সৌদিতে বন্দী আটক কেন্দ্রে ইথিওপিয়ানদের করুণ দশা

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীর দ্বারা বিতাড়িত হয়ে সৌদি আরবে অনুপ্রবেশ করে হাজারো ইথিওপিয়ান
ছবি: এএফপি

সৌদি আরবে বন্দী আটক কেন্দ্রগুলোতে অভিবাসনপ্রত্যাশী ইথিওপিয়ানদের করুণ দশা বিরাজ করছে। সেখানে তাঁদের শিকল দিয়ে জোড়ায় জোড়ায় বেঁধে রাখা হচ্ছে; ঘরের মেঝেতেই পায়খানা-প্রস্রাবের কাজ সারতে হচ্ছে। এরই মধ্যে এসব আটক কেন্দ্রে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।  

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ৩ অক্টোবর বিবিসি খবর প্রকাশ করে।

অ্যামনেস্টি বন্দিশিবিরগুলোর মানোন্নয়নের জন্য সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি ইথিওপিয়াকেও তার নাগরিকদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায়।

বিবিসির খবরে বলা হয়, সৌদি আরবের বন্দিশিবিরগুলোতে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ‘অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতার’ মধ্যে দিন পার করছেন। এসব বন্দী মূলত ইয়েমেন থেকে হুতি বিদ্রোহীদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে প্রতিবেশী সৌদিতে অনুপ্রবেশ করেছেন।

অভিবাসনপ্রত্যাশী হাজার হাজার ইথিওপিয়ানের পাশাপাশি এসব শিবিরে অন্যান্য দেশের নাগরিকও আছেন। তাঁরা সবাই ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলে কাজ করতেন। কিন্তু দেশটির হুতি বিদ্রোহীরা তাঁদের বিতাড়িত করে। জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএমের তথ্যমতে, প্রায় দুই হাজার ইথিওপিয়ান ইয়েমেন সীমান্তে দানাপানি ও স্বাস্থ্যসেবা ছাড়া দিনাতিপাত করছেন।

হাজার হাজার ইথিওপিয়ান সৌদি আরবে কাজ করেন। তাঁদের পাঠানো অর্থই ইথিওপিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার মূল উৎস। তবে সৌদি আরব অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে দিন দিন কঠোর হচ্ছে।

২০১৭ সাল থেকে সৌদি আরব অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। সে সময় দেশটিতে ৫০ হাজার পর্যন্ত অবৈধ ইথিওপিয়ান অভিবাসীর সন্ধান পাওয়া যায়।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা–আইওএম

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি মাসে গড়ে ১০ হাজার ইথিওপিয়ানকে সৌদি আরব ফেরত পাঠিয়েছে। তবে করোনাকালে এই অভিযান স্থগিতের অনুরোধ জানিয়েছেন ইথিওপিয়ার কর্মকর্তারা। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশফেরত নাগরিকদের কোয়ারেন্টিনে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে ইথিওপিয়া।

বন্দিশিবিরে মরদেহ

অ্যামনেস্টি ১২ জন বন্দীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাঁদের কাছে সৌদির আল-দায়ের বন্দিশিবির এবং জিজান কেন্দ্রীয় কারাগার, জেদ্দা ও মক্কা কারাগারে ইথিওপিয়ানদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তাঁদের বক্তব্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উঠে এসেছে আল-দায়ের বন্দিশিবির ও জিজান কারাগারের কথা। সেখানে ৩৫০ জন বন্দীকে একই সেলে থাকতে হচ্ছে।

সাক্ষাৎকার দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন জানিয়েছেন, তাঁরা স্বচক্ষে আল-দায়ের বন্দিশিবিরে ইথিওপিয়া, ইয়েমেন ও সোমালিয়ার তিন নাগরিকের মরদেহ দেখেছেন। অ্যামনেস্টি বলছে, বন্দীদের এসব অভিযোগ তারা ভিডিও, অডিও ও উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে পেয়েছে।

এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে ইথিওপিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিওন টেকলু বলেছেন, তাঁরা বন্দিশিবিরে থাকা দুই হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে মধ্য অক্টোবরের মধ্যে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবেন। তাঁর ভাষ্যমতে, চলতি বছরের শুরুর দিকে সৌদি আরবের বন্দিশিবিরগুলোতে ১৬ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ইথিওপিয়ান ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এই সংখ্যা আরও কম। তবে গত মাসে তিন অভিবাসী এএফপিকে বলেছেন, বন্দিশিবিরগুলো পরিদর্শনের সময় ইথিওপিয়ার কূটনীতিকেরা তাঁদের বন্দিশিবির সম্পর্কে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।