ইথিওপিয়ার তাইগ্রে সংকট: সেনাদের আত্মসমর্পণে ৭২ ঘণ্টা সময় দিলেন প্রধানমন্ত্রী

তাইগ্রের সংঘর্ষে অনেক শিশু ঘরছাড়া হয়েছে
ছবি: এএফপি

ইথিওপিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত তাইগ্রের সেনাদের আত্মসমর্পণের জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। দেশটির সরকারি সেনা তাইগ্রের রাজধানী মেকেলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ইথিওপিয়ার তাইগ্রে অঞ্চলের প্রধান রাজনৈতিক দল তাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের (টিপিএলএফ) সঙ্গে সরকারি বাহিনীর লড়াই চলছে।

ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ তাইগ্রের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘তারা এমন এক জায়গায় আছে, যেখান থেকে ফেরার পথ নেই।’

এদিকে তাইগ্রের পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রাখা টিপিএলএফ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহের এ লড়াই কয়েক শ লোক মারা গেছে এবং হাজারো মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, ইথিওপিয়ায় চরম মানবিক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

ইথিওপিয়া সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আত্মসমর্পণ না করলে কোনো দয়া দেখানো হবে না।

টিপিএলএফের নেতা ডেব্রেটসিয়ন জেরবাইমাইকেল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তাঁর সেনারা আগুয়ান সরকারি বাহিনীকে আটকাতে সমর্থ হয়েছে। সরকারি সেনারা একের পর এক আক্রমণ করেছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

ইথিওপিয়ার সরকার বলছে, গত সপ্তাহে তারা তাইগ্রের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঞ্চল দখলে নিয়েছে। অবশ্য এ তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ওই অঞ্চলে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

গতকাল রোববার টিপিএলএফের নেতাদের উদ্দেশে আবি আহমেদ বলেন, ‘আপনাদের ধ্বংসের যাত্রা শেষ হতে চলেছে। আমরা আপনাদের আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাচ্ছি। আপনারা এমন এক অবস্থায় আছেন, যেখান থেকে ফেরার কোনো পথ নেই। শেষ সুযোগ নিন।’

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, যেসব অঞ্চলে সংঘর্ষ ছড়িয়েছে, সেখানে তাদের যাওয়ার কোনো পথ নেই। তারা দ্রুত মানবিক করিডর স্থাপন করতে চায়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবি আহমেদ ক্ষমতায় আসার পর আফ্রিকার এই দেশে রাজনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন শুরু করেন। প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দুই দশক ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটে তাঁরই হাত ধরে। ফলে ক্ষমতায় আসার মাত্র এক বছরের মাথায় নোবেল শান্তি পুরস্কার পান আবি।

প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আবি আহমেদ প্রশংসিত হলেও নিজ দেশের উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চল তাইগ্রেতে শান্তি ফেরাতে তেমন পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ। উল্টো ব্যাপক রাজনৈতিক সংস্কারের নামে তাইগ্রের অধিবাসীদের কোণঠাসা করে ফেলেন বলে অভিযোগ ওঠে আবির বিরুদ্ধে।

এ ঘটনা ইথিওপিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বজায় রাখা টিপিএলএফ পার্টির সঙ্গে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধ উসকে দেয়। শুরু হয় টিপিএলএফের বাহিনীর সঙ্গে ইথিওপিয়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘাত।