এশিয়ার ৫ দেশে ব্যাপক বন্যা

ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। ভারী বর্ষণের কারণে এসব দেশের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বন্যা-সংশ্লিষ্ট কারণে প্রাণহানি হয়েছে কয়েক শ মানুষের। জাতিসংঘ বলেছে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। খবর এএফপির।
মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ বলছে, বাড়ির ছাদ-সমান উঁচু বন্যার কারণে আটকা পড়েছে মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর হাজার হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই লাখের বেশি মানুষ। তাদের উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির উদ্ধারকারীরা। বন্যায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে।
শিন ও সাগাইং অঞ্চলসহ মিয়ানমারের অনেকগুলো এলাকা এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শিন প্রদেশের রাজধানী হাকায় ভূমিধসে ৭০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাখাইন রাজ্যেও প্রবল বর্ষণের প্রভাব পড়েছে।
ত্রাণকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে বন্যা-বিপর্যয়ের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেতে আরও কয়েক দিন লেগে যেতে পারে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় কার্যালয়ের মুখপাত্র পিয়রে পেরন বলেন, ‘ত্রাণ কার্যক্রম চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছে মূল্যায়নকারী দলগুলো।’ কিছু এলাকায় বন্যার পানি নেমে যেতে শুরু করলেও নদীগুলোতে পানির উচ্চতা বাড়তে থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ ‘খুবই উদ্বিগ্ন’ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় ‘কেমন’-এর প্রভাবে মিয়ানমার, ভারতসহ এ অঞ্চলের দেশগুলোতে গত এক সপ্তাহে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে নদীর পানি উপচে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ওই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে দেশটিতে বন্যা-সংশ্লিষ্ট কারণে ১২০ জনের বেশি লোক প্রাণহানির শিকার হয়েছে। বাড়িছাড়া হয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ।
প্রবল বর্ষণের কারণে ভূমিধস হয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা। গতকাল সোমবার উদ্ধারকারীরা নতুন করে তাঁদের কার্যক্রম শুরু করেছেন। বন্যায় এ বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্য সরকারের দেওয়া তথ্য মোতাবেক, সেখানে বন্যায় ৪৮ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
পাকিস্তান ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছরই এই সময়ে প্রবল বন্যা প্রত্যক্ষ করে আসছে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দেশটিতে এ বছরে বন্যায় এখন পর্যন্ত ১১৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার (এনডিএমএ) মুখপাত্র আহমেদ কামাল জানান, এ বছরের বন্যায় সাড়ে আট লাখের বেশি মানুষ প্রভাবিত হয়েছে।
ভারী বর্ষণের পর বন্যায় ও ভূমিধসে নেপাল ও ভিয়েতনামেও ডজন ডজন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলীয় কুয়াং নিন প্রদেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়লাখনিগুলো থেকে ধসে পড়া বিষাক্ত কাদায় দুটি পরিবারের সদস্যদের প্রাণহানি হয়েছে।