ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় কঙ্গো ও রুয়ান্ডার নেতাদের মধ্যে শান্তিচুক্তি সই
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আয়োজনে ওয়াশিংটনে এক শীর্ষ সম্মেলনে শান্তিচুক্তিতে সই করেছেন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) ও রুয়ান্ডার নেতারা। এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘাতের অবসানে দুই দেশ এ চুক্তি করল।
সম্মেলনের আগে ডিআর কঙ্গোর খনিজসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনী ও রুয়ান্ডার সমর্থনপুষ্ট বলে ধারণা করা বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াই বেড়ে যায়। এ লড়াই নিয়ে কঙ্গোর সেনাবাহিনী প্রতিপক্ষকে শান্তি প্রক্রিয়া বিনষ্টের চেষ্টা করার অভিযোগ তোলে। তবে এম২৩ বিদ্রোহীরা বলেছে, সেনাবাহিনীই যুদ্ধবিরতি ভেঙে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
বছরের শুরুতে এম২৩ কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের এক বড় অংশ দখল করে নেয়। এ সময় দুপক্ষের সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ নিহত হন। ঘরছাড়া হন অনেকে।
‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ইনস্টিটিউট অব পিস’-এ আয়োজিত সম্মেলনের শুরুতে ট্রাম্প বলেন, এটি আফ্রিকা ও বিশ্বের জন্য ‘একটি মহান দিন’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি দুই নেতার ওপর অনেক আস্থা রাখি। আমরা এই অঙ্গীকার রাখব। আমি জানি, তাঁরাও তা রাখবেন এবং চুক্তি বাস্তবায়ন করে নিজেদের জনগণের জন্য আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবেন।’
এর আগে ট্রাম্প কঙ্গো ও রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দিয়ে গত জুন মাসে একটি শান্তিচুক্তি সই করান এবং এটিকে তিনি ‘গৌরবের বিজয়’ বলে আখ্যা দেন।
এর আগে ট্রাম্প কঙ্গো ও রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দিয়ে গত জুন মাসে একটি শান্তিচুক্তি সই করান এবং এটিকে তিনি ‘গৌরবের বিজয়’ বলে আখ্যা দেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স শিসেকেদি ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে পরস্পরকে সংঘাতের জন্য দায়ী করে বারবার তিরস্কার করেছেন।
এবার সেই চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে সই করলেন শিসেকেদি ও কাগামে। অনুষ্ঠানে কেনিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বুরুন্ডি ও টোগোর নেতারা এবং উগান্ডার ভাইস প্রেসিডেন্টও সমর্থন জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট কাগামে ট্রাম্পকে ‘নিরপেক্ষ’ নেতা হিসেবে প্রশংসা করে বলেন, তিনি কখনো পক্ষ নেন না। আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবমুখী। এর ফলে আমরা এগিয়ে চলার সবচেয়ে পরিষ্কার ও কার্যকর পথ পেয়েছি।’
প্রেসিডেন্ট শিসেকেদি বলেন, তিনি ‘গভীর কৃতজ্ঞতা ও স্পষ্ট আশাবাদ’ অনুভব করছেন। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, রুয়ান্ডা চুক্তির ‘সব শর্ত ও চেতনা’ মেনে চলবে।
আমি দুই নেতার (কঙ্গো ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট) ওপর অনেক আস্থা রাখি। আমরা এই অঙ্গীকার রাখব। আমি জানি, তাঁরাও তা রাখবেন এবং চুক্তি বাস্তবায়ন করে নিজেদের জনগণের জন্য আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবেন।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট
কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তবে এম২৩ সেখানে ছিল না। তারা কাতারের মধ্যস্থতায় কঙ্গো সরকারের সঙ্গে আলাদা আলোচনায় ব্যস্ত।
ট্রাম্প প্রশাসন কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে আলোচনায় নেতৃত্ব দেয়। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, দুই দেশের বিরোধ মিটলে খনিজসমৃদ্ধ এ অঞ্চলে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ানোর পথ খুলবে।
অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘সবচেয়ে বড় ও সেরা কয়েকটি কোম্পানি দুই দেশে পাঠাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সেখানে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সংগ্রহ করব, সম্পদ তুলব এবং মূল্য পরিশোধ করব। এতে সবাই অনেক অর্থ আয় করবে।’
রুয়ান্ডা এম২৩-কে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে। যদিও জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রুয়ান্ডার সেনাবাহিনী বাস্তবে এম২৩-এর সামরিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই শান্তিচুক্তি স্থায়ী শান্তি আনতে পারবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
অনুষ্ঠানে কেনিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বুরুন্ডি ও টোগোর নেতারা এবং উগান্ডার ভাইস প্রেসিডেন্টও সমর্থন জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন। কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওও ছিলেন অনুষ্ঠানে।
দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের কঙ্গোবিষয়ক গবেষক ব্রাম ভেরেলস্ট বিবিসিকে বলেছেন, ‘(কঙ্গোতে) এখনো কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর নেই এবং এম২৩ বিদ্রোহীরা তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েই চলেছে।’ তিনি বলেন, ‘শান্তিচুক্তি সই অনুষ্ঠান পরিস্থিতি বদলাবে বলে মনে হয় না। তবে সামান্য হলেও আশা আছে যে এটি দুই দেশের নেতাদের অঙ্গীকার পালনে জবাবদিহি বাড়াতে পারে।’
এম২৩ এ বছর ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় গোমা ও বুকাভুসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শহর দখল করেছে।