মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড়ে হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা

মোজাম্বিকের বেইরায় বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। লোকজন বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছে। ছবি: এএফপি
মোজাম্বিকের বেইরায় বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। লোকজন বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছে। ছবি: এএফপি

ঘূর্ণিঝড় ‘ইদাই’-এর তাণ্ডবে মোজাম্বিকে মৃত মানুষের সংখ্যা হাজার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ফিলিপে নিউসি।

ঝড়টি মোজাম্বিক ছাড়াও জিম্বাবুয়ে ও মালাউয়িতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে।

আজ মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, গতকাল সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট নিউসি। তিনি নদীতে মৃতদেহ ভেসে থাকতে দেখেছেন। মৃত মানুষের সংখ্যা হাজারে উন্নীত হতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।

গত বৃহস্পতিবার দেশটির বন্দরনগর বেইরায় ঘণ্টায় ১৭৭ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের পর ভূমিধসের ঘটনাও ঘটে। ঘূর্ণিঝড়ের পর পুরো এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়। বন্যা থেকে বাঁচতে অনেককে বাড়ির ছাদ ও গাছে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। তবে সাহায্য নিয়ে ত্রাণ দল গত রোববার অকূলস্থলে পৌঁছায়।

জাতিসংঘের একজন ত্রাণকর্মী বিবিসিকে জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বেইরার প্রায় প্রতিটি বাড়ি ও পাঁচ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি। ছবি: এএফপি
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি। ছবি: এএফপি

জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির গেরাল্ড বাউর্কে নামের ওই কর্মী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে কোনো ভবনই রক্ষা পায়নি। সেখানে এখন বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। টেলিযোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে উপড়ে পড়া বিদ্যুৎ-সংযোগের তার দিয়ে রাস্তাঘাট ভরে গেছে। বাড়িঘরগুলোর ছাদ ও দেয়াল ধসে গেছে। প্রচুর লোক তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে।

এদিকে সরকারিভাবে মোজাম্বিকে মৃত মানুষের সংখ্যা ৮৪ উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে মোট ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) ঘটনাকে ‘গুরুতর ও ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছে।

আইএফআরসির মূল্যায়ন দলের প্রধান জ্যামি লেসেউর জানান, লোকজনকে গাছ থেকেও উদ্ধার করা হয়েছে।

জিম্বাবুয়েতে ঘূর্ণিঝড়ে ধসে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপে মেয়েকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন এক বাবা। ছবি: এএফপি
জিম্বাবুয়েতে ঘূর্ণিঝড়ে ধসে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপে মেয়েকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন এক বাবা। ছবি: এএফপি

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে জিম্বাবুয়েতে কমপক্ষে ৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে ২১৭ জন নিখোঁজ রয়েছে।

মালাউয়িতেও ঘূর্ণিঝড়টি বড় আঘাত হেনেছে। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টির কারণে এলাকাগুলোয় বন্যা দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে।

ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, তারা মোজাম্বিক ও মালাউয়িতে ৮০ লাখ ডলার মূল্যের সাহায্য পাঠাতে যাচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বেইরা মোজাম্বিকের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। সেখানে পাঁচ লাখ লোকের বাস।

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ধসে পড়া বাড়ি ও গাছ উপড়ে পড়ে আহত হয়েছে দেড় হাজারের বেশি মানুষ।

মোজাম্বিকের সোফালা প্রদেশের গভর্নর অ্যালবার্তো মোন্দলেন রোববার জানান, দুর্যোগে প্রায় সবকিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোকজনের এই মুহূর্তে সাহায্যের খুব প্রয়োজন।

জিম্বাবুয়ে সংযোগ সড়কের একাংশ ধসে পড়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
জিম্বাবুয়ে সংযোগ সড়কের একাংশ ধসে পড়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

আইএফআরসির জ্যামি লেসেউর জানান, পুরো দেশের সঙ্গে বেইরার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এরপরও স্থানীয় লোকজনের ‘অসাধারণ সহযোগিতায়’ শহরের সড়কগুলো পুনরায় চালু করা গেছে।

জিম্বাবুয়েতে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমেরসন নানগাগওয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে এসেছেন।

সেখানের বেঁচে যাওয়া লোকজন জানিয়েছেন, কীভাবে ঘূর্ণিঝড় তাঁদের সর্বস্বান্ত করেছে। কেড়ে নিয়েছে প্রিয়জনকে।

জিম্বাবুয়ের চিমানিমানি জেলার একটি হাসপাতালে প্রেইজ চিপোরে নামের ৩১ বছর বয়সী এক নারী জানান, তাঁর বাড়ি পুরো ধসে গেছে। তিনি বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে বিছানায় ছিলাম। বড় একটি স্রোত এসে মেয়েকে আমার কাছ থেকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আমি আরেক দিকে ভেসে যাই।’

জেন চিতসুরো নামের একজন জানান, তিনি তাঁর মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছেন না। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তাঁর মেয়ে আটকা পড়েছে। তিনি জানান, কোনো আসবাবপত্র নেই, কাপড়চোপড় নেই। চারপাশে শুধু ধ্বংসস্তূপ।