জাকার্তায় বায়ুদূষণের জন্য দায়ী প্রেসিডেন্ট
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার জনগণের জন্য উন্মুক্ত বিশুদ্ধ বাতাস নিশ্চিত করতে না পারার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ও আরও ছয় শীর্ষ কর্মকর্তা নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন বলে আদালত আদেশ দিয়েছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সেন্ট্রাল জাকার্তা ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ ঐতিহাসিক রায় দেন। আল–জাজিরা ও এএফপির খবর।
২০১৯ সালে নগরের ৩২ জন নাগরিক প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রী, জাকার্তা, বান্তেন ও ওয়েস্ট জাভার গভর্নরদের বিবাদী করে এই মামলা করেছিলেন। সেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে নগরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতে ব্যর্থতার জন্য সরকারকে জবাবদিহি করার আরজি জানানো হয়।
বিচারপতি সাইফুদ্দিন জুগরি প্রেসিডেন্টসহ এই সাত কর্মকর্তাকে জাকার্তার জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে বায়ুর মানবিষয়ক নীতিমালা ও প্রয়োগ কঠোর করার নির্দেশ দেন।
গত ২০ মে এ মামলার রায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ না থাকা ও করোনা পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে বারবার রায়ের দিন পেছানো হচ্ছিল।
জাকার্তায় এক কোটি বাসিন্দা রয়েছে। আর মেট্রোপলিটন এলাকায় ধারণাক্ষমতার চেয়ে তিন গুণ বেশি মানুষ থাকে। বিশ্বের যেসব নগরে বায়ুদূষণ বেশি হয়, এর মধ্যে জাকার্তা অন্যতম। ধোঁয়াশাকে নগরের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নগরে যানজটের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৫০ কোটি ডলার।
আদালত পরিবহন খাত থেকে সৃষ্ট দূষণ ও জাকার্তার চারপাশে থাকা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তৈরি দূষণরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ উন্নয়ন করার পাশাপাশি সব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশের নির্দেশ দেন। তবে বাদীপক্ষ কোনো ধরনের আর্থিক ক্ষতিপূরণ চায়নি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আয়ু ইজা তিয়ারা বলেন, বিবাদীপক্ষকে এ দায় মেনে নিতে হবে। এবং আদালতের আদেশ কার্যকর করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে ৪২ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। এর মধ্যে দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এ মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। ইন্দোনেশিয়া এসব দেশের একটি।
দেশটির পরিবেশবাদীদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির বায়ুর মান কিছুটা উন্নত হয়েছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ ছাড়া তাঁরা এই ধোঁয়াশার কারণে করোনা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন। এর কারণে করোনা রোগীদের অ্যাজমা ও শ্বাসযন্ত্রের নানা ধরনের জটিলতা হতে পারে বলে মনে করছেন।
ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত উত্তোলনের কারণে পৃথিবীর দ্রুত ডুবে যাওয়া শহরগুলোর মধ্যে একটি জাকার্তা। জাকার্তার ওপর চাপ কমাতে ২০১৯ সালে দেশটির সরকার প্রশাসনিক রাজধানী বোর্নিও দ্বীপে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল।