আলেকজান্দ্রিয়ার উপকূলে পাওয়া গেল ২ হাজার বছর আগের প্রমোদতরি

মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরের উপকূলে পাওয়া গেছে ২ হাজার বছর আগের একটি প্রমোদতরীর ধ্বংসাবশেষছবি: দ্য গার্ডিয়ানের সৌজন্যে

প্রাচীন মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া। হাজার হাজার বছর আগে শহরটিতে ছিল তাক লাগানো সব প্রাসাদ আর মন্দির। সবচেয়ে নজরকাড়া ছিল ১৩০ মিটার লম্বা ফারোস বাতিঘর—প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি। একধরনের প্রমোদতরির কথাও লিখে গেছেন ইতিহাসবিদেরা। এবার সেই প্রমোদতরির ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া গেছে আলেকজান্দ্রিয়ার উপকূলে।

প্রমোদতরিটি লম্বায় ৩৫ আর চওড়ায় ৭ মিটার। থাকত ২০ জনের বেশি মাল্লা। মাঝে একটি কক্ষ। সেটির নকশা ও কারুকাজে বিলাসিতার ছোঁয়া। মিসরের আন্তিরহোদোস দ্বীপের কাছে—সমুদ্রের মাত্র সাত মিটার গভীরে মাটিচাপা পড়ে ছিল প্রমোদতরিটি। দ্বীপটি এখন আর সাগরের ওপরে নেই, তলিয়ে গেছে বহু আগে। একসময় আলেকজান্দ্রিয়ার একটি বন্দর ছিল এই দ্বীপ।

এই প্রমোদতরির কথা দুই হাজার বছর আগেই লিখে গিয়েছিলেন গ্রিক ইতিহাসবিদ স্ট্রাবো। খ্রিষ্টপূর্ব ২৯ থেকে ২৫ সালের মধ্যে আলেকজান্দ্রিয়া সফর করেছিলেন তিনি। তাঁর লেখায় উঠে এসেছে—বিলাসবহুল এই প্রমোদতরিগুলো অবকাশযাপনের জন্য ব্যবহার করতেন মিসরের রাজদরবারের সদস্যরা। নেচে, গেয়ে, বাজনা বাজিয়ে বিভিন্ন উৎসবে যোগ দিতেন তাঁরা।

প্রাচীন নানা শিল্পকলাতেও এই প্রমোদতরি দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র প্রত্নতত্ত্বের অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক গোডিও। যেমন প্রাচীন রোমের প্যালেস্ট্রিনা মোজাইকের ওপর আঁকা চিত্রকর্ম। সেখানে ঠিক এমন ধরনের একটি নৌযান রয়েছে। আলেকজান্দ্রিয়ার প্রমোদতরির চেয়ে কিছুটা ছোট ওই নৌযানে করে একজন বীরকে জলহস্তী শিকার করতে দেখা যায়।

সাগরের তলদেশ থেকে প্রমোদতরিটি আবিষ্কার করেছে ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট ফর আন্ডারওয়াটার আর্কিওলজির (আইইএএসএম) একটি দল। তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক গোডিও। তিনি বলেন, আলেকজান্দ্রিয়ার এই প্রমোদতরিটি খুঁজে পাওয়াটা খুবই সাড়া জাগানো একটি ব্যাপার। কারণ, এত দিন এটির কথা শোনা গেলেও এই প্রথম তা খুঁজে পাওয়া গেল।

যেখানে প্রমোদতরিটির খোঁজ পাওয়া গেছে, তার ৫০ মিটারের মধ্যে প্রাচীন মিসরীয় দেবী আইসিসের মন্দির ছিল। অধ্যাপক গোডিও মনে করেন, ৫০ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি ধ্বংস হওয়ার সময় প্রমোদতরিটি ডুবে গিয়েছিল। সে সময় একাধিক ভূমিকম্প হয়েছিল। আলেকজান্দ্রিয়ার উপকূলে আছড়ে পড়েছিল জলোচ্ছ্বাস। এতে আন্তিরহোদোস দ্বীপসহ উপকূলের বড় অংশ পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল।

প্রমোদতরিটিতে গ্রিক ভাষায় লেখা কিছু গ্রাফিতি পাওয়া গেছে বলে জানান অধ্যাপক গোডিও। তিনি বলেন, সেটির ধ্বংসাবশেষ নিয়ে গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে এ গবেষণা যতই সামনের দিকে এগোবে, ততই রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা মিসরের জীবনাচার, ধর্ম, বিলাসিতা ও আমোদ–প্রমোদ সম্পর্কে নিত্যনতুন তথ্য জানা যাবে।