পরিবর্তনের প্রত্যাশায় ভোট দিলেন ইরাকিরা
ইরাকের জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে স্থানীয় সময় আজ রোববার। যদিও দেশটির অনেক নাগরিকই নির্বাচন বর্জনের কথা বলেছিলেন আগে। ইরাকিদের অনেকেই বলছেন, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনীর আগ্রাসনের হাত ধরে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এসেছে, তার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। তবে ব্যতিক্রমও আছে। অনেকে আবার এই নির্বাচনের মধ্যে ইরাকে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশায় খুব আগ্রহ নিয়েই ভোট দিয়েছেন। খবর রয়টার্সের
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সুবিধা দিতে করা নতুন একটি আইনের আওতায় নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগেই এবারের সাধারণ নির্বাচনটি হচ্ছে। বছর দুয়েক আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর এ আইন চালু করে ইরাক। ২০১৯ সালের ওই আন্দোলন ইরাকের সশস্ত্র অভিজাত ইসলামিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে তারাই সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে।
ইরাকের বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, এটি ইরাক বা মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন আনবে না।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন মুরতাদার নাসির নামে ২৭ বছরের এক ইরাকি যুবক। আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চোখের সামনেই বন্ধুদের মারা যেতে দেখেছেন তিনি। এএফপিকে বলেন, ‘আমি ভোট দিতে যাচ্ছি না। আমার পরিবারের কেউ ভোট দেবে না। নির্বাচনে অংশ নেওয়াদের সবাই এক। তাদের সবার লক্ষ্য আমরা সাধারণ নাগরিকেরা।’
তবে নাসিরের মতো সবাই যে ভোট বর্জন করেছেন, তা-ও নয়। অনেকেই খুব আগ্রহ নিয়েই ভোট দিয়েছেন। তাঁরা বেশির ভাগই ইরাকের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আশাবাদী। ২০০৩ সালের পর দেশটিতে হতে যাওয়া পঞ্চম সংসদীয় ভোট নিয়ে তাঁদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহও দেখা গেছে।
ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কিরকুকের বাসিন্দা আবু আবদুল্লাহ। ভোটকেন্দ্র খোলার ঘণ্টাখানেক আগেই তিনি কেন্দ্রে চলে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক ভোরে চলে এসেছি। ভোটের দিন প্রথম ভোট দিয়ে এমন একটি ঐতিহাসিক ঘটনার অংশ হতে চাই, যেটি পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস করতে চাই।’
ইরাকের এবারের নির্বাচনে পার্লামেন্টের ৩২৯টি আসনের জন্য অন্তত ১৬৭টি দল ও ৩ হাজার ২০০-এর বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বলে জানায় ইরাকের নির্বাচন কমিশন। দেশটিতে নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা ঠিক করতে বিভিন্ন দলের মধ্যে মাসের পর মাস দর-কষাকষি হয়।
পশ্চিমাপন্থী হিসেবে পরিচিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-কাদিমি গতকাল ভোট দেওয়ার সময় বলেন, ‘আমি ভোট দিয়েছি। ইরাকি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, এখনো সময় আছে। আসুন, ইরাকের জন্য ভোট দিন, আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভোট দিন।’
২০১৯ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনের চাপে কাদিমির আগের প্রশাসনকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। তখন বিক্ষোভকারীরা অভিজাত শাসকগোষ্ঠীর অপসারণের দাবি করেছিল। বেশির ভাগ ইরাকিই এই অভিজাতদের ‘দুর্নীতিবাজ’ হিসেবে দেখে, দেশের ‘দুর্দশার’ জন্য তাদেরই দায়ী মনে করে ইরাকিরা।