‘দুর্নীতির খবর তুলে ধরায় দেড় মাস জেল খেটেছি’

প্রতীকী ছবি

‘গত ২০ জুলাই সকালে আমার বাড়ির ফটকে এসে থামল নামফলকবিহীন একটি গাড়ি। তাতে ছিলেন আটজন। কারও কারও সঙ্গে ছিল একে-৪৭ রাইফেল। দেখে মনে হচ্ছিল, ঝামেলায় পড়তে চলেছি। তবে আমি বিস্মিত হইনি।’

‘এর প্রায় সাত সপ্তাহ আগে এক সকালে আমি একটি সতর্কবার্তা পেয়েছিলাম। জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন দলের মুখপাত্র আমাকে “নির্লজ্জ” বলে গালি দিয়ে প্রেসিডেন্ট পরিবারের সম্মান নষ্ট করার জন্য অভিযুক্ত করেন।’

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিভিন্ন সামগ্রী কেনাকাটা নিয়ে লাখ লাখ ডলারের এক কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দেড় মাস জেল খাটা জিম্বাবুয়ের সাংবাদিক হপওয়েল চিনোনোর দুঃসহ স্মৃতির অংশবিশেষ এটি। খবর বিবিসির।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক বলেন, দুর্নীতির ওই খবর প্রকাশের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পদচ্যুত করা হয়। এখন অভিযোগ মোকাবিলা করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। যখন সরকারি এজেন্টরা আমাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে বললেন, তখন আমি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখতে চাই। কিন্তু তাঁরা তা দেখাতে পারেননি। এরপর তাঁরা বন্দুক দিয়ে আঘাত করে আমার খাবার ঘরের কাচের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়েন শয়নকক্ষে। তাঁদের এভাবে ঘরে ঢোকার দৃশ্য আমি মুঠোফোনে ধারণ করে সরাসরি সম্প্রচার করছিলাম।

আমাকে শোবার ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে ওই ভাঙা কাচের ওপর দিয়েই নিয়ে যান এজেন্টরা। আর সেই সঙ্গে শুরু আমার ৪৫ দিনের দুঃস্বপ্নের। অবশ্য এ দুঃস্বপ্নের সঙ্গী আমি একা ছিলাম না। একই দিন জ্যাকব এনগারিভুম নামের এক রাজনৈতিক কর্মীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। আমাদের দুজনের বিরুদ্ধেই সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

হারারের সেন্ট্রাল রিমান্ড জেলে ঢোকানোর পর আমাদের সঙ্গে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা নেলসন চামিসা দেখা করতে আসেন। এর পরদিনই আমাদের একটি ট্রাকে তুলে কুখ্যাত চিকুরুবি ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি প্রিজনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ কারাগারে দাগি অপরাধীরা থাকতেন। কারাপ্রকোষ্ঠ থেকে বের হতে তাঁদের পায়ে লোহার বেড়ি ও হাতে হাতকড়া পরানো হতো। কারাগারের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৩৬০ জন হলেও রাখা হতো দ্বিগুণ বন্দী।

১৬ জনের জন্য নির্ধারিত একটি কক্ষে আমার ঠাঁই হলেও থাকতে হয়েছে আরও ৪৪ জনের সঙ্গে। যখন আমরা ঘুমাতাম, তখন পাশ ফেরার কোনো জায়গা থাকত না। এমন একটি সময় আমাকে এভাবে রাখা হয়েছে, যখন কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। বন্দীদের জন্য ছিল না কোনো মাস্ক, কলের পানি বা সাবান। শুধু দিনের বেলা শৌচাগার ব্যবহারের সুযোগ ছিল। তা-ও ৫০০ বন্দীর জন্য মাত্র ২টি। সেখানেও ছিল না কলের পানি।