ভ্রমণপিপাসু মানুষ দূরদূরান্তে যায়। দেশের একঘেয়েমি কাটাতে বিত্তবানেরা যান বিদেশে। শহরের কোলাহল ও দূষণের ধকল কাটাতে সমুদ্র বা পাহাড় দেখতে যান কেউ কেউ। তবে অনেকে সাফারি পার্ককে নিজেদের পছন্দের শীর্ষে রাখেন। কারণ, এসব সংরক্ষিত বনজঙ্গলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের বন্য প্রাণী নিরাপদে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়। চলুন, পড়ার মাধ্যমে বিশ্বের বড় ১০ সাফারি পার্ক ঘুরে আসা যাক!
নামিবিয়ার জাতীয় উদ্যান নামিব-নৌকলুফৎ পার্কের আয়তন প্রায় ৪৯ হাজার ৭৬৮ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পার্কের একদিকে রয়েছে লাল বালুর মরুভূমি, অন্যদিকে হিমবাহ প্রবাহিত উপত্যকা। এখানে মরুহাতি, চিতাবাঘ, গন্ডার, ওরিক্স, শিয়ালসহ নানা প্রজাতির পাখি রয়েছে। পার্কটি সোসুসভ্লেই অঞ্চলের কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত, যা সোনালি বালুর ঢাল এবং মৃত মরুভূমির নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
কানাডার রকি মাউন্টেন পার্কস সাতটি সংলগ্ন উদ্যান নিয়ে গঠিত, যার চারটি জাতীয় উদ্যান এবং তিনটি ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার প্রাদেশিক উদ্যান। কানাডার রকি পর্বতমালার একটি বিস্তৃত অঞ্চলের প্রায় ২৬ হাজার ৫৮৩ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে এই পার্ক অবস্থিত। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বরফে আচ্ছাদিত পর্বতশৃঙ্গ, হিমবাহ এবং অনেকগুলো প্রাকৃতিক হ্রদের জন্য বিখ্যাত এই উদ্যান ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকাভুক্ত। ভালুক, পর্বতসিংহ (মাউন্টেন লায়ন), ইল্ক হরিণ, বড় শিংওয়ালা ভেড়া ও পাইন বেজি উদ্যানটির মূল আকর্ষণ। সারা বছর পর্যটক গেলেও গ্রীষ্মকালে এই উদ্যানের পর্যটক বেড়ে যায়। তখন উত্তর আমেরিকা মহাদেশের উদ্যানটি যেন নিজের পূর্ণ রূপ মেলে ধরে।
রুয়াহা জাতীয় উদ্যান তানজানিয়ার এবং পূর্ব আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান, যা প্রায় ২০ হাজার ২২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এটি তানজানিয়ার দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। এটি বৈচিত্র্যময় বন্য প্রাণী, বিশেষত নানা জাতের বিশাল হাতি ও সিংহের জন্য সুপরিচিত। উদ্যানটি ৫৪০টি প্রজাতির বেশি পাখির আবাসস্থল। তুলনামূলক কম পর্যটক থাকায় এই পার্ক প্রায় সময় নির্জন থাকে।
কাকাডু জাতীয় উদ্যান অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাংশে অবস্থিত প্রায় ১৯ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার একটি সাফারি পার্ক। ইউনেসকোর তালিকাভুক্ত এই উদ্যান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর জন্য বিখ্যাত। এতে কুমির, উট, সাপসহ অনেক ধরনের বন্য প্রাণী রয়েছে। উদ্যানটি আদিবাসী গুলা জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধারণ করে, যেখানে হাজার হাজার বছরের পুরোনো পেট্রোগ্লিফ (চিত্রকলা) পাওয়া যায়। কাকাডুতে সারা বছরই পর্যটক থাকে। এর জলপ্রপাত, হ্রদ, বন্য প্রাণী এবং ঐতিহাসিক চিত্রকলা পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ১৯ হাজার ৪৮৫ বর্গকিলোমিটার। দেশটির উত্তর-পূর্বে মোজাম্বিক সীমান্তে অবস্থিত উদ্যানটি ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে আফ্রিকার ‘বিগ ফাইভ’—হাতি, সিংহ, চিতাবাঘ, গন্ডার, আফ্রিকান মহিষসহ অনেক ধরনের বন্য প্রাণী রয়েছে। এই উদ্যানের বন্য প্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার, পাখির প্রজাতি পাঁচ শতাধিক। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানার ওকাভাঙ্গো ডেলটা প্রচলিত কোনো সাফারি পার্ক নয়। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্থলভাগীয় ডেলটা ব্যবস্থা। প্রায় ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার বিস্তীর্ণ এই জলাভূমি বিভিন্ন পাখি ও জলজ প্রাণীর জন্য স্বর্গ। ক্যানো সাফারি এখানকার বিশেষ আকর্ষণ। এটি ইউনেসকোর ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকাভুক্ত।
সেরেনগেটি জাতীয় উদ্যান মূলত লাখ লাখ উইল্ডবিস্ট (গনু) ও জেব্রার মহা অভিবাসনের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। প্রায় ১৪ হাজার ৭৬৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই বিশাল বুনো উদ্যান তানজানিয়ার অন্যতম আকর্ষণীয় এবং প্রাকৃতিকভাবে অপরিবর্তিত অঞ্চলগুলোর একটি। সেরেনগেটি কেবল কোনো উদ্যান নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর প্রতিবেশতন্ত্রের অংশ।
হুয়াংগে জাতীয় উদ্যান বৈচিত্র্যময় বন্য প্রাণী, বিশেষত বিশাল বিশাল হাতি এবং আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বন্য কুকুরের জন্য বিখ্যাত। উত্তর-পশ্চিম জিম্বাবুয়েতে অবস্থিত উদ্যানটির আয়তন প্রায় ১৪ হাজার ৬৫০ বর্গকিলোমিটার। এখানে ১০০–এর বেশি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ৪০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।
বতসোয়ানার চোবি জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ১১ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার। উদ্যানটি অসংখ্য হাতি এবং চোবি নদীর সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে বোট সাফারির মাধ্যমে জলজ প্রাণী দেখা যায়। এখানে কুমির, জলহস্তীসহ অসংখ্য পাখি দেখা যায়। সিংহ ও চিতার শিকার পর্যবেক্ষণ উদ্যানটির একটি বড় আকর্ষণ।
এটি বিশ্বের প্রথম জাতীয় উদ্যান। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইমিং অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত উদ্যানটির আয়তন প্রায় ৮ হাজার ৯৮৭ বর্গকিলোমিটার। ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত উদ্যানটি অনন্য ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, সমৃদ্ধ বন্য প্রাণী এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত। এতে ভালুক, বাইসন, নেকড়ে এবং নানা প্রজাতির হরিণের দেখা মেলে।
সূত্র: সাফারিবুকিংসডটকম, কেয়ার হেলথ ইনস্যুরেন্স