তালেবানের ক্ষমতা দখল খুব কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে: শীর্ষ আফগান টিভির পরিচালক

অস্ত্র হাতে তালেবান সদস্যরা
ফাইল ছবি: এএফপি

আফগানিস্তানে তালেবানের শাসনে সংকটে পড়েছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো। কাবুল পতনের পর বন্ধ হয়ে গেছে দেশটির অনেক সংবাদমাধ্যম। দেশ ছেড়েছেন বহু সংবাদকর্মী। তালেবান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও তাদের এই প্রতিশ্রুতির ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না তাঁরা।

সাংবাদিকদের ওপর তালেবানের নিপীড়নের ইতিহাস বেশ নির্মম। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশটি শাসনের সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দেয় তালেবান। মানুষের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার মতো কোনো গণমাধ্যম তখন ছিল না। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন অভিযানের মুখে ক্ষমতা হারানোর পর গত ২০ বছরে বহু সাংবাদিককে হত্যা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে যাওয়ার পর এখনো চালু রয়েছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল টোলো নিউজ। টেলিভিশনটির পরিচালক লতফুল্লাহ নাজাফিজাদা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘তালেবানের ক্ষমতা দখল আমাদের খুব কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে। আমরা কাজ চালিয়ে যাব কি যাব না, তা নিয়ে খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে।’

সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা সংবাদ প্রচারকারী হিসেবে তারা এক ঘণ্টাও বিশ্রাম নেওয়া বা চিন্তা করার সময় পান না বলে জানান তিনি।

টোলো নিউজের পরিচালক আরও বলেন, সংবাদ প্রচারের দায়বদ্ধতার দিক দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলটি এখনো চালু রাখা হয়েছে। একবার চ্যানেলটি বন্ধ করা হলে তা আবার চালু করতে তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসা প্রায় অসম্ভব হবে।

তালেবানের অধীনে সাংবাদিকেরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন টোলো নিউজের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মোবি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাদ মোহসেনি। ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট—সিপিজে’ নামের একটি সংগঠনকে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক ভয়ের মধ্যে রয়েছি। সত্যি কথা বলতে কি, আমরা অনেক শঙ্কিত।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে তালেবানের অধীনে খড়্গ নেমে এসেছে নারী সাংবাদিকদের ওপরও। গত বছর দেশটিতে ৭০০ জন নারী সাংবাদিক কাজ করতেন বলে জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। তবে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর এই সংখ্যা নেমে এসেছে ৭৬ জনে। তাঁরা সবাই কাজ করছেন রাজধানী কাবুলের গণমাধ্যমগুলোতে। আর কাবুলের বাইরে বেশির ভাগ নারী সাংবাদিককে কাজ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আরএসএফ।

যেসব নারী সাংবাদিক দেশত্যাগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বেহেশতা আরঘান্দ। টোলো নিউজে তালেবানের এক নেতার সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর আফগানিস্তান ছাড়েন তিনি। গত বুধবার কাতারে তিনি কূটনীতিকদের বলেন, সাংবাদিকতা করার কারণে এখন তাঁর পরিবারের সদস্যদের তালেবানের হুমকির মুখে পড়তে হবে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের তথ্য অনুযায়ী, কাবুলের পতনের পর থেকে আফগানিস্তানে ১০০টির মতো সংবাদমাধ্যম বন্ধ হয়েছে। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আর্থিক সংকট সংবাদমাধ্যম বন্ধ হওয়ার পেছনে একটি কারণ বলে দেখা গেছে। এ ছাড়া তালেবানের ভয়ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি ও সংঘাত তো রয়েছেই।

এদিকে তালেবান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও তাতে ভরসা রাখতে পারছে না গণমাধ্যমগুলো। তালেবানের রোষ এড়াতে অনেকেই নিজেদের কার্যক্রম সীমিত করে এনেছে। বিদেশ থেকে কাজ চালানোর পরিকল্পনাও চলছে। টোলো নিউজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে টেলিভিশন চ্যানেলটি দেশের বাইরে থেকে পরিচালনার কথা ভাবছে স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মোবি গ্রুপ। গ্রুপের সিইও মোহসেনি বলেন, সাংবাদিকদের দেশত্যাগের বিষয়টি আশঙ্কার। এর ফলে গণমাধ্যমগুলো মেধা হারাচ্ছে। তাঁদের এই শূন্যতা পূরণ করতে আরও দুই দশক লেগে যাবে।