মুসেভিনির জয় এবারও ঠেকানো গেল না

উগান্ডায় বৃহস্পতিবার ভোট অনুষ্ঠিত হয়
ছবি : রয়টার্স

উগান্ডার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টানা ষষ্ঠবারের মতো জিতলেন ইউয়ারি মুসেভিনি। নির্বাচন কমিশন গতকাল শনিবার তাঁর এই জয় নিশ্চিত করেছে। ৩৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন তিনি। তবে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক পপ স্টার ববি ওয়াইন নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন। খবর এএফপির।

৭৬ বছর বয়সী মুসেভিনি প্রথম ১৯৮৬ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আফ্রিকার বর্তমান প্রেসিডেন্টদের একজন তিনি। সম্প্রতি দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর মধ্যে গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনটি ছিল সবচেয়ে সহিংস।

নির্বাচন কমিশন জানায়, প্রেসিডেন্ট মুসেভিনি ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ববি ওয়াইন (৩৮) পেয়েছেন ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট। নির্বাচনে মুসেভিনির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১১ জন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে উগান্ডায় সহিংসতায় কয়েক ডজন লোক প্রাণ হারিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোটের দিন সবচেয়ে ভয়াবহ নির্বাচনী সহিংসতা হয়। সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হন অনেক বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী। কেন্দ্রগুলোতে ভোট পর্যবেক্ষণেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকালে কামপালায় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য নিজ বাসভবনে ছিলেন ববি ওয়াইন। তাঁর দল বলেছে, তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। তবে সরকার বলেছে, তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। গতকাল ভোটের প্রাথমিক ফলাফল আসতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে ববি বলেছিলেন, সেনারা তাঁর বাড়ি ঘেরাও করেছে। ঢুকেছে বাড়ির ভেতরেও। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘অনুপ্রবেশকারী সেনাসদস্যরা আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন না। আমরা কঠিন সমস্যায় আছি।’ তবে সরকারের একজন মুখপাত্র অভিযোগ করেন, ববি লোকজনের সহানুভূতি কাড়তে ঘটনা নিয়ে নাটক সাজাচ্ছেন।

এর আগে নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন ববি। তাঁর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, তিন দিন ধরে ইন্টারনেট–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকায় ভোটের ওপর আস্থা নষ্ট হয়েছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে উগান্ডায় সহিংসতায় কয়েক ডজন লোক প্রাণ হারিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোটের দিন সবচেয়ে ভয়াবহ নির্বাচনী সহিংসতা হয়। সহিংসতায় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হন অনেক বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মী। কেন্দ্রগুলোতে ভোট পর্যবেক্ষণেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

প্রেসিডেন্ট মুসেভিনি বলেছেন, দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দাঁড়িয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ববি বলেন, তিনি বিশ্বের নবীনতম রাষ্ট্রটিতে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

বিরোধীদলীয় প্রার্থী ববি বলেন, ‘নির্বাচনে অনিয়ম করতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার ও আমার স্ত্রীর ফোন নম্বরসহ আমাদের কয়েকটি ফোন নম্বর অবৈধভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

অবশ্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান সিমন বাইবাকামা বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ববি নির্বাচনে জালিয়াতির যে অভিযোগ করেছেন তার সপক্ষে প্রমাণ দেওয়ার জন্য তাঁর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

১৯৯০ সালের দিকে আফ্রিকার প্রায় কোনো দেশেরই প্রেসিডেন্ট কত দিন ক্ষমতায় থাকবেন, তার মেয়াদ নির্ধারিত ছিল না। এরপর মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ছেড়ে নজির স্থাপন করেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতন্ত্রের ওই ঢেউয়ে আফ্রিকার প্রায় ৫০টি দেশে নতুন সংবিধান পাস হয়। এর মধ্যে ৩০টি সংবিধানে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এখন কাগজে–কলমে আফ্রিকার এক-তৃতীয়াংশ দেশেই এ মেয়াদ নির্ধারিত আছে। কিন্তু অনেক নেতাই এ নিয়ম মানতে চাইছেন না। উগান্ডা ২০০৫ সালে ওই আইন বাতিল করে এবং ২০১৭ সালে বয়সের বাধার নিয়মও তুলে দেয়।