কাবুল থেকে বাণিজ্যিক বিমানে লোকজন সরাবে যুক্তরাষ্ট্র

কাবুল বিমানবন্দর থেকে মানুষ সরিয়ে নিতে ব্যবহার করা হবে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ
ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তান থেকে জনগণকে সরিয়ে নিতে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বলেছে, সেখান থেকে জনসাধারণকে সরিয়ে তৃতীয় আরেকটি দেশে নেওয়া হবে। আর এ জন্য ব্যবহার করা হবে ১৮টি উড়োজাহাজ। খবর বিবিসির।

১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এরপর থেকে সেখানে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং দেশটির বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা আফগানদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানে যাদের সামরিক বাহিনী সদস্যরা কাজ করেছে, তারাও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এমনকি আফগানিস্তানে যাদের কূটনৈতিক মিশন ছিল, তারাও নিজ দেশের কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিচ্ছে। তবে মার্কিন সেনা বা আফগানিস্তানে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকের সংখ্যা অনেক দেশের তুলনায় বেশি ছিল। এ কারণে অন্য অনেক দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতাও বেশি। এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল রোববার বলেন, গত এক সপ্তাহে কাবুল থেকে প্রায় ২৮ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বাইডেন বলেন, কাবুল থেকে জনগণকে সরিয়ে নিতে গিয়ে হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে বা মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে এবং অনেক ভুল হতে পারে।’
কাবুল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর থেকে হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। সেখান থেকে জনসাধারণকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য যেসব উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার চাকায় মানুষ পিষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক জোট ন্যাটোর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, কাবুল বিমানবন্দরে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২০ জন। তবে কাবুল বিমানবন্দরে যে ভিড় ১৫ আগস্ট থেকে লক্ষ কারা যাচ্ছিল, তা এখন খানিকটা কমে এসেছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী দিনগুলোর তুলনায় গতকাল কাবুলের বিমানবন্দর অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যে আর্মড ফোর্সেস–বিষয়ক মন্ত্রী জেমস হেপি বলেন, হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজ করছেন তালেবান সদস্যরা। এতে প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ১৩ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ সরিয়ে নিয়েছে।

এদিকে গতকাল পেন্টাগন ঘোষণা দিয়েছে, এখন থেকে বেসামরিক উড়োজাহাজও ব্যবহার করা হবে কাবুল থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সব এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানের উড়োজাহাজ এতে ব্যবহার করা হবে, এমনটি নয়; নির্দিষ্টসংখ্যক এয়ারলাইনের উড়োজাহাজ এ কাজে ব্যবহার করা হবে। পেন্টাগন বলেছে, সিভিল রিজার্ভ এয়ার ফ্লিট (সিআরএএফ) এ কাজে সাহায্য করবে। পেন্টাগনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, কাবুল থেকে মানুষ সরিয়ে নেওয়ার কাজে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের চারটি; আমেরিকান এয়ারলাইনস, অ্যাটলাস এয়ার, ডেলটা এয়ারলাইনস ও অমনি এয়ারের তিনটি করে উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া হাওয়াইন এয়ারলাইনসের দুটি উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে এ কাজে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র এমন উদ্যোগ নিয়েছিল ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধ শুরুর সময়। এ ছাড়া ১৯৯০ থেকে ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়ও বেসামরিক উড়োজাহাজ ব্যবহার করেছিল তারা।