মাদাগাস্কারে খিদের জ্বালায় মানুষ পোকা খাচ্ছে: বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি

দক্ষিণ মাদাগাস্কারে খরা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে ওই অঞ্চলের মানুষ এখন ক্ষুধার জ্বালায় পোকামাকড়ও খাচ্ছেছবি: ডব্লিউএফপির সৌজন্যে

দক্ষিণ মাদাগাস্কারে খরা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বছর কয়েক ধরে টানা এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে সেখানকার অধিবাসীদের। ধারাবাহিক খরার কারণে দক্ষিণ মাদাগাস্কারে এরই মধ্যে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছে যে ওই অঞ্চলের মানুষ এখন ক্ষুধার জ্বালায় পোকামাকড়ও খাচ্ছে।

গত শুক্রবার জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। তাতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ মাদাগাস্কারের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছে। দুর্ভিক্ষের কবলে পড়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এর মধ্যে বেশির ভাগ পরিবারের সদস্যরা এখন খিদে মেটাতে পোকামাকড় খেতে বাধ্য হচ্ছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা নির্ধারণে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তা প্রায় তিন গুণ বেড়ে গেছে। খাবারের অভাবে নারী ও শিশুরা অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় পড়ে গেছে।

ডব্লিউএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদাগাস্কারের শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধির হার খুব কম। দেশটির পাঁচ বছরের কম বয়সী মোট শিশুর প্রায় অর্ধেক অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

জেনেভায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মুখপাত্র টমসন ফিরি বলেন, সেখানে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সঙিন হচ্ছে। ফলে পরিবারগুলোর অবস্থাও খারাপ হচ্ছে, তারা সংকটে পড়ছে। তাদের বেশির ভাগই পোকামাকড় খাচ্ছে। অর্থের জন্য জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তারা বিক্রি করে দিচ্ছে।

বলা হচ্ছে, টানা তিন বছর ধরে দক্ষিণ মাদাগাস্কারে ফসলের উৎপাদন আশানুরূপ হয়নি। এতে করে সেখানকার প্রায় ১০ জেলাতে খাদ্যদ্রব্যের সংকট দেখা দিয়েছে এবং স্থানীয় মানুষ ব্যাপকভাবে ভুগছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে অভিহিত করেছে।

দক্ষিণ মাদাগাস্কারের আমবোয়াসারি জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলছে, ওই জেলায় চালানো মূল্যায়ন অনুযায়ী সেখানকার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ শিশু স্কুল থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে। মূলত খাদ্য উৎপাদনে পরিবারকে সাহায্য করতেই তাদের স্কুল থেকে ঝরে পড়তে হয়েছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি আরও জানিয়েছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে আমবোয়াসারি জেলায় সংস্থাটি খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে। এরই মধ্যে এক লাখের বেশি মানুষকে এভাবে সাহায্য করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে, দক্ষিণ মাদাগাস্কারে খাদ্যসহায়তা চালিয়ে যেতে ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার প্রয়োজন।