সহিংসতার মধ্যেই জুমার মামলার আবার শুনানি

জ্যাকব জুমা
ফাইল ছবি

চলমান সহিংসতার মধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগে কারাবন্দী দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার মামলার বিচারপ্রক্রিয়া সোমবার আবারও শুরু হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ডেপুটি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা, দুর্নীতিসহ ১৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর মধ্যে ইউরোপিয়ান অস্ত্র বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যুদ্ধবিমান, টহল বোট এবং বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

এসব সরঞ্জাম কেনার সময় ফ্রান্সের জায়ান্ট প্রতিরক্ষা কোম্পানি থ্যালেসের কাছ থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় একটি অর্থ পাচার মামলা করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন স্থগিত থাকার পর গত মে মাসে জুমার বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রম চালু হয়।

বিচারকাজ শুরু হলে আদালতে হাজির হয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। এ সময় আদালত যুক্তিতর্ক শুনে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ১৯ জুলাই দিন ধার্য করেন।

অপর দিকে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় গত ২৯ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এক সপ্তাহ পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। জুমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে তাঁর জন্মস্থান কাওয়াজুল-নাটাল প্রদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে দেশটির অর্থনৈতিক কেন্দ্র জোহানেসবার্গে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায় বিক্ষোভকারীরা। সপ্তাহব্যাপী চলা সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই বিচারের এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চলমান সহিংস ঘটনাকে দেশটির উদীয়মান গণতন্ত্রের ওপর ‘সংঘবদ্ধ ও পূর্বপরিকল্পিত হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। এমন প্রেক্ষাপটে সোমবারের শুনানিতে নতুন করে আবারও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আজকের শুনানি নিয়ে জুকুল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ফেলো সিফো সিপি সতর্ক করে বলেছেন, ‘জনগণ বিচারকদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবেন, তাঁরা যদি মনে করেন ন্যায়বিচার হয়নি, তাহলে আবারও বিক্ষোভ শুরু করতে পারেন।’

আজকের শুনানিতে আলাদা একটি ছক কষছেন জুমার আইনজীবী প্যানেল, জানা যায় গণমাধ্যমে তথ্য ফাঁস করায় মামলার চিফ প্রসিকিউটর বিলি ডোনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে যাচ্ছেন তাঁরা। তবে ন্যাশনাল প্রসিকিউটিং অথরিটির মুখপাত্র টুয়নজি মাগা বলেন, ‘অভিযোগ বাতিলের জন্য আমরা আদালতে আবেদন করব।’ বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য ভার্চ্যুয়াল শুনানি হবে বলেও জানান তিনি।

জুমার সমর্থকেরা বারবার দাবি করছেন রাজনৈতিক স্বার্থে এসব মামলা করা হয়েছে, এমনকি জুমাকে কারাগারে পাঠানো হলে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি করেছেন তাঁরা। তবে সাম্প্রতিক বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তাঁরা। এদিকে চলতি সপ্তাহে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কার্ল নিহাস নামে জুমার এক বন্ধু লুটপাট ও সহিংসতার ঘটনায় তাঁদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, জুমাকে কারাগারে পাঠানোর কারণে বিক্ষুব্ধ জনতা খুবই উদ্বিগ্ন ও রাগান্বিত।