বিশ্বে মোট উৎপাদিত করোনার টিকার ৭৫ শতাংশ গেছে ১০টি দেশের হাতে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে করোনার টিকার আওতায় আনতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের ধনী দেশগুলোয় এখনো বিপুলসংখ্যক টিকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। যার মধ্যে অনেক টিকা শিগগির ব্যবহারের অনুপযোগী হতে পারে। বিবিসি অনলাইনের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে, বিশ্বে মোট উৎপাদিত করোনার টিকার ৭৫ শতাংশ গেছে ১০টি দেশের হাতে। ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের হিসাবে, বিশ্বে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ করোনার টিকা উৎপাদিত হয়েছে, তার মাত্র অর্ধেক গেছে বিশ্বের ১৫ শতাংশ মানুষের কাছে। বিশ্বের ধনী দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোর তুলনায় ১০০ গুণ বেশি টিকা প্রয়োগ করছে।

গত জুন মাসে ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭-এর অন্তর্ভুক্ত কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র আগামী বছরের মধ্যে দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডোজ করোনার টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

বিশ্বের ধনী দেশগুলো বিপুল পরিমাণে করোনার টিকা মজুত করছে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

জি-৭-এর সদস্য যুক্তরাজ্য ১০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার অঙ্গীকার করে। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত ৯০ লাখের কম ডোজ টিকা বিনা মূল্যে দান করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ৫০ কোটির বেশি ডোজ টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ১০ কোটি ৪০ লাখ ডোজ টিকা বিতরণ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন চলতি বছরের শেষ নাগাদ ২৫ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু তারা মাত্র ৮ শতাংশ টিকা বিতরণ করতে পেরেছে।

বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর টিকা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গঠিত ‘কোভ্যাক্স’। এই উদ্যোগের আওতায় প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে টিকা কিনে তা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর কাছে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করা হয়। আর দরিদ্র দেশগুলোকে তা দেওয়া হয় বিনা মূল্যে।

বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর টিকা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গঠিত ‘কোভ্যাক্স’
ফাইল ছবি: রয়টার্স

কিন্তু পর্যাপ্ত টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ‘কোভ্যাক্স’ বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আসছে। ২০২১ সাল নাগাদ বিশ্বে ২০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার পরিকল্পনা নিয়েছিল ‘কোভ্যাক্স’। এই টিকার অধিকাংশ ডোজ ভারত থেকে পাওয়ার আশা করা হয়েছিল। কিন্তু গত মে মাসে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ফলে ‘কোভ্যাক্স’ উদ্যোগে টিকার সরবরাহে বড় সংকট দেখা দেয়।

তারপর টিকা পাওয়ার জন্য ধনী দেশগুলোর দানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে কোভ্যাক্স। কোভ্যাক্সে টিকার সরবরাহ এখন বেশ ধীর। কোভ্যাক্স থেকে টিকা পাওয়া কিছু দেশ তাদের মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশকেও টিকা দিতে পারেনি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটির তথ্য অনুযায়ী, সমস্যা বৈশ্বিক সরবরাহের নয়। বিশ্বের ধনী দেশগুলো বিপুল পরিমাণে করোনার টিকা মজুত করছে। বর্তমানে উৎপাদনকারীরা মাসে ১৫০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এর সংখ্যা ১ হাজার ১০০ কোটি ডোজে দাঁড়াবে।

বর্তমানে উৎপাদনকারীরা মাসে ১৫০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করছে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

এয়ারফিনিটির প্রধান গবেষক ম্যাট লিনলে বলেন, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণে টিকা উৎপাদন করছে। গত তিন থেকে চার মাসে তারা ব্যাপকভাবে টিকার উৎপাদন বাড়িয়েছে।

এয়ারফিনিটির বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর হাতে ১২০ কোটি ডোজ করোনার টিকা উদ্বৃত্ত থাকতে পারে, যা তাদের দরকার হবে না।

এয়ারফিনিটির প্রধান গবেষক ম্যাট লিনলে বলেন, এই উদ্বৃত্ত টিকার এক–পঞ্চমাংশ বা ২৪ কোটি ১০ লাখ ডোজ যদি খুব শিগগির বিনা মূল্যে বিতরণ (দান) করা না হয়, তাহলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর এসব টিকা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার অন্তত দুই মাস আগে না পেলে দরিদ্র দেশগুলো তা গ্রহণ নাও করতে পারে।

ম্যাট লিনলে আরও বলেন, তিনি মনে করেন না যে লোভের কারণে ধনী দেশগুলো এত টিকা কিনে রেখেছে। তাঁর কাছে মনে হয়, আসলে কোন টিকা কাজ করবে, তা এই দেশগুলো জানত না। এ কারণেই তারা বিভিন্ন ধরনের টিকা কিনে রেখেছে।