শতক পেরিয়ে নামিবিয়ায় গণহত্যার দায় স্বীকার জার্মানির

নামিবিয়ায় হত্যার শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠান। ২৯ আগস্ট, ২০১৮, জার্মানির বার্লিনে
ছবি: রয়টার্স।

ঔপনিবেশিক আমলে আফ্রিকার দেশ নামিবিয়ায় ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল জার্মান সেনারা। এক শতকের বেশি সময় পর এসে প্রথমবারের মতো ওই ঘটনাকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে জার্মানি। আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ হিসেবে নামিবিয়াকে ১০০ কোটি ইউরোর বেশি অর্থ দিতে সম্মত হয়েছে বার্লিন।

জার্মান সরকারের বড় পরিসরে জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে গত শতকের শুরুর দিকে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ নামিবিয়ায় বিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহ দমনের নামে ১৯০৪ থেকে ১৯০৮ সালের মধ্যে দেশটিতে ব্যাপক দমনপীড়ন চালায় জার্মান সেনারা। এতে নামিবিয়ার প্রায় ৬৫ হাজার হেরেরো জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রাণ হারায়। নামার জনগোষ্ঠীর ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় জার্মান সেনাদের হাতে।

জাতিসংঘ নামিবিয়ার এ ঘটনাকে বিংশ শতকের প্রথম গণহত্যা বলে আগেই চিহ্নিত করেছে। তবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বলে জার্মানি এতদিন গণহত্যার অভিযোগ স্বীকার করেনি। তবে এ ঘটনায় ‘মানবিক দায়বদ্ধতা’ রয়েছে বলে মনে করে জার্মান সরকার।
স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস বলেন, ‘নামিবিয়ার সঙ্গে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে জার্মান সরকারের আলোচনা হয়েছে। এখন আমরা ঔপনিবেশিক আমলের ওই হত্যাযজ্ঞকে আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা বলতে পারি। এতে জার্মানির ঐতিহাসিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমরা নামিবিয়া ও ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস আরও জানান, ক্ষতিপূরণ হিসেবে নামিবিয়াকে ১১০ কোটি ইউরো দেবে জার্মান সরকার। এ অর্থ গণহত্যার শিকার জাতিগোষ্ঠীর পুনর্গঠন ও উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। নামিবিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে ৩০ বছর ধরে অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণে ব্যয় করা হবে।

বিংশ শতকের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল জার্মানি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে দেশটি ঔপনিবেশিক ভূখণ্ডগুলোর ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারায়। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ভূমিকা, নাৎসি হলোকাস্ট নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, ততটাই নজর এড়িয়েছে ঔপনিবেশিক জার্মানির অন্যায়গুলো।

তবে নামিবিয়ার পক্ষ থেকে বারবার জার্মান হত্যাযজ্ঞের বিষয়টি আলোচনায় আনার চেষ্টা চলমান ছিল। ২০১৫ সালে দেশটি এ বিষয়ে জার্মান সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করতে সক্ষম হয়। সেই আলোচনার ফলে এক শতকের বেশি সময় আগের ওই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যার স্বীকৃতি দিল জার্মানি।