ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতকে দলে টানতে ব্যর্থ হলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ছবি: রয়টার্স

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ২৪ ঘণ্টার ভারত সফর শেষে আজ রোববার সকালে কম্বোডিয়ার উদ্দেশে নয়াদিল্লি ত্যাগ করেছেন। ভারতের সঙ্গে জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। কিশিদার নয়াদিল্লির উদ্দেশে যাত্রা করার আগে জাপানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ইউক্রেনে হামলা চালানোর জন্য রাশিয়ার নিন্দা জানাতে পশ্চিমের গ্রহণ করা অবস্থানের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান ভারতের প্রতি জানানোর পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নীতিগত সমন্বয় করে নেওয়ার চেষ্টা জাপানের প্রধানমন্ত্রী করবেন। এ ছাড়া পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় চীনের কোনোরকম একতরফা পদক্ষেপ গ্রহণের প্রচেষ্টাকে বাধা দেওয়ার জন্য চতুর্পক্ষীয় পরোক্ষ সামরিক জোট কোয়াডের সহযোগিতা আরও দৃঢ় করে নেওয়ার প্রত্যাশাও জাপানের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হলেও সেটি খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি।

জাপান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীরা গতকাল বিকেলে নয়াদিল্লিতে শীর্ষ বৈঠকে বসেন। ভারতের জন্য জাপানের অর্থনৈতিক সহায়তার দিকটি বৈঠকে প্রধান্য পেয়েছে। বৈঠকে দুই দেশ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়াবলি নিয়েও আলোচনা করেছে। পরে একটি যৌথ বিবৃতি প্রচার করে দুদেশ।

শীর্ষ বৈঠকের পর প্রচারিত ২৩টি অনুচ্ছেদের যৌথ বিবৃতিতে ভারতের অবকাঠামো উন্নয়নে জাপানের অব্যাহত সহযোগিতার পাশাপাশি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় অবাধ সমুদ্র চলাচল নিশ্চিত করে নিতে দুই দেশের অঙ্গীকারের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ কোনো দেশের উল্লেখ না করে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে নিয়মভিত্তিক সমুদ্র চলাচল ব্যবস্থার সামনে দেখা দেওয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দুই দেশের সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার কথা সেখানে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মিয়ানমারে সহিংসতা চলতে থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটির প্রতি গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হলেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কোনোরকম উল্লেখ বিবৃতিতে করা হয়নি।

অন্যদিকে বিবৃতি স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেন বিষয়ে ভারতকে কাছে টানা জাপানের পক্ষে সম্ভব হয়নি। যৌথ বিবৃতির দশম অনুচ্ছেদে ইউক্রেনের সংকট নিয়ে সংক্ষেপে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের চলমান সংকট ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে এর প্রভাব কী হতে পারে, তার মূল্যায়ন তাঁরা করেছেন। সমস্যার সমাধানে সংলাপ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার বাইরে যে অন্য কোনো বিকল্প নেই, সে বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বিলম্ব না করে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান দুই নেতা পুনরায় ব্যক্ত করেন। তবে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর জন্য রাশিয়ার নিন্দার উল্লেখ যৌথ বিবৃতিতে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়নি। এমনকি রাশিয়ার নামের উল্লেখও এতে করা হয়নি।

শীর্ষ বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ইউক্রেনের যুদ্ধের নিষ্পত্তি অবশ্যই হওয়া উচিত। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে ইউক্রেন প্রসঙ্গের কোনো উল্লেখ না থাকায় বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের অবস্থানগত পার্থক্য এর মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জাপানের প্রধানমন্ত্রী আগামী পাঁচ বছরে ভারতে ৫ লাখ কোটি ইয়েন বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের একটি পরিকল্পনা উন্মোচন করেন। ভারতে দ্রুতগতির রেল পরিবহনব্যবস্থা নির্মাণসহ দেশের নগর পরিবহন খাতের উন্নয়নে হাতে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পে জাপান সহায়তা দিয়ে আসছে।