হুইলচেয়ারে বসেও নাচের আনন্দে মাতছেন রুয়ান্ডার নারী

ছবি: ডয়চে ভেলের সৌজন্যে

ডান্স ফ্লোরে সুন্দর নাচের ছন্দ। তবে এই যুগল নাচের চরিত্র কিন্তু ভিন্ন। এর নাম ‘সাইক্লোডান্স’। এক পার্টনার পা দিয়ে নাচেন, আরেকজন চাকার ওপর নির্ভরশীল। যেমন ইরিস মুকেশিমানা নামের অভিজ্ঞ নাচের শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘এই কারণেই আমি সাইক্লোডান্স ভালোবাসি। এটি মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটায়। হুইলচেয়ারে বসা মানুষের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে কোনো প্রাচীর থাকে না। সাইক্লোডান্সের সময় কয়েক মুহূর্তের জন্য প্রতিবন্ধকতা ভুলে থাকতে পেরে আমি খুব ভালো বোধ করি।’

বেলজিয়ামের লুভ্যাঁ-লা-ন্যোভ অঞ্চলে ইরিস তাঁর ছাত্রদের এক পারফরম্যান্সের জন্য প্রস্তুত করছেন। নিখুঁত কোরিওগ্রাফি ও সঠিক গতি নিশ্চিত করতে চান তাঁরা। তবে এই নৃত্যশিল্পীদের জন্য শুধু ক্লাসে মুভমেন্ট শেখাই আসল বিষয় নয়।

ইরিস মুকেশিমানা ব্যস্ত ও পেশাদার মানুষ। তিনি মা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। শিশু বয়সে রুয়ান্ডায় পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাঁটার শক্তি হারান। তারপর যুদ্ধ শুরু হলো, যা গণহত্যার রূপ নিল। তাঁর পরিবারের অনেক সদস্যের মৃত্যু হলেও ইরিস বেঁচে গেলেন।

বেলজিয়ামের শান্তিরক্ষা বাহিনী শিশু হাসপাতালের মানুষদের উদ্ধার করার সময় তিনিও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে মুকেশিমানা বলেন, ‘আমাদের চাদরের নিচে লুকিয়ে নড়াচড়া না করতে বলা হয়েছিল। আমাদের মনে প্রচণ্ড ভয় হচ্ছিল। শুনতে পাচ্ছিলাম লোকেরা বলছে, ওরা পালাচ্ছে, ওরা পালাচ্ছে! তারা আমাদের মেরে ফেলতে চেয়েছিল।’

বেলজিয়ামে এক পরিবার তাঁর দায়িত্ব নিয়েছিল। নিজের প্রাথমিক সমস্যার বর্ণনা করে ইরিস বলেন, ‘বেলজিয়ামে এসে আমি উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কীভাবে হ্যালো বলতে হয়, তা–ও জানতাম না, এক বর্ণ ফরাসি নয়।’

ইরিস তাঁর অতীতের ঘটনা ভুলতে চান না। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে তিনি বদ্ধপরিকর। সে কারণে তিনি ১২ বছর আগে নিজের নাচের স্কুল খোলেন। আশপাশের মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। তাঁর কথায়, ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’।

স্থানীয় কমিউনিটি হলে দর্শকেরা একে একে প্রবেশ করছেন। টিকিটের অর্থ স্থানীয় এক চ্যারিটিকে দেওয়া হবে। ইরিসের সঙ্গী বঁজ্যামা বেনকো মঞ্চ সাজানোর কাজে সাহায্য করছেন। তিনি ইরিসের কাজে গর্ব অনুভব করেন।

মঞ্চের পেছনে গ্রিনরুমে নর্তকীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কস্টিউমে শেষ ছোঁয়ার পরই অনুষ্ঠান শুরু হতে পারে। মুকেশিমানা বলেন, ‘আমি বাধা অতিক্রম করে দেখাতে চাই, যে প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মানুষ নিজেকে উজাড় করে দিতে পারে এবং নাচের আনন্দ নিতে পারে।’

ইরিস হাতেনাতে সেই কাজ করে দেখিয়ে আদর্শ হতে চান। অন্যরাও যাতে নিজেদের ডানা মেলে ধরতে পারেন, সেটাই তাঁর ইচ্ছা।