ড্রোন হামলায় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

২৯ আগস্ট একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: এএফপি

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের শেষ পর্যায়ে গত ২৯ আগস্ট কাবুলে ভুলবশত মার্কিন ড্রোন হামলায় ৭ শিশুসহ ১০ জন নিহত হন। এই ভুলের কারণে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

আর্থিক ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ওই পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরও করতে চায় দেশটি। গত শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন এক বিবৃতিতে এই প্রস্তাব দেয়।

বিবিসি জানায়, ২৯ আগস্টের ওই হামলায় একজন সহায়তা কর্মীসহ তাঁর পরিবারের ১০ সদস্য মারা যান। এর মধ্যে সাতজনই শিশু। পেন্টাগনের বিবৃতিতে আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথা বলা হলেও তার পরিমাণ জানানো হয়নি।

আফগানিস্তান থেকে গত ৩১ আগস্ট সেনা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর দুই সপ্তাহ আগে গত ১৫ আগস্ট কাবুল নিয়ন্ত্রণে নেয় তালেবান। তারপর থেকেই আফগানিস্তান ছাড়তে দেশটির অনেক নাগরিক কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জড়ো হতে থাকেন। তাঁদের উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ যখন ফ্লাইট পরিচালনায় ব্যস্ত, তখন ওই বিমানবন্দর এলাকায় ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ১৭০ বেসামরিক নাগরিক ও ১৩ মার্কিন সেনা নিহত হন। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের আফগানিস্তান শাখা আইএস-কে (ইসলামিক স্টেট-খোরাসান) ওই হামলার দায় স্বীকার করে। ওই হামলার কয়েক দিন পর ড্রোন হামলাটি চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এটিই ছিল আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরের যুদ্ধের সর্বশেষ অভিযান।

ওই হামলা চালানো হয়েছিল আইএস সন্দেহে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা ছিল, কাবুল বিমানবন্দরে আবার হামলা হতে পারে। এ কারণে ২৯ আগস্ট সন্দেহভাজন একটি গাড়িকে তারা আট ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণকারী ড্রোনে ধারণকৃত ভিডিওতে ওই গাড়ির আরোহীদের গাড়িতে সন্দেহজনক কিছু তুলতে দেখা যায়। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা ছিল, সন্দেহজনক বস্তুগুলো বিস্ফোরক। পরে অবশ্য তদন্তে জানা যায়, গোয়েন্দারা যে বস্তুগুলোকে বিস্ফোরকভর্তি কনটেইনার মনে করেছিলেন, সেগুলো ছিল আসলে পানির বোতল। আর ড্রেন হামলায় নিহত ব্যক্তিরা তাঁদেরই সহায়তাকর্মী জামাইরি আহমাদি ও তাঁর পরিবারের ৯ সদস্য। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আহমাদ নাসের নামেও একজন ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য তাঁদের কাছে ভিসাও ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা ভেবেছিলেন, আহমাদির ব্যক্তিগত গাড়িটি আইএস-কের কোনো আত্মঘাতী হামলাকারীর। জেনারেল ম্যাকেঞ্জি ওই ড্রোন হামলাকে ‘মর্মান্তিক ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ওই হামলার ঘটনায় তালেবানের থেকে কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেওয়া হয়নি।

শুক্রবার পেন্টাগন এক বিবৃতিতে বলেছে, গত বৃহস্পতিবার নীতি প্রতিরক্ষাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি কলিন কাহল এবং আফগানিস্তানে সক্রিয় একটি সহায়ক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি স্টিভেন কোনের মধ্যে বৈঠকে ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
কলিন কাহল বলেন, আহমাদিসহ ড্রোন হামলায় যাঁরা নিহত হন, তাঁরা নির্দোষ ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আইএস-কের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। মার্কিন বাহিনীর জন্য তাঁরা কোনো হুমকি ছিলেন না।

ওই হামলার ঘটনায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ক্ষমা চেয়েছেন। তবে নিহত আহমাদির ২২ বছর বয়সী ভাতিজা ফারশাদ হায়দারি বলেন, এটা যথেষ্ট নয়। তাদের এখানে এসে মুখোমুখি ক্ষমা চাইতে হবে।