নাইজেরিয়ায় বিক্ষোভে গুলি, ১২ জনের প্রাণহানির খবর

নাইজেরিয়ার লাগোস শহরের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন বিক্ষোভকারীরা
ছবি: রয়টার্স

নাইজেরিয়ায় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার এ ঘটনায় অনেকে হতাহত হয়েছেন। দেশটির সবচেয়ে বড় শহর লাগোসে পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালে এই গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। বিবিসি আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম বলেছে, গুলিতে ১২ জনের মতো নিহত এবং আরও অনেকে হতাহত হয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সেখানে বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানির বিষয়ে তারাও নির্ভরযোগ্য তথ্য পেয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী এমন খবর নাকচ করে দিয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, নাইজেরিয়ার পুলিশের বিশেষ ইউনিট স্পেশাল অ্যান্টি-রোবারি স্কোয়াডের (সারস) বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে লোকজনকে অবৈধভাবে আটক, নাজেহাল করা, এমনকি গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এটি বিলুপ্ত করার দাবিতে দুই সপ্তাহের বেশি আগে বিক্ষোভ শুরু হয়। এ অবস্থায় ১১ অক্টোবর এই বাহিনী বিলুপ্তও করে সরকার। তবে বিক্ষোভকারীরা নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীতে আরও পরিবর্তনের পাশাপাশি দেশটির শাসনব্যবস্থায়ও সংস্কার আনার দাবি তোলেন। বিক্ষোভ দমাতে লাগোস এবং আরও কয়েকটি অঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ২৪ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউ উপেক্ষা করে গতকাল লাগোসের লেক্কি টোলপ্লাজা এলাকায় জড়ো হন একদল বিক্ষোভকারী। ওই স্থানেই গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

বিক্ষোভকারীদের ওপরে গুলিবর্ষণের নিন্দা জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি বিক্ষোভকারীদের এভাবে হত্যা বন্ধ করতে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি এবং সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলোয়াড় এবং নাইজেরিয়ার ফুটবলার ওডিওন জুডে ইগহালো অভিযোগ করে বলেছেন, নাইজেরিয়ার সরকার তার নিজের নাগরিকদের হত্যা করছে। টুইটারে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে জুডে বলেন, ‘এই সরকারের কর্মকাণ্ডে আমি লজ্জিত।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ঘটনার সময় কী ঘটেছিল, তার একটা বিবরণ মেলে। তাঁরা বলেছেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে ছোট একদল বিক্ষোভকারী লেক্কি টোলপ্লাজার সামনে জড়ো হন। তাঁদের ওপরে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করেন উর্দি পরা লোকজন। গুলিবর্ষণ শুরুর কিছুক্ষণ আগে ওই স্থানটা ঘিরে ফেলেন সশস্ত্র সেনাসদস্যরা।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে আহত ব্যক্তিদের সেবাশুশ্রূষা করছেন বিক্ষোভকারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসি নিউজকে বলেন, গুলিবর্ষণ শুরু হয় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটার কিছু আগে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের দিকে বন্দুক সরাসরি তাক করে গুলি ছোড়েন সেনাসদস্যরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে গুলিবর্ষণ চলে। পরে মৃতদেহগুলো সরিয়ে নিয়ে যান সেনাসদস্যরা। তাঁরা ঘটনাস্থল ঘিরে রাখায় অ্যাম্বুলেন্স সেখানে যেতে পারেনি।

ওই স্থানে গুলিবর্ষণের কথা অস্বীকার করেনি নাইজেরিয়ার কর্তৃপক্ষ। অবশ্য তারা বলেছে, গুলিতে কয়েকজন শুধু আহত হয়েছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রিমিয়াম টাইমস পত্রিকা বলেছে, ঘটনাস্থলে ১২ জনের মতো নিহত হয়েছেন।

প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাটির নাইজেরিয়া শাখা টুইটারে বলেছে, তারা লাগোসের লেক্কি টোলপ্লাজা এলাকায় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং এর ফলে অনেকের মৃত্যুর বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পেয়েছে। পরে সংস্থাটির মুখপত্র ইসা সানুসি বলেন, ‘ওই টোলফটকে লোকজনে গুলি করে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। ...ঠিক কতজনের প্রাণহানি হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে আমরা কাজ করছি।’

ঘটনার বিষয়ে টুইটারে একটি বার্তা দিয়েছেন লাগোস প্রদেশের গভর্নর জিবয়েগা আকোসিলি। তিনি দাবি করেছেন, বিক্ষোভের ছদ্মবেশে অপরাধীরা সংগঠিত হচ্ছিল। তারা দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধিয়ে নিরপরাধ নাগরিকদের ক্ষতি করছিল। তা থামাতেই কারফিউ দেওয়া হয়। এর মধ্যেই লেক্কি টোলপ্লাজার কাছে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী ঘটনার বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে টুইটারের কয়েকটি পোস্টে বলা হয়, সেনাবাহিনী গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোকে ‘ভুয়া খবর’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।