নীরবে মৃত্যুর প্রহর গুনছে তারা

বারপাক ও গুর্খা। নেপালের জনপদ, প্রায় সপ্তাহকাল আগে দেশটিতে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। ভূমিকম্পের পর সেখানকার গ্রামগুলো সব দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রামবাসীরা অসহায়ভাবে নীরবে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশটিতে গত শনিবার রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ তীব্রতার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ অনেক এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। অবকাঠামো ও যোগাযোগব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও ত্রাণ ও উদ্ধার-কার্যক্রম চালানোর মতোও পরিস্থিতি নেই।
এমনই এলাকা বারপাক ও গুর্খা। সেখানকার গ্রামগুলোতে উদ্ধার তৎপরতাই শুরু করা যায়নি। আছে কেবল ত্রাণ কার্যক্রম। কিন্তু তাও যে খুব ভালোভাবে চলছে, তা নয়। কারণ ওই এলাকায় হেলিকপ্টার পর্যন্ত অবতরণের অবস্থা নেই।
আজ বৃহস্পতিবার টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার ওই এলাকার গ্রামগুলোর আকাশে উড়ে উড়ে খাবারসহ অন্য ত্রাণ সামগ্রী ফেলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
অভিযানে অংশ নেওয়া সামরিক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বারপাকের একটি গ্রামের শতাধিক বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। একাধিকবার চেষ্টা করেও সেখানে হেলিকপ্টার নামানো সম্ভব হয়নি।
ভারতীয় বিমান বাহিনীকে সহায়তাকারী নেপালি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন নরেশ খড়কা বলেন, ‘ওই গ্রামে কতজন মারা গেছে, তা আমরা জানি না। জানি না ঠিক কতজন গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। এখনো হয়তো কেউ কেউ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে, হয়তো বেঁচে আছে। কিন্তু আমরা তাদের রক্ষা করতে পারছি না। তাঁরা সাহায্যের অপেক্ষায় থেকে থেকে মারা যাবে। একজন উদ্ধারকর্মীর জন্য এর চেয়ে কষ্টকর আর কিছু নেই।’
ভূমিকম্পে নেপালে রীতিমতো মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। নিহত মানুষের সংখ্যা এরই মধ্যে পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহত হয়েছে হাজারো মানুষ।
জাতিসংঘ বলছে, ভূমিকম্পে নেপালের অন্তত ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষের তাৎক্ষণিক খাদ্য সহায়তা দরকার।
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ভয়াবহ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে নেপাল সরকার অনেকটাই অসহায়। তারা চেয়ে আছে অন্যের দিকে। কিন্তু ততক্ষণে হয়তো বাঁচার শেষ আশা নিয়ে টিকে থাকা মানুষগুলোর নিঃশ্বাস থেমে যাবে।