অস্তিত্বসংকটের মুখোমুখি আফগান সরকার: মার্কিন প্রতিবেদন
যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তালেবানের সঙ্গে চুক্তি সই করার পর থেকে আফগানিস্তানে সশস্ত্র সংগঠনটি সরকারি বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা ও বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিযান জোরদার করেছে। এ অবস্থায় ‘অস্তিত্বসংকটে’ পড়েছে আফগান সরকার। বৃহস্পতিবার একটি মার্কিন সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। এএফপি ও রয়টার্সের খবর।
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ইউএস স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন (এসআইজিএআর)। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি (দোহা চুক্তি) সই করার আগের তিন মাসে আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীকে লক্ষ্য করে তালেবান ৬ হাজার ৭০০টি হামলা চালায়। চুক্তির পর একই বছরের সেপ্টেম্বর-নভেম্বর এ তিন মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ২৪২টিতে। পরবর্তী সময়ে প্রতি তিন মাসে তাদের হামলা ১০ হাজারের ওপরে অব্যাহত ছিল।
ওই চুক্তির অধীন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তার সব সেনা সরিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আশা, এর ফলে কাবুল সরকারের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তিতে উপনীত হতে সমঝোতার পথে হাঁটবে তালেবান।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের তিন দিন আগে গত সোমবার আফগানিস্তানে তালেবানের চলমান অভিযানকে আটকানো না গেলে এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করে দেয় জাতিসংঘ।
আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার সব সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর গত মে মাসের শুরু থেকে তালেবান আফগান সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই এবং সহিংসতা। এরই মধ্যে দেশটির প্রায় ৪০০ জেলার অর্ধেক ও গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সীমান্ত-ক্রসিং নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবান। একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, দেশটির প্রায় অর্ধেক এলাকা এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে।
এসআইজিএআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ–তিন মাসে আফগানিস্তানে সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৫১০ জন বেসামরিক লোকের। আহত হয়েছেন ৭০৯ জন। একই বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর–এ তিন মাসে হতাহত বেসামরিক লোকের এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ হাজার ৫৮ ও ১ হাজার ৯৫৯। হতাহতের সংখ্যার ঊর্ধ্বগতি চলতি বছরও অব্যাহত আছে।
স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল জন সপকো বলেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে তাতে এটি পরিষ্কার যে চলতি প্রবণতা আফগান সরকারের বিপক্ষে যাচ্ছে। পরিস্থিতি না পাল্টালে এ সরকার অস্তিত্বসংকটের মুখে পড়তে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে তালেবান যেভাবে তাদের অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিচ্ছে, তাতে আফগান নিরাপত্তা বাহিনী দৃশ্যত হতভম্ব ও অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আফগান বাহিনী এখন পশ্চাৎপদ হচ্ছে।
ইতিমধ্যে, আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তা মিশন (ইউএনএএমএ) সোমবার তার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গত ৬ মাসে আফগানিস্তানে সংঘটিত বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি প্রসঙ্গে বলেছে, দেশটিতে চলমান সংঘাতে গত এক দশক ধরে প্রাণহানির হিসাব রাখছে তারা। তাদের ধারণা, এবারের প্রাণহানি এ এক দশকের মধ্যে কোনো একক বছরে হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির সংখ্যাকে ছুঁতে পারে।
লড়াই ও সহিংসতায় বেসামরিক লোকজনের আংশিক প্রাণহানির পেছনে আফগান সেনা ও সরকার সমর্থক গোষ্ঠীগুলো দায়ী থাকতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘ। ইউএনএএমএর প্রধান দেবোরাহ লিয়নস প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে বলেছেন, আফগানিস্তানে ক্রমবর্ধমাণ সহিংসতার লাগাম টানা না গেলে চলতি বছর দেশটিতে নজিরবিহীন সংখ্যায় বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি ও তাঁদের মধ্যে বিকলাঙ্গ হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ২০২১ সালের প্রথম ৬ মাসে আফগানিস্তানে লড়াই ও সহিংসতায় ১ হাজার ৬৫৯ জনের মতো বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৩ হাজার ২৫৪ জন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা ৪৭ শতাংশ বেশি।