কাবুলে গুরুদুয়ারায় বিস্ফোরণে নিহত ২

ওই এলাকা থেকে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ছবিটি ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে শিখদের উপাসনালয় গুরুদুয়ারায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজন নিহত ও অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আজ শনিবার সকালে এ বিস্ফোরণ হয়।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক তালেবান মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, হামলাকারীরা একটি গাড়ি ভর্তি করে বিস্ফোরক নিয়ে আসে। গাড়িটি লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগে বিস্ফোরিত হয়। তালেবান কর্তৃপক্ষ জায়গাটি ঘিরে রেখেছে।

কাবুলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডারের এক মুখপাত্র বলেন, সেনারা ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এ ঘটনায় একজন শিখ উপাসক ও তালেবান যোদ্ধা নিহত হন।

শিখ সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, তাঁদের ভবনে ঢুকতে তালেবান বাধা দেয়।
গুরুদুয়ারার কর্মকর্তা গুরনাম সিং বার্তা সংস্থাগুলোকে  বলেন,  ‘ঘটনার সময় মন্দিরে ৩০ জনের মতো ছিল। আমরা জানি না কতজন বেঁচে আছে বা মারা গেছেন। তালেবান আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না, আমরা জানি না কী করব।’

এদিকে সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সকালে কাবুলের একটি গুরুদুয়ারার কাছে দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় একাধিক গুলির শব্দও শোনা যায়। গুরুদুয়ারায় ওই সময় ১৬ জন পুণ্যার্থী ছিলেন। তবে হতাহত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

তবে এখনো কেউ এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।

স্থানীয় টোলো নিউজের প্রচারিত একটি ভিডিও ফুটেজে ওই এলাকা থেকে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। টুইটে আফগান সংবাদমাধ্যমটি আরও বলেছে, কাবুলের কারতে পারওয়ান এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। হামলার ধরন ও হতাহত হওয়ার বিষয়টি এখনো জানা যায়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘শহরের একটি পবিত্র গুরুদুয়ারায় হামলার যে খবর কাবুল থেকে আসছে, তাতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সৃষ্ট এ পরিস্থিতির বিস্তারিত জানতে অপেক্ষায় আছি।’

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন
ছবি: রয়টার্স

আগস্টে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে দেশে নিরাপত্তা ফেরানোর দাবি করেছে তালেবান। তবে দেশটিতে এখনো জঙ্গিবাদের উত্থানের আশঙ্কা রয়ে গেছে বলছেন আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকেরা। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কিছু হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট।
মুসলিম–অধ্যুষিত আফগানিস্তানে সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়ের লোকজনের সংখ্যা খুবই কম। তালেবান আবার দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে প্রায় ৩০০টি পরিবারের বসবাস ছিল। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর অনেকেই দেশটি ছেড়ে যান বলে এই সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক ফয়েজ জালান্দ আল–জাজিরাকে বলেন, তালেবান দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। তালেবানের সন্ত্রাসবাদ ও বিদ্রোহ দমনে দক্ষতার অভাব রয়েছে। তাদের আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সামরিক ও রাজনৈতিক তথ্য আদান–প্রদানের সুযোগের অভাব রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই হামলাকারী গোষ্ঠীগুলো সরকারকে এই বার্তা দিচ্ছে যে জনগণের নিরাপত্তা দিতে তারা (তালেবান) ব্যর্থ এবং তারা সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে পারে না। এতে তাদের (তালেবান) প্রতি একটি আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়।