রামাফোসার এএনসির দুর্গে হানা দেবে জুমার এমকে পার্টি

দক্ষিণ আফ্রিকার ২ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার ভোটার আগামীকাল বুধবার দেশটির সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেবেন। জুমার এমকে পার্টির উত্থানে রামাফোসার এএনসি উদ্বেগে।

রামাফোসাছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ আফ্রিকার পাহাড়ি এলাকায় ঘনবসতিপূর্ণ কোয়াজুল-নাতাল প্রদেশের একটি গ্রামে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার নতুন রাজনৈতিক দল উমখুনটো উই সিজ (এমকে) অবিরাম প্রচার চালিয়েছে। জুমার সাবেক রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসকে (এএনসি) হারানোর কোনোরকম প্রচেষ্টাই বাদ রাখেনি তারা।

গতকাল সোমবার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় আগাম ভোট শুরু হয়। তার আগে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোও সেখানে ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্বাচিত একটি স্কুলের বাইরে প্রচারশিবির তৈরি করে দলীয় সংগীত প্রচারের মাধ্যমে আগাম ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার ২ কোটি ৭৭ লাখ ৯০ হাজার ভোটার আগামীকাল বুধবার দেশটির সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেবেন। দক্ষিণ আফ্রিকার এবারের সাধারণ নির্বাচনকে গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৯৯৪ সালে দেশটিতে বর্ণবাদের অবসানের পর থেকে এটি হবে সেখানে সপ্তম গণতান্ত্রিক সাধারণ নির্বাচন। ওই সময় নেলসন ম্যান্ডেলা জাতীয় পরিষদে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এএনসি দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে নেলসন ম্যান্ডেলার উত্তরসূরীদের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা অপেক্ষা করছে। তিন দশকের মধ্যে দলটি প্রথমবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

জ্যাকব জুমার উমখুনটো উই সিজের (এমকে) দলের উত্থানের পর থেকে কোয়াজুল-নাতাল এলাকায় এএনসির উদ্বেগ বেড়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য ইতিমধ্যে কুখ্যাতি অর্জন করা এই এলাকাতে দেশটির নির্বাচনের মূল যুদ্ধক্ষেত্র বলা হচ্ছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের আবেদনের কারণে জ্যাকব জুমাকে আদালত নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন। ২০২১ সালে আদালত অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত এ আদেশ দেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান শহরের পূর্ব দিকে প্রত্যন্ত এলাকা কোয়াসিমবা। এখানে ১৯৯৪ সালের পর থেকে এএনসি শাসন করে চলেছে। কিন্তু এ প্রদেশে জন্মগ্রহণ করা জাতিগতভাবে জুলু সম্প্রদায়ের সন্তান জুমাকে এখানকার মানুষ শ্রদ্ধা করেন। কোয়াসিমবা এলাকার এমকে পার্টির স্থানীয় সমন্বয়কারী থোকোজানি থেম্বু বলেন, ‘আমাদের জীবনে দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিবর্তন প্রয়োজন।’

দেশটির কয়েকটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, কোয়াজুলু-নাতালে অধিকাংশ ভোট এমকে পার্টি পাবে। এতে তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল করতে পারে এএনসি। এ ছাড়া দলটি এবারে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। এতে তাদের জোট সরকার গঠনের পথে হাঁটতে হবে।

থেম্বু দাবি করেন, গত জানুয়ারিতে কোয়াসিমবায় শত শত সমর্থক নিয়ে ৮২ বছর বয়সী জুমা শোভাযাত্রা করার পর এএনসির সমর্থকেরা সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। অনেকে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে বলেন, এমকে সামাজিক সহায়তা মঞ্জুরি ও বিনা মূল্যে বসতবাড়ির সুবিধা তুলে নেবে। অবশ্য এমকে পার্টির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছ এএনসি পার্টি।

কোয়াসিমবাতে এমকে পার্টিকে সমর্থনের কারণ হচ্ছে, সেখানকার বিদ্যুৎ ও পানি সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে এএনসি। এর জন্য এএনসির ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হচ্ছে। একই পরিস্থিতি পুরো দক্ষিণ আফ্রিকায়। এএনসি সরকারের বিরুদ্ধে বেকারত্ব দূর করে ব্যর্থতা, বিদ্যুৎ ঘাটতির মতো নানা অভিযোগে ক্ষুব্ধ ভোটাররা।

গত মাসে কোয়াসিমবা এলাকায় প্রচারে আসেন প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। তিনি ভোটারদের সতর্ক করে বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলগুলো এএনসির সমর্থকদের বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

এবারের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে এএনসিকে জাতীয় পরিষদের ৫০ শতাংশ সমর্থন দেখাতে হবে। আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২৩ হাজার ২৯২ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলবে। নির্বাচনের দিন দেশটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরিবর্তে আনুপাতিক ভোটিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এতে কোন দল কতটি আসনে জিতেছে, সে অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়। এবার প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচন করতে পারছেন। এবারের নির্বাচনে দুটি ব্যালট হবে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের জন্য এবং আরেকটি হবে দক্ষিণ আফ্রিকার ৯টি প্রদেশের প্রতিটিতে প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যদের নির্বাচন করার জন্য।

দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন পরিচালনা সংস্থা আইইসি জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে ৭০টি রাজনৈতিক দল এবং ১১টি স্বতন্ত্রসহ ১৪ হাজার ৮৮৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

বর্তমানে দেশটির পার্লামেন্টে ৪০০ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন ২৩০টি রয়েছে এএনসির। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন বা দেশটির বিরোধী দল হচ্ছে ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স। তাদের আসন ৮৪টি। এর বাইরে ইকোনমিক ফ্রিডম ফাইটার্সের আসন ৪৪টি। ইনকাথা ফ্রিডম পার্টির আসন ১৪টি। অন্য ১০টি দলের ২৮টি আসন রয়েছে।

জনমত জরিপ অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে নতুন রাজনৈতিক দল এমকে পার্টি এএনসির বেশ কিছু আসন পাবে। কিন্তু তারপরও এএনসি যদি ৫০ শতাংশ আসন বা ২০১টি আসন পায়, তবে সিরিল রামাফোসা দ্বিতীয় মেয়াদে আবার পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। কিন্তু জনমত জরিপে তাদের ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালেও জোট সরকার গঠন করে ক্ষমতায় আসতে পারবে এএনসি।