নাইজেরিয়ায় অপহৃত সাড়ে তিন শ স্কুলছাত্র উদ্ধার

নাইজেরিয়ার ক্যাটসিনা রাজ্যের ক্যানকারা জেলায় এই স্কুলে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরাছবি: রয়টার্স

নাইজেরিয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠী বোকো হারামের হাতে অপহৃত এক বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে গত বৃহস্পতিবার উদ্ধার করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, গোষ্ঠীটির হাতে এখনো কোনো শিক্ষার্থী আটকে আছে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এএফপির খবর।

এর দুদিন আগে গত মঙ্গলবার অন্তত ১৭ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। সে দিনের উদ্ধার অভিযানকালে দুই শিক্ষার্থী মারা যায়।

গত শুক্রবার রাতে ক্যাটসিনা রাজ্যের ক্যানকারা এলাকার গভর্নমেন্ট সায়েন্স সেকেন্ডারি স্কুল নামের ওই বিদ্যালয়ে অতর্কিতে হামলা চালান মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন বন্দুকধারী। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের বন্দুকযুদ্ধ হয়। বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে বিদ্যালয়টির ৮ শতাধিক শিক্ষার্থীর প্রায় অর্ধেক বিদ্যালয়ের হোস্টেল ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল তারা।

বোকো হারাম এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। এর আগে ২০১৪ সালে অনুরূপ একটি ঘটনায় এই গোষ্ঠী ২৭৬ জন স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করেছিল। এবার টানা ছয় দিন অভিযান চালিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অপহৃত প্রায় সব শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।

বৃহস্পতিবার বোকো হারামের প্রকাশ করা একটি ভিডিও বার্তায় অপহৃত এক শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়, ৫২০ জন শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে।

ক্যাটসিনা রাজ্যের গভর্নর আমিনু বেল্লো মাসারি বলেন, ৩৪৪ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের ক্যাটসিনা শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এনটিএকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তাঁরা ধারণা করছেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থী উদ্ধার হয়েছে। সবাইকে এখনো উদ্ধার করা যায়নি। পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আগে উদ্ধার শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।

বর্তমানে দেশের উত্তর–পশ্চিমাঞ্চল বুহারি সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সীমান্ত বন্ধ থাকার পরও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সদস্য ও সন্ত্রাসীদের অস্ত্রশস্ত্র হাতে পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক।
গার্বা সেহু, প্রেসিডেন্ট বুহারির মুখপাত্র

অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের এ ঘটনা গোটা দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিরাট স্বস্তির খবর বলে টুইটারে লিখেছেন নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি।

এদিকে বৃহস্পতিবার বোকো হারামের প্রকাশ করা একটি ভিডিও বার্তায় অপহৃত এক শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়, ৫২০ জন শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে। এ দিন নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, অপহৃত শিশুর সঠিক সংখ্যা বলতে পারছেন না কেউ। অপহরণের পর এই শিশুদের ক্যাটসিনা রাজ্যের কাছে ইয়াংকারা ও জামফারায় নিয়ে যাওয়া হয়। সূত্রটি আরও বলেছে, ঠিক কতজন এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে, তা–ও পরিষ্কার নয়।

প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র গার্বা সেহু টুইটারে লিখেছেন, বর্তমানে দেশের উত্তর–পশ্চিমাঞ্চল বুহারি সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সীমান্ত বন্ধ থাকার পরও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সদস্য ও সন্ত্রাসীদের অস্ত্রশস্ত্র হাতে পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক।

অপহৃত হওয়া শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবক বলেছেন, ক্যানকারা অঞ্চলে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এমন হামলার আশঙ্কা করছিলেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী, নাইজেরিয়ার উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে ২০১১ সাল থেকে চলা সহিংসতায় ৮ হাজারের মতো লোক নিহত হয়েছেন।

গত রোববার জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা স্কুলশিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং তাদের দ্রুত ও শর্তহীন মুক্তি দিয়ে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের সহিংসতা খুবই উদ্বেগজনক। বিদ্যালয়ে হামলা শিশুদের অধিকারের লঙ্ঘন।