আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে এক সপ্তাহের মধ্য ১১টি প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নিয়েছেন তালেবান যোদ্ধারা। আগের ধারণার চেয়ে এখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আফগান সরকারি বাহিনীর সামান্যতম প্রতিরোধ ছাড়াই প্রাদেশিক রাজধানী ছেড়ে দিয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে তালেবান যেসব অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি, এখন সেসব অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সিএনএন বলছে, তারা কাবুল থেকে তিন ঘণ্টার দূরত্বে গজনি সফরে কিছু সরকারি সেনা ইউনিটের মধ্যে মনোবল ঘাটতির প্রমাণ দেখেছে। তালেবান স্নাইপারদের গুলির মুখে পড়া একদল সৈন্য তাঁদের ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে।
১১ আগস্ট বাঘলান প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-খুমরির কেন্দ্রস্থলে তালেবান পতাকা উড়তে দেখা গেছে। সিএনএন দেখেছে, তালেবানের ভয়ে কিছু সরকারি সেনা তাঁদের পোশাক বদল করে সাধারণ পোশাক পরিধান করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে গজনি শহরের দখল নিয়ে নিয়েছেন তালেবান যোদ্ধারা। বুধবার কুন্দুজ বিমানবন্দরের একটি ভিডিও থেকে দেখা গেছে, অনেক সরকারি সেনা তাঁদের সাধারণ পোশাকে তালেবানের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন।
দেশের অনেক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনী হকচকিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। তাদের তালেবান আক্রমণের ভয়, হত্যাকাণ্ড বা গাড়িবোমা হামলার মতো ঘটনায় সরকারকে রক্ষা নাকি আত্মসমর্পণ করবে, তা বেছে নিতে বাধ্য করছে। আফগানিস্তানের সেরা সৈন্য, মার্কিন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডোরা চাপে পড়েছেন।
তালেবানের হামলার মুখে আরও এক ডজনের বেশি প্রাদেশিক রাজধানী হুমকির মুখে। এসব এলাকা বেশির ভাগ ঘিরে রাখা হয়েছে। উড়োজাহাজ ছাড়া কাবুলে যাতায়াতের পথ বন্ধ।
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার গত সপ্তাহে সফর করেছে সিএনএন। এর প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত সেনারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কবে নাগাদ বা আদৌ তাঁরা সাহায্য পাবেন কি না, সে সম্পর্কে জানেন না। এরপর থেকে তাঁদের ওপর চাপ বেড়ে গেছে।
গত বুধবার তালেবান নেতারা বলেছেন, তাঁরা একটি কারাগারে এক হাজার বন্দীকে মুক্তি দিয়েছেন। তাঁরা অন্য এলাকাতেও একই কাজ করেছেন। সরকারের একজন মুখপাত্র এ ঘটনা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, অধিকাংশ বন্দী ছিল অপরাধী। কারাগার থেকে কয়েক মিটার দূরে আফগান কমান্ডোদের একটি অবস্থান ইতিমধ্যে তালেবানের হাতে যেতে দেখেছে সিএনএন।
পুলিশ ও সামরিক ঘাঁটি দখলের পাশাপাশি তালেবান সরকারি বাহিনী সাঁজোয়া যান, হামভি ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রও দখলে নিয়েছে। এসব অস্ত্রশস্ত্রের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা। তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা যে অস্ত্র কবজায় নিয়েছে, তা তাদের সেনাদের জন্য যথেষ্ট।
যারা এখনো সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আছে, তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এ মুহূর্তে কাবুল নিরাপদ বোধ হলেও তা দীর্ঘদিন নিরাপদ থাকবে না।
তালেবানের এই এগিয়ে যাওয়ার জোয়ারের মুখে তা ঘোরানোর জন্য একটি সুসংহত কৌশল দৃশ্যমান হচ্ছে না। দেশটিতে নিহত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এপ্রিল মাস থেকে সেখানে ছয় হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। ইতিমধ্যে দেশটির সামরিক নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে।
তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেসামরিক নাগরিকদের সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা করেন তিনি। উত্তরাঞ্চলের এই শহরের পতন রক্ষায় আশরাফ গনি পাশে পাচ্ছেন মার্শাল আবদুল রশিদ দোস্তামকে।
দোস্তাম বলছেন, আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চল থেকে বের হওয়া সহজ নয়। তবে দোস্তামের সাহসী বক্তব্যের মধ্যেই তালেবানের উত্তরাঞ্চল থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের সামনে বাধা সামান্যই। তাদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে কেবল মার্কিন বিমান হামলা।
এখন সরকারকে তালেবানের এই জোয়ার ঠেকাতে কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। এখানে অবশ্যই কিছু ক্ষোভ রয়েছে যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার খুব দ্রুত হয়েছে এবং দোহা আলোচনায় তালেবানের ওপর প্রভাব পড়েছে কম। তালেবান যখন নির্দ্বিধায় এলাকা দখল করে নিতে পারছে, তখন তারা আলোচনার জন্য উৎসাহ দেখাচ্ছে কম।
যারা এখনো সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আছে, তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এ মুহূর্তে কাবুল নিরাপদ বোধ হলেও তা দীর্ঘদিন নিরাপদ থাকবে না। সর্বশেষ মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য বলছে, কয়েক মাসের মধ্যেই তালেবানের হাতে কাবুলের পতন ঘটতে পারে। কান্দাহার বা গজনিতে এই মূল্যায়নের বিরোধিতা করার মতো খুব কম প্রমাণ মিলেছে।