‘দুষ্টু ছেলে’ হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট

নেলসন ম্যান্ডেলাফাইল ছবি: এএফপি

‘ভয়াবহ সংঘাতের থাবায় দেশকে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে দেখেছি আমরা। সেই ক্ষত সারিয়ে নেওয়ার সময় এসেছে। আমরা আর কখনোই এই সুন্দর দেশকে  নিপীড়নের শিকার হতে দেব না।’

দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী প্রিটোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ভবনে দেওয়া এক বক্তৃতায় কথাগুলো বলেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। দিনটি ছিল ঠিক ৩০ বছর আগে—১৯৯৪ সালের এই দিন—১০ মে। এদিনই দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন তিনি।

নেলসন ম্যান্ডেলার পুরো নাম নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা। রোলিহ্লাহ্লার অর্থ ‘গাছের ডাল ভাঙে যে’ অর্থাৎ ‘দুষ্টু ছেলে’। এই দুষ্টু ছেলেই আজীবন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই–সংগ্রাম করে গেছেন। নিপীড়িত মানুষের পক্ষ নেওয়ায় কারাগারে থেকেছেন দীর্ঘ ২৭ বছর। তাঁর হাত ধরেই দক্ষিণ আফ্রিকার চরম বৈষম্যমূলক বর্ণবাদ আইন বিলুপ্ত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গরা ফিরে পান তাঁদের শত শত বছরের হারানো অধিকার।  

দীর্ঘদিন বর্ণবাদী পরিবেশের মধ্যে থাকা শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরিতেও তৎপর হয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। এ ক্ষেত্রে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন দেশের মানুষের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দাদের বৈষম্যের শৃঙ্খলে আটকে পড়ার শুরু ষোড়শ শতকে—নেদার‍ল্যান্ডসের দখলদারির মধ্য দিয়ে। এরপর সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে দেশটিতে উপনিবেশ গড়ে তোলে ব্রিটেন। দীর্ঘ এই সময়ে পদে পদে ইউরোপের সাদা চামড়ার মানুষের কাছে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্থানীয় লোকজন। কফিনের শেষ পেরেকটা মারা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে।

সে বছর দেশটিতে পাস হয় বর্ণবাদ আইন। এই আইনে দক্ষিণ আফ্রিকায় চামড়ার রঙের ভিত্তিতে মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছিল। সংখ্যালঘু সাদা চামড়ার মানুষেরা ছিল সবচেয়ে ওপরের শ্রেণিতে। তাদের নিচে ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, বহুজাতীয় লোকজন ও ভারতীয় শ্রমিকদের বংশধরেরা।  

চরম বৈষম্যের শুরু

১৯৯০ সালের ১১ এপ্রিল দক্ষিণ আফ্রিকার ভিক্টর ভার্সটার কারাগার থেকে মুক্তির পর নেলসন ম্যান্ডেলা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ আফ্রিকায় ইউরোপীয় শাসকদের উত্তরসূরিদের হাত ধরে গড়ে তোলা হয় ন্যাশনাল পার্টি (এনপি)। এই দলটি ১৯৪৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত দেশটিতে ক্ষমতায় ছিল। ১৯৪৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরই তারা বর্ণবাদ আইন জারি করে। এনপি শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী ছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই এর ছায়া পড়েছিল বর্ণবাদ আইনে।

১৯৬০ সালের ২১ মার্চ। সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকার শার্পভিল এলাকায় বর্ণবাদ আইনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিলেন প্রায় সাত হাজার কৃষ্ণাঙ্গ। তাঁদের ওপর নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ। এতে প্রাণ যায় ৬৯ জনের।

এই আইনের ফলে একই দেশের মধ্যে আলাদা করে ফেলা হয় বিভিন্ন বর্ণের মানুষকে। কৃষ্ণাঙ্গদের চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। শহর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের। পঞ্চাশের দশক থেকে প্রায় ৩৫ লাখ কৃষ্ণাঙ্গকে বাধ্য করা হয় শহর ছাড়তে। সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকার ৭০ শতাংশ বাসিন্দার জন্য বরাদ্দ করা হয় মাত্র ১৩ শতাংশ অঞ্চল। এই অঞ্চলগুলো চাষাবাদের মোটেই উপযুক্ত ছিল না।

