলোর

ধনী বিশ্বই জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করেছে। কিন্তু তুলনায় খুবই কম মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ করা দরিদ্র বিশ্ব অত্যধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দরকার অর্থায়ন। সম্মেলনে উপস্থাপিত একটি নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোয় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হলে (জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে) ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে।

দরিদ্র দেশগুলোকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে এবং চরম আবহাওয়ার প্রভাবগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করার জন্য ২০২০ থেকে বছরে ১০০ বিলিয়ন দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। ধনী দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে যত দীর্ঘ সময় ধরে ব্যর্থ হতে থাকবে, উন্নত দেশগুলোর ওপর উন্নয়নশীল বিশ্বের আস্থা তত কমতে থাকবে।

জলবায়ু অর্থায়নে উন্নত বিশ্ব যে অর্থ দেয়, তার বেশির ভাগই মধ্যম আয়ের দেশগুলোর নিঃসরণ কমানোর প্রকল্পে ব্যয় হয়। ফলে সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে কম সহায়তা পেয়েছে। চরম আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপায়গুলোর জন্য এসব দেশের সহায়তার বেশি প্রয়োজন। যেমন দরকার নতুন করে বনায়ন বাড়ানো, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা তৈরি করা এবং আগাম সতর্কতার ব্যবস্থা স্থাপন করা। বর্তমানে এসব খাতে তথা অভিযোজনের জন্য জলবায়ু অর্থায়নের মাত্র এক-পঞ্চমাংশ দেওয়া হচ্ছে। গত বছর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে এটি দ্বিগুণ করা হবে।

গ্লাসগো-শার্ম আল-শেখ ওয়ার্ক প্রোগ্রামের অধীনে অভিযোজনসংক্রান্ত বৈশ্বিক লক্ষ্যের (জিজিএ) একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলো দৃঢ় আহ্বান জানিয়েছে। মিসরের তরফে অভিযোজনের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে। অগ্রগতি কিছু হবে; কিন্তু অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন দ্বিগুণ করার লক্ষ্য এ বছর পূরণ হবে না।

ধনী দেশগুলোর ঔপনিবেশিক শোষণ ও লুণ্ঠনের শিকার দরিদ্র দেশগুলো। চরম জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার জন্য প্রশ্নে তারা অসহায় অবস্থায় পর্যবসিত। কারণ, তাদের অর্থসংস্থান নেই। প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়া আগামী কয়েক দশকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিতে আক্রান্ত দেশগুলো টিপিং পয়েন্টের দিকে দ্রুত ধাবমান হবে। টিপিং পয়েন্ট এমন এক অবস্থা, যা ছোট ছোট ক্ষতি বা নেতিবাচক পরিবর্তনগুলো বড় আকারের বিপর্যয়ের মুখে দাঁড় করানো। সংকট প্রলম্বিত হলে জলবায়ু বিশৃঙ্খলাকে অপরিবর্তনীয় হয়ে উঠতে পারে।

অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়ন তহবিল

জলবায়ু সংকটের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো একটি সমাধান সামনে নিয়ে এসেছে। তারা বলছে, যারা মূলত এই সংকট সৃষ্টি করেছে, তাদের তৈরি অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির জন্য একটি তহবিল গঠন করতে হবে, নাম ‘অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি অর্থায়ন তহবিল’। ‘অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি’ জলবায়ু সংকটের বিধ্বংসী প্রভাবকে বোঝায়। এগুলো এমন ক্ষয়ক্ষতি, যা অভিযোজন প্রক্রিয়ায় তথা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিরসন করা সম্ভব নয়।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ভানুয়াতু ১৯৯১ সালে প্রথমে এ ধরনের আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু বিষয়টি বছরের পর বছর তথাকথিত টেকনিক্যাল আলোচনায় আবদ্ধ করে রাখা হয়। অবশেষে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি ও এর অর্থায়নের বিষয়টি অবশেষে অনিবার্য হয়ে উঠছে৷

কেউ কেউ বলতে পারেন যে খাদ্য, জ্বালানি ও জীবনযাত্রার সংকটের মধ্যে এ ধরনের অর্থায়ন অসম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ করা গ্রুপ দ্য লস অ্যান্ড ড্যামেজ কোলাবোরেশনের নতুন একটি প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের প্রথমার্ধে মাত্র ছয়টি জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে চরম আবহাওয়া ও জলবায়ু-সম্পর্কিত ইভেন্টগুলোর খরচ বহন করার জন্য যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেছে। অন্য এক হিসাবে, তেল কোম্পানিগুলো প্রতিদিন ১ বিলিয়ন ডলার লাভ করে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস লস অ্যান্ড ড্যামেজ বা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ থেকে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি বাবদ অর্থ দেওয়ার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির বড় কোম্পানিগুলোর ওপর ‘উইন্ডফল ট্যাক্স’ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।

লস অ্যান্ড ড্যামেজ চলতি সম্মেলনের অফিশিয়াল অ্যাজেন্ডা বা মূল আলোচ্যসূচিতে দৃঢ়ভাবেই রয়েছে। তবে এ সম্মেলনে এর নিষ্পত্তি হবে না।

অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি আলোচনার কেন্দ্রে থাকলেও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতিনিধিদের তুলনায় তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোর লবিস্ট ছিল বেশি। শার্ম আল-শেখের সম্মেলনে তেল ও গ্যাসশিল্পের ৬৩৬ জন প্রতিনিধি রয়েছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। গ্লাসগোতে এ সংখ্যা ছিল ৫০৩। দূষণকারী লবিস্টদের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় নিরবচ্ছিন্ন অধিকার দেওয়া হলে জলবায়ু সংকটের অর্থপূর্ণ মোকাবিলা ব্যাহত হবে। জাতিসংঘের (ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা ইউএনএফসিসি) ক্রিটিক্যাল বা গুরুত্বপূর্ণ কাজকে প্রভাবিত করে কার্যকারিতাকে দুর্বল করে দেবে।

বিশ্বব্যাংক সংস্কারের আহ্বান

বিশ্বব্যাংক জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে নেই। এটা সম্পূর্ণ আলাদা প্রতিষ্ঠান। তবে অনেক বিশ্বনেতাই এর সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, বিশ্বব্যাংক জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং একুশ শতকের জন্য উপযুক্ত নয়। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস শার্ম আল-শেখ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন; কিন্তু সম্মেলন শেষে তাঁর পদ নড়বড়ে হয়ে উঠতে পারে। যদি শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের সংস্কার হয়, তবে এটি হতে পারে শার্ম আল-শেখের সবচেয়ে বড় অর্জন। তেমন সম্ভাবনা জোরালো হতে শুরু করেছে।

কার্বন ট্রেডিং স্কিম চালুর প্রস্তাব

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিনিয়োগ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন কার্বন ট্রেডিং স্কিম চালুর প্রস্তাব করেছে। সমালোচকেরা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এ পরিকল্পনার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এর ফলে মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে বলেও মত উঠে এসেছে। এ নিয়ে সম্মেলনে নিঃশব্দ প্রতিবাদ করা হয়েছে। অ্যাকটিভিস্টরা মানবাধিকারের ক্ষেত্রে মিসরের ক্ষতিকর রেকর্ডকে স্পটলাইটে রাখার চেষ্টা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুদূত জন কেরি বলেছেন, নতুন উদ্যোগটি রকেফেলার ফাউন্ডেশন ও বেজোস আর্থ ফান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বে তৈরি হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতারা পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহের জন্য সংগ্রাম করছেন। জন কেরি বলেন, নতুন উদ্যোগটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতা রূপান্তরে প্রয়োজনীয় ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে সহায়তা করবে। বিপজ্জনক বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এড়াতে আন্তর্জাতিক এনার্জি সংস্থার মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্লিন এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব বার্ষিক বিনিয়োগ ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হতে হবে।

কার্বন বাজার (কার্বন নিঃসরণ কমানোর একটি টুল) ঐতিহাসিকভাবে জলবায়ুর লক্ষ্য পূরণে সার্থক হয়নি। জন কেরি স্বীকার করেছেন, ‘অতীতের ভুলগুলো’ কার্বন বাজারের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শক্তিশালী সুরক্ষা নিশ্চিত করে শুধু ‘উচ্চ মানের’ ক্রেডিট ব্যবহার করা হবে।

কূটনৈতিক স্থবিরতার ছায়া জলবায়ুর আলোচনায়

যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু অর্থায়নে তার দায়বদ্ধতা পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখনো গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের অর্থ পাওনা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বক্তৃতায় অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ের কোনো উল্লেখ নেই। তবে মিথেন গ্যাস কমানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এই শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়মিতভাবে তেল ও গ্যাস উত্তোলনকালে নিজ থেকেই ও কৃষি থেকে নির্গত হয়। মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো দীর্ঘস্থায়ী না হলেও নিঃসরিত হওয়ার পর ২০ বছরে গড়ে ৮০ গুণ বেশি তাপ আটকে রাখে। বার্লিনভিত্তিক সংস্থা ক্লাইমেট অ্যানালিটিকসের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত নতুন গ্যাস প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নির্গমন ৫০০ শতাংশ বাড়তে পারে।

চীনের জলবায়ুবিষয়ক দূত শি ঝেনহুয়া যুক্তরাষ্ট্রের দূত জন কেরির সঙ্গে আলোচনা-পরবর্তী সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনার ‘বাধাগুলো দূর করার’ আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র দরজা বন্ধ করে দিয়েছে এবং চীন এটি খোলার চেষ্টা করছে।’

মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান পরিদর্শনের জেরে বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী এই দুই দেশের সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেখা হবে। তাঁদের আলোচনায় তাইওয়ান আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকবে। কূটনৈতিক স্থবিরতা ইতিমধ্যেই জলবায়ু আলোচনার ওপরও ছায়া ফেলেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে একটি অভিন্ন কৌশল বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘সহযোগিতা বা ধ্বংস’ কিংবা ‘জলবায়ু সংহতি চুক্তি বা জলবায়ু আত্মহত্যা’—যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে।

ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর চেয়ারপারসন