করোনা অব্যবস্থাপনা: সহিংস বিক্ষোভের পর তিউনিসিয়ার প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত

হিসেম মিসিসি।
ছবি: রয়টার্স

করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের অব্যবস্থাপনার জেরে সহিংস বিক্ষোভের পর তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছেন। এ ছাড়া তিনি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন পার্লামেন্ট। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের অব্যবস্থায় তিউনিসিয়ার সাধারণ জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। এই ক্ষোভ থেকে গতকাল রোববার তিউনিসিয়ার রাজপথে নেমে আসেন হাজারো বিক্ষোভকারী। দেশজুড়ে এই বিক্ষোভকালে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হন।

সহিংস বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট কায়েস সাঈদ তাঁর বাসভবনে জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক করেন। পরে তিনি টেলিভিশনে ভাষণ দেন। তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেম মিসিসিকে বরখাস্তের ঘোষণা দেন।

কায়েস বলেন, তিউনিসিয়ার সামাজিক স্থিতিশীলতা-শান্তি ফিরিয়ে আনা, দেশকে রক্ষা করার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় কাজ করবেন। দেশে শান্তি-স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে চান তিনি। একই সঙ্গে দেশটির পার্লামেন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে হিসেম গত সপ্তাহে তিউনিসিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছিলেন। কিন্তু তারপরও জনরোষ কমেনি। এখন তাঁকেই বরখাস্ত হতে হলো।

হিসেমকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করার খবর আসার পর গতকাল গভীর রাতে বিক্ষোভকারীরা উল্লাস প্রকাশ করেন।

তবে দেশটির বিরোধীরা প্রেসিডেন্ট কায়েসের নেওয়া পদক্ষেপকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, গতকাল রাজধানী তিউনিসসহ তিউনিসিয়ার বিভিন্ন শহরে হাজারো বিক্ষোভকারী দেশটির ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা দলটির উদ্দেশে ‘বিদায় হও, বিদায় হও’ বলে স্লোগান দেন। তাঁরা পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ারও দাবি তোলেন।

বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ করে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। অনেক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিক্ষোভকালে দেশটির বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সহিংস সংঘর্ষ হয়।

বিক্ষোভকারীরা দেশটির ক্ষমতাসীন দলের একাধিক কার্যালয়ে হামলা চালায়। কার্যালয় ভাঙচুর করে। এমনকি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

দেশটির ক্ষমতাসীন এনহাদা পার্টি তাদের কার্যালয়ে হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এই হামলার জন্য তারা দুর্বৃত্তদের দায়ী করেছে। তারা বলেছে, যারা দেশে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা-ধ্বংস ডেকে আনতে চায়, তারাই এই হামলা চালিয়েছে।

সহিংসতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট কায়েস। ভবিষ্যতে সহিংসতা হলে তা সেনাবাহিনী দিয়ে মোকাবিলা করা হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।

কায়েস বলেন, যে বা যারাই অস্ত্র ব্যবহার করার কথা ভাবছ, যে-ই গুলি চালাক না কেন, তাদের তিনি সতর্ক করে দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী গুলি করবে।

১০ বছর আগে তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন দাবি থেকে বিপ্লব হয়। তিউনিসিয়ার সেই বিপ্লব আরব বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে, যা আরব বসন্ত নামে পরিচিত।

বিপ্লবের এক দশক পরেও তিউনিসিয়া গভীর অর্থনৈতিক সংকটে। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়।