তুরস্কের ড্রোন কেন কিনছে আফ্রিকার দেশগুলো

তুরস্কের ড্রোন বাইরাকটার টিবি২ কিনছে আফ্রিকার অনেক দেশরয়টার্স ফাইল ছবি

আফ্রিকার দেশগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য এখন তুরস্কের ড্রোন বেশি কিনছে। বিশ্বে দেশে দেশে যুদ্ধ ও সংঘাতে এই ড্রোনগুলো কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে আফ্রিকাবিষয়ক বিশ্লেষক পল মেলি এমনটা তুলে ধরেছেন।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউক্রেন তুরস্কের বাইরাকটার টিবি২ ড্রোন মোতায়েন করেছিল। পশ্চিমা অস্ত্র পৌঁছানোর আগে এই অস্ত্র দিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তোলে ইউক্রেন।

আজারবাইজানে আর্মেনিয়ার সশস্ত্র বাহিনীকে পরাজিত করতে তুরস্কের এই ড্রোন কার্যকর হয়েছে। ২০২০ সালে নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়ায় সঙ্গে চলা যুদ্ধে এই ড্রোন ব্যবহার করে আজারবাইজান। তবে এই ড্রোনের সক্ষমতা নিয়ে কেবল ইউরোপের পূর্বাঞ্চল ও ককেশাস অঞ্চলে আলোচনা হয়নি।

সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ টোগোতে বাইরাকটার টিবি২ ড্রোনের চালান পাঠানো হয়েছে। এই ড্রোনের মাধ্যমে বুরকিনা ফাসো থেকে দক্ষিণে বিদ্রোহীদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো হচ্ছে।

গত মে মাসে নাইজার বহুমুখী ও সাশ্রয়ী এরকম ছয়টি বাইরাকটার টিবি২ ড্রোন কিনেছে। এই ড্রোনগুলো সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে ও লেক চাদ অববাহিকার অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীদের ঠেকাতে পরিচালিত সামরিক অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছে। ইথিওপিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া ও অ্যাঙ্গোলার মতো আফ্রিকার অন্য দেশগুলোও এ ধরনের ড্রোন কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

ড্রোনকে কেন্দ্র করে আঙ্কারাও লাভবান হচ্ছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম লক্ষ্য হলো সামরিক অংশীদারত্ব।

তবে এই নজরদারি ড্রোন প্রথমবারের মতো ব্যবহার করেছে জাতিসংঘ স্বীকৃত লিবিয়ার সরকার। ২০১৯ সালের প্রথমদিকে ত্রিপোলিতে পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের ঠেকাতে এই ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো এই ড্রোন সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে কিনতে আগ্রহী হয়েছে। এই ড্রোন পরিচালনার জন্য খুব বেশি প্রশিক্ষিত বাহিনীরও প্রয়োজন পড়ে না।

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সক্রিয় রয়েছে। তাদের দমনে উঁচু–নিচু পথ এবং প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে দিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোতে সামরিক অভিযান চালানো হয়।

আফ্রিকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান
রয়টার্স ফাইল ছবি

নাইজারের সেনাবাহিনীকে বুরকিনা ফাসো ও মালি সীমান্তে অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্সের হামলা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলকে রক্ষা করতে সরকারি বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে।

টোগোতেও জঙ্গি হামলার হুমকি রয়েছে। গত কয়েক বছরে সশস্ত্র দলগুলো বুরকিনা ফাসোর বেশির ভাগ এলাকা ও সীমান্তবর্তী চার দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালের শেষদিকে নিরাপত্তাবাহিনী টোগোর উত্তরাঞ্চলে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ শনাক্ত করে।
শুরুর দিকে জঙ্গিরা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সাময়িক বিশ্রামের জন্য ঢুকত, তবে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় পরবর্তী সময়ে জঙ্গিদের উত্থান নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়।

আইভরি কোস্টের গ্র্যান্ড বাশাম শহরের একটি রিসোর্টে জঙ্গি হামলায় ২০১৬ সালে ১৯ জন নিহত হয়। ২০২০ সালে উত্তর পূর্বাঞ্চলে জঙ্গিদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়।

এ ছাড়া বেনিনে একটি পার্কে জঙ্গিরা ফ্রান্সের দুই পর্যটককে অপহরণ করেন। এতে স্থানীয় একজন নিহত হন। বুরকিনা ফাসোতে সীমান্তের নিকটবর্তী অঞ্চলে পর্যটকদের উদ্ধার অভিযানে ফ্রান্সের দুই সেনাও নিহত হন।

টোগোতেও এ বছরের মে মাসে সেনাবাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে জঙ্গি হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হন। এ ধরনের হামলা প্রতিরোধ করতেই টোগো, নাইজারের মতো দেশগুলোয় তুর্কি ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ ধরনের ড্রোনের ব্যবহার টোগো ও নাইজারের জন্য রাজনৈতিকভাবেও সুবিধাজনক। এতে নিরাপত্তার জন্য ফ্রান্সের ওপর থেকে দেশ দুটির নির্ভরতা কমবে। টোগো ও নাইজার ফ্রান্সের সাবেক উপনিবেশ ছিল।

ড্রোনকে কেন্দ্র করে আঙ্কারাও লাভবান হচ্ছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম লক্ষ্য হলো সামরিক অংশীদারত্ব। এ ছাড়া বাইরাকটার টিবি২ ড্রোনের প্রস্তুতকারী বাইকারের প্রধান দুই ভাই। তাঁরা হলেন—প্রধান নির্বাহী হালুক বাইরাকটার ও তাঁর ভাই সেল উক। তিনি প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা। সেল উক আবার এরদোয়ানের মেয়ে এস মেয়ের স্বামী।