এভারেস্টে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হওয়ার আশঙ্কা

মাউন্ট এভারেস্টের ফাইল ছবি

সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বেসক্যাম্পের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পর্বতারোহীরা জানিয়েছেন, সেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এ ছাড়া অনেকের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা আরও বলেছেন, বেসক্যাম্পে করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নেপালের বেসক্যাম্পের কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুর হাসপাতাল থেকে ১৭ জনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর জানতে পেরেছেন তাঁরা। নতুন আক্রান্ত এই আরোহীদের বেসক্যাম্প ও ‘হায়ারক্যাম্প’ থেকে পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া কাঠমান্ডুর বেসরকারি একটি হাসপাতালের কর্মী বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন, এভারেস্টের বেসক্যাম্পে থেকে আসা কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও বেসক্যাম্পে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবর অস্বীকার করেছে নেপাল সরকার।

নেপালের আয়ের অন্যতম একটি উৎস হলো বিদেশি পর্বতারোহীরা। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত বছর এভারেস্টে আরোহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি আবারও সর্বোচ্চ এই পর্বতশৃঙ্গ আরোহীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্ত দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে অন্যতম হলো আরোহীকে নেপালে পৌঁছানোর পর বেসক্যাম্পে যাওয়ার আগে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কিন্তু এ সতর্কতার পরও সম্প্রতি সেখানে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে পর্বতারোহীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে যে সেখানে প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তা ব্যাপক আকার ধারণ করবে।

এদিকে মাউন্ট এভারেস্টের বেসক্যাম্প বা হায়ারক্যাম্পে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও নেপালের অন্যান্য অঞ্চলে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলেছেন, প্রতিবেশী ভারতের মতো ভয়াবহ করোনার সংক্রমণের মুখে পড়তে যাচ্ছে নেপাল। এরই মধ্যে ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় উদ্বেগজনক হারে সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে শয্যা ও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা।

গতকাল মঙ্গলবার গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের উত্তর প্রদেশের সীমান্তবর্তী লুম্বিনী প্রদেশের বাঙ্কে জেলার ভেরি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘মিনি ইন্ডিয়া’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের মতে, ওই এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

নেপালের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হরিদায়েশ ত্রিপাঠি সম্প্রতি দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে বলে সতর্ক করেছিলেন। এবারের ভাইরাসটি আরও বেশি ‘সংক্রামক ও প্রাণঘাতী’ বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এরপর গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানী কাঠমান্ডুতে দুই সপ্তাহের লকডাউন দেওয়া হয়। নেপালি টাইমসকে ত্রিপাঠি বলেছেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার মহামারি সামাল দেওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয় নেপাল।

স্থানীয় চিকিৎসক রাজন পান্ডেসহ অন্যান্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের ‘বি ১৬১৭’ ধরনটিই এখনকার সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। এ ধরন বেশি সংক্রামক বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে ভারতের মতো তরুণ এমনকি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এ ধারণার পক্ষে এখনো যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি।

রাজন পান্ডে বলেন, এটা কোন ভেরিয়েন্ট, তা পরীক্ষা করে দেখার মতো যন্ত্র তাঁদের নেই। জিনোম সিকোয়েন্সের মেশিন কেনা হয়েছে বলে তাঁকে বলা হয়েছে। তবে এটার ব্যবহার এখনো শুরু হয়নি। তিনি এমন একটি হাসপাতালের বিবরণ দেন, যেটা কোভিড-১৯ রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। ওই হাসপাতালে ভর্তির জন্য শ্বাসকষ্ট নিয়ে অনেককে ঘণ্টার পর ঘণ্টার বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। রোগীর তুলনায় সেখানে আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটরের ঘাটতি রয়েছে।