‘সুয়েজ খাল বন্ধের জন্য নাকি আমিই দায়ী’

মারওয়া এল সেলাহদার
ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

গত মাসের ঘটনা। পুরো বিশ্ব তখন জেনে গেছে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর। সুয়েজ খাল থেকে তখন কয়েক শ মাইল দূরে আলেকজান্দ্রিয়াতে কর্মরত ছিলেন মারওয়া এল সেলাহদার। সেখানে থেকেই মারওয়া জানতে পারলেন, এই খাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য নাকি তিনিই দায়ী!

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মিসরে বাণিজ্যিক জাহাজের প্রথম নারী ক্যাপ্টেন হওয়ার পথে রয়েছেন মারওয়া। সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশটির অনলাইন দুনিয়ায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে মারওয়া এল সেলাহদারের কারণেই খাল বন্ধ হয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে জাহাজের জট।

মারওয়া বলেন, ‘আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম।’ ওই সময়ে আইদা ফোর নামের একটি জাহাজে কর্মরত ছিলেন তিনি। ওই জাহাজটি মিসরের সমুদ্র নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন। লোহিত সাগরের একটি লাইটহাউসে রসদ সরবরাহের কাজ করছিল সেটি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৩ মার্চ স্থানীয় সময় সকালে সুয়েজ খালে আড়াআড়ি আটকে যায় কনটেইনারবাহী জাহাজ ‘এভার গিভেন’। জাহাজটির পরিচালনাকারী তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান এভারগ্রিন মেরিন করপোরেশন জানায়, জাহাজটি সুয়েজ খাল অতিক্রম করছিল। ওই সময় প্রবল বাতাস ও ধূলিঝড়ের কবলে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় জাহাজটি। একপর্যায়ে সংকীর্ণ সুয়েজ খালে প্রায় আড়াআড়িভাবে আটকে যায়। এতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সুয়েজ খাল। তৈরি হয়েছিল ভয়াবহ জাহাজজট।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় ফেক নিউজের কবলে পড়েছিলেন মারওয়া। মিথ্যা তথ্যসংবলিত নানা ধরনের স্ক্রিনশট ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তাঁর ছবিও। ফেসবুক ও টুইটারে বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে এ বিষয়ে মিথ্যা খবর ও ছবি ছড়ানো হতে থাকে। বলা হয়, মারওয়া সুয়েজ খাল বন্ধের জন্য দায়ী।

সুয়েজ খালে আটকে গিয়েছিল একটি জাহাজ
ছবি: এএফপি

২৯ বছর বয়সী মারওয়া বলেছেন, কে কোথা থেকে প্রথম এমন খবর ছড়িয়েছে, তা তিনি জানেন না। কেন ছড়ানো হয়েছে, তা নিয়েও তাঁর কোনো ধারণা নেই। মারওয়া বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, হয়তো এ খাতে একজন সফল নারী বলেই আমি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি। অথবা আমি মিসরীয় বলে এমনটা হয়েছে। তবে আমি নিশ্চিত নই।’

তবে নারী বলে এই প্রথমবার বাধার মুখোমুখি হলেন মারওয়া, বিষয়টি তেমন নয়। এর আগেও জীবনের নানা পর্যায়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে জাহাজের নাবিকদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বৈশ্বিকভাবেই বেশ কম। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, বিশ্বে জাহাজে কর্মরত নাবিকদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ নারী।

মারওয়া জানিয়েছেন, সমুদ্র বরাবরই তাঁর খুব ভালো লাগে। ভাইকে দেখেই বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিকের পেশা বেছে নেন তিনি। যদিও সেই সময় মিসরে নাবিক হিসেবে শুধু পুরুষদের কাছ থেকেই আবেদন গ্রহণ করা হতো। তবে তা সত্ত্বেও আবেদন করেছিলেন মারওয়া। পরে মিসরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের অনুমতি পেয়ে সংশ্লিষ্ট একাডেমিতে ভর্তি হতে পেরেছিলেন মারওয়া। আর কিছুদিনের মধ্যেই জাহাজের ক্যাপ্টেন হওয়ার চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি।

মারওয়া এল সেলাহদার
ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

এ ব্যাপারে মারওয়া বলেন, ‘নারীরা দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিবার থেকে দূরে থেকে সমুদ্রে দায়িত্ব পালন করবে—এই বিষয়টি আমাদের সমাজের মানুষেরা মেনে নিতে পারে না। কিন্তু যখন আপনি নিজের পছন্দের ও ভালোবাসার কাজটি করবেন, তখন সবার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

এই নারী নাবিক জানিয়েছেন, তাঁর ব্যাপারে ভুয়া খবর ইংরেজি ভাষায় ছিল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সেগুলো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে গেছে। মারওয়া নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন। কারণ, এতে পেশায় তাঁর সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নাবিক হওয়ার পথে আসা নারীদের পরাশর্শ দিয়ে মারওয়া বলেন, ‘অন্য নারীদের প্রতি আমার বার্তা হলো, এই পেশা হলো আপনি যা ভালোবাসেন এবং এর জন্য কোনো নেতিবাচক অনুভূতিকে নিজের কাছে ঘেঁষতে দেবেন না।’