কাতারে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত আইনসভার (শুরা কাউন্সিল) প্রথম নির্বাচনে জিততে পারলেন না কোনো নারী প্রার্থীই। নির্বাচনে ২৬ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আমিরশাসিত উপসাগরীয় দেশটিতে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে কোনো নারী প্রার্থীকে ভোটাররা সমর্থন না করায় বেশ হতাশই তাঁরা। এএফপি ও রয়টার্সের খবর।
আইনসভার ৪৫টি আসনের মধ্যে ৩০টিতে এ ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। বাকি আসনগুলোতে নিয়োগ দেবেন কাতারের আমির। দেশটিতে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ। এ অবস্থায় ছোট তবে ধনী এই রাষ্ট্রে সীমিত পর্যায়ে আইনকানুন ও নীতিমালা অনুমোদনের সুযোগ পাবে এই কাউন্সিল।
কাতারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
আইনসভার মনোনীত ও নির্বাচিত সদস্যদের অধিকার ও দায়িত্ব একই থাকবে। তাঁরা সরকারের সাধারণ নীতি ও বাজেট অনুমোদন করবেন। এ ছাড়া নির্বাহী কর্তৃপক্ষের ওপর তাঁদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
আয়েশা হামাম (৫৯) দোহার মারখিয়া এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানের নার্সিং ব্যবস্থাপক। তিনি কাতারি নারীদের কণ্ঠ সোচ্চার করা ও ভবিষ্যতে শক্তিশালী নারী প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আইনসভার ৪৫টি আসনের মধ্যে ৩০টিতে এ ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ২৬ জন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নারী প্রার্থীদের একজন জাসিম। তিনি বলেন, কিছু পুরুষ মনে করেছিলেন, নির্বাচনে নারীরা দাঁড়াতে পারবেন না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন।
নিজের প্রশাসনিক দক্ষতার কথা তুলে ধরে হেরে যাওয়া এই নারী প্রার্থী বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি স্বাস্থ্যসেবা, তরুণদের কর্মসংস্থান ও অবসরের ওপর মনোযোগ দিয়েছেন। ভোটে হারলেও তিনি নিজেকে একজন শক্ত–সমর্থ ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবেই দেখেন। বলেন, ‘আমি নিজেকে একজন পুরুষের মতোই উপযুক্ত বলে মনে করি।
আপনি আমাকে দুর্বল মনে করতে পারেন, তা আপনার ব্যাপার। কিন্তু আমি দুর্বল নই।’
এদিকে সব নারী প্রার্থীর হেরে যাওয়া প্রসঙ্গে আল-জসিম নামের (৬৫) একজন পুরুষ প্রার্থী বলেন, নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণকে তিনি সমর্থন করেন। কিন্তু তিনি মনে করেন, নারীদের প্রাথমিক কাজ পরিবার সামলানো। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সব নারী প্রার্থী হেরে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক নারী ভোটার। শাম্মা নামের এক ভোটার বলেন, ‘আমি খুশি না। কেননা, সব পুরুষ প্রার্থী জিতেছেন। সত্য বলতে, আমি বিস্মিত। এই ভোট সুষ্ঠু হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর আশা, নারী-পুরুষের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে এই ভারসাম্যহীনতা দূর করতে আমির তাঁর মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে নারীদের রাখবেন।
আমির কখন আইনসভার মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন, সেই বিষয় এখনো জানা যায়নি। এএফপিকে শাম্মা বলেন, ‘নারীদের জন্য পাঁচটি আসনই যথেষ্ট হবে। কেননা, আমি মনে করি, একজন নারীই পৃথিবী বদলে দিতে পারেন।’
নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের অংশগ্রহণকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের উপসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক এলহাম ফাখরো। ভোট গ্রহণের আগে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ। তবে আমি মনে করি, তাঁদের ভূমিকার বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশাকে সীমিত করতে হবে। কেননা, মাত্র ২৮ জন নারী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে বিস্ময়ের কিছু নেই।’
ওদিকে হেরে যাওয়া নারী প্রার্থীদের সান্ত্বনা দিয়ে কাতারের জনপ্রিয় লেখক এবতেশাম আল-সাদ টুইটারে লেখেন, ‘আপনারা লড়াইয়ে হেরেছেন কিন্তু অংশগ্রহণের লড়াইয়ে জিতেছেন।’