শহরে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রবেশের কোনো অধিকারই ছিল না। হাতে গোনা কয়েকজন, যাঁরা শহরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন, তাঁদের অনুমতিপত্র সঙ্গে রাখতে হতো। গায়ের রঙের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছিল সরকারি যানবাহন, পার্ক, সমুদ্রসৈকত, সিনেমা হল ও রেস্তোরাঁগুলো। ‘শুধু শ্বেতাঙ্গদের জন্য’ লেখা থাকলে, সেখানে প্রবেশ করতে পারতেন না অন্য বর্ণের কেউ।

শিক্ষাক্ষেত্রেও ছিল বৈষম্য। দেশের সেরা বিদ্যালয়গুলো ছিল শ্বেতাঙ্গদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য। সরকারি অনুদানের সিংহভাগ যেত ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কৃষ্ণাঙ্গসহ অন্যান্য শ্রেণির জন্য খুবই স্বল্প পরিসরে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল একটাই—তারা যেন কখনো ওপরে উঠতে না পারে। সারা জীবন খাটানো যায় শ্রমিক হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও খুবই সীমিত পরিমাণে কৃষ্ণাঙ্গদের ভর্তি করা হতো।

দক্ষিণ আফ্রিকায় সাদা ও কালো চামড়ার মানুষের মধ্য বিয়ে ১৯২৭ সাল থেকেই নিষিদ্ধ ছিল। পরে বর্ণবাদ আইনে তা আরও কঠোর করা হয়। শুধু বিয়েই নয়, শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে অন্য কোনো জনগোষ্ঠীর ভালোবাসার সম্পর্ক থাকলেও শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো। দেওয়া হতো সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। এই আইনের অধীনে সে সময় হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল প্রায় ২০ হাজার মানুষকে।

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ম্যান্ডেলা

রোবেন দ্বীপে এই কারাকক্ষেই দীর্ঘ সময় বন্দী ছিলেন ম্যান্ডেলা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

১৯৯৪ সালের ১০ মে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেলার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়েই বলতে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ আইনের বিলোপ হয়। তবে এই স্বাধীনতা পেতে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে আন্দোলন–সংগ্রাম করেছে দেশটির কৃষ্ণাঙ্গরা। এ সময় ঝরেছে অনেক শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীর রক্ত।

যদিও বর্ণবাদ আইন পাসের আগে থেকেই এর বিরোধিতা শুরু হয়। আইনটির বিরুদ্ধে সে সময় থেকেই রাজপথে নেমেছিল ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)। সোচ্চার হয়েছিল প্যান ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএসি) নামের আরেকটি রাজনৈতিক দলও। তাদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল গণবিক্ষোভ। এসব বিক্ষোভে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার ঘটনাও ঘটে।

যেমন ১৯৬০ সালের ২১ মার্চ। সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকার শার্পভিল এলাকায় বর্ণবাদ আইনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিলেন প্রায় সাত হাজার কৃষ্ণাঙ্গ। তাঁদের ওপর নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ। এতে প্রাণ যায় ৬৯ জনের। আহত হন আরও ১৮০ জন। ওই ঘটনা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে ‘শার্পভিল হত্যাকাণ্ড’ নামে। শার্পভিলের ঘটনার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। আটকে করে রাখা হয় ম্যান্ডেলাকে। নিষিদ্ধ হয় তাঁর দল এএনসি।

এর আগেও ম্যান্ডেলা একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সেটা ১৯৫৬ সালের ঘটনা। সে বছরের ৫ ডিসেম্বর দেশজুড়ে পুলিশি অভিযানের সময় গ্রেপ্তার হন ম্যান্ডেলাসহ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার অনেকে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে করা হয় মামলা। পরে ১৯৬১ সালের ২৯ মার্চ সেই মামলা থেকে খালাস পান ম্যান্ডেলা। এরপর আত্মগোপনে চলে যান। সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর তাঁর দল দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলা চালায়।  

এর মাসখানেক পর ১১ জানুয়ারি গোপনে দেশত্যাগ করেন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষে সমর্থন কুড়াতে যান আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ও যুক্তরাজ্যে। এ সময় মরক্কো ও ইথিওপিয়া থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সে বছরের জুলাইয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিনা পরে ৫ আগস্ট তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। অনুমতি ছাড়া দেশত্যাগ ও শ্রমিকদের উসকে দেওয়ার অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।

এর মাসখানেকের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরের রিভোনিয়া এলাকায় এএনসির একটি গোপন ঘাঁটিতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে দলটির বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ১৯৬৩ সালের ৯ অক্টোবর ম্যান্ডেলাসহ আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা করা হয়। ওই মামলাটি পরিচিত রিভোনিয়া মামলা হিসেবে। এ মামলায় পরের বছর ম্যান্ডেলাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বর্ণবাদবিরোধীদের ওপর নিপীড়নের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার এনপি সরকার। ১৯৫৯ সালে দেশটির ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দেয় জ্যামাইকা। একই পথ ধরে আরও কয়েকটি দেশ। খেলাধুলার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আয়োজনের বাইরেও রাখা হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। এতে একঘরে হয়ে পড়ে প্রিটোরিয়া।

এমনই এক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এফডব্লিউ ডি ক্লার্ক একপ্রকার বাধ্য হয়ে ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দিতে রাজি হন। দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুক্তি দেওয় হয় তাঁকে। মাত্র ৯ দিন আগেই তাঁর দল এএনসির ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এরপর নানা আলাপ–আলোচনার মধ্য দিয়ে ১৯৯৪ সালের ২৭ এপ্রিল আয়োজন করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের। নির্বাচনে জনমানুষের নেতা ম্যান্ডেলা পেয়েছিলেন ৬২ শতাংশের বেশি ভোট।

প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলা

ম্যান্ডের জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই। ১৯৯৪ সালে তিনি যখন প্রেসিডেন্ট পদে বসেছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৭৭ বছর। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসার পরও ম্যান্ডেলা সাধারণ মানুষের পক্ষে কাজ করে গেছেন। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বর্ণবাদে জর্জরিত দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনীতিকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন তিনি।  

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই দক্ষিণ আফ্রিকায় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন প্রকল্প (আরডিপি) চালু করেন ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদের কারণে দেশটিতে যে আর্থসামাজিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, তাঁর সমাধানই ছিল এ প্রকল্পের লক্ষ্য। আরডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মসংস্থান, আবাসন ও স্বাস্থ্য খাতে বিপুল অর্থ খরচ করে ম্যান্ডেলা সরকার।

দীর্ঘদিন বর্ণবাদী পরিবেশের মধ্যে থাকা শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরিতেও তৎপর ছিলেন ম্যান্ডেলা। এ ক্ষেত্রে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন দেশের মানুষের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহকে। ওই সময় দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় রাগবি দলে শুধু শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়েরাই ছিলেন। ফলে দলটির প্রতি ব্যাপক বিদ্বেষ ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের। এই দলের প্রতি সমর্থন জানাতে কৃষ্ণাঙ্গদের আহ্বান জানিয়েছিলেন ম্যান্ডেলা। ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় রাগবি বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়। ওই আয়োজনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিকেরা।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ম্যান্ডেলার ভাষণ শুনতে মানুষের ভিড়
ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ আফ্রিকায় সম–অধিকার ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৬ সালে ম্যান্ডেলা সরকারের তৎপরতায় নতুন সংবিধান প্রণীত হয়। ১৯৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয় ওই সংবিধান। এর মূলনীতি ছিল—১. মানুষের মর্যাদা রক্ষা, মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও সাম্য অর্জন; ২. বর্ণবৈষম্য না করা এবং ৩. সংবিধান ও আইনের শাসনের আধিপত্য। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে ‘গিয়ার’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করেন তিনি।  

ম্যান্ডেলার সরকারের নানা পদক্ষেপ যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছিল, তেমন বিতর্কও পিছু ছাড়েনি। এমনই এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৮ সালে। সে বছর সুইডেন থেকে ২৮টি যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনার কথা জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। তবে ওই অস্ত্র চুক্তি ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে ২০১১ সালে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা অভিযোগ তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে দেন।

১৯৯৯ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন ম্যান্ডেলা। তখন তাঁর বয়স ৮২ বছর। এরপরও ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত থেমে থাকেননি তিনি। কাজ করেছেন বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায়। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য গড়ে তুলেছিলেন তহবিল। মানুষে মানুষে বিভেদ দূর করতে ছুটে বেড়িয়েছেন বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

শেষ করা যাক ম্যান্ডেলার একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে বৈচিত্র্য রয়েছে, তা আমাদের আলাদা করে না। জাতিগত, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক ভিন্নতা আমাদের মধ্যে কোনো ফারাক গড়ে দেয় না। যেদিন আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেদিন থেকে আমাদের মধ্যে শুধু একটি দেয়ালই রয়েছে। দেয়ালটা গণতন্ত্রের পক্ষ ও বিপক্ষের মানুষের মধ্যে।’  

তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা, বিবিসি, সাউথ আফ্রিকা হিস্টোরি ডট ওআরজি